একরাতে সব নেতাকে মুক্তির প্রস্তাবেও রাজি হয়নি বিএনপি: কৃষিমন্ত্রীর স্বীকারোক্তি
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কাগজ-কলমে প্রতিষ্ঠিত হলেও তার উপর বরাবরই সরকারের হস্তক্ষেপ হচ্ছে । এবং সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে সরকার বিরোধীদের সাজা দেওয়া হচ্ছে । আব্দুর রাজ্জাকের কথায় তাই ফুটে উঠেছে । এবং বিচার বিভাগ হয়ে উঠেছে পরাধীন এটাও খুব সহজে বোধগম্য ।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছে। রাতারাতি সব নেতাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাবেও বিএনপি রাজি হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বারবার বলেছে বিএনপি নির্বাচন করলে নির্বাচন পেছানো হবে। শুধু স্থগিত নয়, বলা হচ্ছে, জেল থেকে সবাইকে মুক্তি দেওয়া হবে। আজ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপির ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার না করলে আজ বাংলাদেশে হরতালের দিনে গাড়ি চলত না। এছাড়া আমাদের অন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না। বিকল্পও ছিল না। আমরা যা করেছি ভেবেচিন্তে করেছি। তাদের জেলে না রাখলে দেশ অচল হয়ে যেত।
বিএনপিকে ভোটে আনার বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, কৃষিমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তি নির্বিচারে গ্রেফতার-নির্যাতন, নির্বিচারে কারাদণ্ড ও জামিনের বিচার বিভাগের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুর রব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক তার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার না করলে আজ বাংলাদেশে হরতালের দিনে গাড়ি চলত না। এছাড়া আমাদের আর আমাদের অন্য কোনো গত্যন্তর ছিল না। বিকল্পও ছিল না। আমরা যা করেছি ভেবেচিন্তে করেছি। তাদের জেলে না দিলে দেশ অচল হয়ে যেত।” কৃষিমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তি প্রমাণ করে সরকার প্রহসনমূলক একতরফা ডামি নির্বাচনের নামে পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার নীলনকশা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। বিরোধী দলকে গ্রেফতার করে কারাগারে রেখে। নাগরিকদের নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্বিচারে আটক ও নির্যাতন, নির্বিচারে কারাবরণ ও জামিন বিচার বিভাগের অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিবৃতিতে আ স ম আব্দুর রব অবিলম্বে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বাতিল, সব রাজবন্দির মুক্তি, বিদ্যমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আহ্বান জানান।
এটা কি আমার দেশ? একটি শিশু তার বাবার ভালবাসা পায় না, অসুস্থ বাবা, মায়ের ওষুধ ও যত্ন পায় না। বিনা বিচারে তাকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করা। এ কেমন শাসন মাননীয় মন্ত্রী? তারপরেও সত্য বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ.
উল্লেখ্য,
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সাধারণ সভা থেকে এ পর্যন্ত ৮৩৭টি মামলায় ২০ হাজার ৩২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার আইনজীবীসহ সব রাজনৈতিক নেতার মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে সংবাদ সম্মেলন করে এই ফোরাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও ভাংচুর করা হচ্ছে। এমনকি গভীর রাতেও বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি করা হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে কায়সার কামাল বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সরকার ও সরকারি দলের পরিকল্পিত সহিংসতা ও নাশকতার নজিরবিহীন দুঃখজনক ঘটনার পর অনুপস্থিত হয়রানিমূলক ৮৩৭টির বেশি মামলায় ২০ হাজার ৩২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সাধারণ সভায় ৭৩ হাজার ১২৩ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৮ হাজার ২৪৯ জনের বেশি নেতা-কর্মী আহত এবং ৩৫ মামলায় ৬৩৬ নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। ৩ মাসে মেয়াদ।২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫ লাখের বেশি নেতা-কর্মী-সমর্থককে আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সরকার বিরোধী দল ও জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে না পেরে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। তারা হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক ‘মিথ্যা গায়েবি মামলা’কে বিরোধী দলকে দমনের মূল ভিত্তি হিসেবে পরিণত করেছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছে না দেশের আইনজীবী সমাজও । আদালত চত্বর ও চেম্বার থেকে নজিরবিহীনভাবে আইনজীবীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।