২৭টি কোম্পানির ৪৪টি ব্র্যান্ডের হার্টের রিংয়ের দাম কমেছে
প্রতিটি ভাল কাজ আসলে আনন্দের এবং প্রশংসনীয় । হৃদরোগের চিকিৎসায় রিং একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাধেয় । সে স্থানে এই রিংয়ের দাম কমানো এবং নির্দিষ্ট রিং এর দাম প্রদর্শন করা এর হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য এবং রোগীদের ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত সুখের খবর ।
হৃদরোগ রোগীদের চিকিৎসার অন্যতম অনুষঙ্গ স্টেন্ট বা রিংয়ের দাম কমেছে। মঙ্গলবার দেশে ব্যবহৃত ২৭টি কোম্পানির ৪৪টি ব্র্যান্ডের রিংয়ের দাম কমিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই দাম কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওষুধ ও প্রসাধনী আইন-২০২৩-এর ৩০ (১) ধারা অনুযায়ী হার্টের রিংয়ের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। কার্ডিয়াক চিকিৎসা প্রদানকারী সমস্ত হাসপাতালগুলিকে এই নির্দেশিকাগুলি বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সব হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে হার্টের রিংয়ের তালিকা প্রদর্শন করতে হবে। হার্টের রিংয়ের নাম, খুচরা মূল্য এবং প্রস্তুতকারকের নাম উল্লেখ করে একটি নগদ মেমো দিতে হবে। রোগীকে ব্যবহৃত রিংগুলির প্যাকেট সরবরাহ করতে হবে। রিংয়ের প্যাকেটে উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, উৎপাদনকারী দেশের নাম এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য লিখতে হবে। যাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সে অনুযায়ী নির্দেশনা দিতে পারেন। সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
রিংয়ের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা এবং সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার টাকা।
বহুল ব্যবহৃত রিংগুলোর দাম কমেছে- পোল্যান্ডের অ্যালেক্স প্লাসের দাম ৬২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমে ৫৩ হাজার টাকা হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের জিন্স প্রাইম ৭২,৫০০ টাকা থেকে কমে ৬৬,৬০০ টাকা হয়েছে। একই কোম্পানির জিন্স এক্সপেনশনের দাম ১ লাখ ৮ হাজার ৬২৮ টাকা থেকে কমে ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং জিন্স আলপাইন ১ লাখ ৪৯ হাজার থেকে কমে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়েছে।
জার্মানির জিলমাসের দাম ৬০ হাজার থেকে কমিয়ে ৫৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের মেডট্রনিকের অনিক্সের রেজোলিউট দাম ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা হয়েছে। বোস্টন সায়েন্টিফিকের প্রমাস প্রিমিয়ারের দাম ৭৫ হাজার থেকে কমিয়ে ৭৩ হাজার টাকা, প্রমাস এলিটের দাম ১ লাখ ১২ হাজার থেকে কমিয়ে ৯৩ হাজার টাকা এবং একই কোম্পানির সিনার্জি ব্র্যান্ডের রিংয়ের দাম 1 থেকে কমিয়ে করা হয়েছে। লাখ ৫২ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা।
সুইজারল্যান্ডের বায়োমেট্রিক্স নিওফ্লিক্সের দাম ৬২,৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫৮,০০০ টাকা করা হয়েছে। একই কোম্পানির বায়োমেট্রিক্স আলফা ৮৬ হাজার টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। নেদারল্যান্ডসে অ্যালবামিনাস ডিইএস প্লাসের দাম ৭২ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫৪ হাজার টাকা করা হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের বায়োফ্রিডম ৬৫ হাজার, প্রি-কিনেটিক ১৫ হাজার টাকা, আইট্রিক্স ৩৬ হাজার টাকা, ওসিরা মিশন ৬৫ হাজার টাকা, আয়ারল্যান্ডের ডিইএসওয়াইএনসি ৫৫ হাজার, সুপরাফ্ল্যাক্স ৫৩ হাজার, জাপানের আল্টিম্যাস্টার ৬০ হাজার, স্পেনের এনজিওলাইট ৫৩ হাজার, আইভাসকুলার এনজিওলাইট ৫৩ হাজার টাকা, আইএইটি ডেস্টিনি ৫৩ হাজার টাকা, নেদারল্যান্ডের কমবো প্লাস ৫৩ হাজার টাকা, ভারতের বায়োমিমে ৪০ হাজার টাকা, এভারমাইন-৫০ ৪০ হাজার টাকা, মেটাফর ৩৫ হাজার টাকা, জার্মানির সিসি ফ্লাক্সে ১৫ হাজার টাকা, ইকা লিমুস ৫৩ হাজার টাকা, ইউকোন চয়েস পিসি ৫৩ হাজার টাকা, অর্থস পিকো ১৫ হাজার টাকা, আবিরস ৫৩ হাজার টাকা, করোফ্লিক্স আইএসআইআর ৫৩ হাজার টাকা, ম্যাগমা ৩৭ হাজার টাকা এবং সুনা স্ট্যান্ট ১৪ হাজার টাকা, যুক্তরাষ্ট্রের কোবাল্ট ক্রোমিয়াম ৫৫ হাজার টাকা, ডিরেক্ট স্ট্যান্ট সিরো ৫৫ হাজার টাকা, ডিরেক্ট স্ট্যান্ট ২০ হাজার টাকা, দক্ষিণ কোরিয়ার জিনোস ডিইএস ৪৫ হাজার টাকা, ইতালির অ্যাভেন্টগার্ড ১৫ হাজার টাকা, সিআরই-৮ ৫৩ হাজার টাকা, পোল্যান্ডের অ্যালেক্স ৫৩ হাজার টাকা, ফ্রান্সের এ্যামাজোনিয়া ৫৩ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. মহসিন আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, দুই দফা দাম কমানোর কারণে মানসম্পন্ন রিংয়ের দাম সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। এ জন্য এ প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আফজালুর রহমান ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জুলফিকার আলী লেলিনরনের অবদান অনস্বীকার্য। রিংয়ের দাম কমাতে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। এখন থেকে রোগীরা সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন রিং পাবেন।
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র, উপ-পরিচালক ও আইন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সরকার হার্টের রিংয়ের (স্টেন্ট) দাম কমিয়েছে। নির্ধারিত মূল্যের বেশি কেউ নিতে পারবে না। মেডিসিনস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট ২০২৩ অনুযায়ী, কেউ বেশি দামে বিক্রি করলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।