নৌকা ছাড়া কেউ এজেন্ট দিতে পারবেনাঃ আ: লীগ নেতার হুমকি
বরগুনায় চিরুনি অভিযান চালানো হবে। অন্য দলের কেউ কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারবে না, ভোটও দিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমতলী পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান। আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমানের ৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। গত শনিবার সকাল ১০টায় তালতলী গোডাউন সংলগ্ন কল হাউজে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজবিউল কবির জোমাদ্দার। আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান অতিথি হিসেবে না থাকলেও এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। বক্তব্যের একপর্যায়ে মতিয়ার রহমান বলেন, আমতলী-তালতলী আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। চিরুনি অভিযান চালাবো, যে চিরুনি অভিযানের মধ্যদিয়ে ওরা কোনো এজেন্ট দিতে পারবে না, ভোট তো দূরের কথা।
আমি ১৮ তারিখের পরে খেলা শুরু করব। ব্যক্তির নাম ভুলে গিয়ে তারা বলবে শেখ হাসিনা, নৌকা, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু।
মতিয়ার রহমান তার বক্তব্যে আরো বলেন, উপজেলা কমিটি, পৌর কমিটি, ইউনিয়ন কমিটি, এমনকি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদক; যদি কেউ নৌকার বিপক্ষে যেতে পারে তাহলে আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবো। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার টুকু বলেন, মতিয়ার রহমানের এমন মন্তব্যের কারণে নির্বাচন কমিশন কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভোটারদের কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে। বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারোয়ার ফোরকান বলেছেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে যারা নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের জনপ্রিয়তাও খতিয়ে দেখা হবে এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে। কিন্তু দলীয় সভায় মতিয়ার রহমান যে বক্তব্য দিয়েছেন তা স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাধারণ ভোটারদের জন্য এক ধরনের হুমকি। তার বক্তব্য কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সাথে সাংঘর্ষিক এবং পেশী শক্তি প্রদর্শনের সমান।
এ বিষয়ে বরগুনা আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান বলেন, আমি বলেছি এজেন্ট দেওয়া যাবে না। মানে আমাদের দলের কেউ স্বতন্ত্র এজেন্ট হতে পারে না। চিরুনি অভিযান প্রসঙ্গে মতিয়ার রহমান বলেন, আমি বলেছি আমাদের দলের কেউ স্বতন্ত্র হয়ে কাজ করছে কি না তা জানতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের এজেন্ট খুঁজে পাবেন না এমন মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের সমর্থন নেই, তারা এজেন্ট পাবেন না। বরগুনার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাইরাল ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। আইন অনুযায়ী তদন্ত করা হবে। বরগুনা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মোট তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার টুকু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খলিলুর রহমান ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার ফোরকান। এর মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে খলিলুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও আপিল করেন তিনি।
উল্লেখ্য,
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে একতরফা নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ বলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
শিক্ষকরা বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলো ব্যতীত সব সক্রিয় রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণতান্ত্রিক বিশ্ব, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে বাংলাদেশে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে এদেশের মানুষ উপলব্ধি করেছে যে, এ সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
কম্বোডিয়ান-স্টাইলের প্রহসনের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে চাওয়ায় বিতর্কিত নির্বাচনটি দেশের সংকটকে দীর্ঘায়িত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আমরা আওয়ামী সরকারের এমন ভিত্তিহীন রাজনৈতিক কুত-কৌশলের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার তফসিল ঘোষণা এবং রাজনৈতিক সমঝোতার পথ পরিহার করে একতরফা নির্বাচন আয়োজনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে দেশে রাজনৈতিক সংকট তীব্র হবে এবং দেশে নৈরাজ্য বাড়বে।