আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদফতরের করা মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ তিন জন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) তৃতীয় শ্রম আদালতের জেলা ও দায়রা জজ শেখ মেরিনা সুলতানার এজলাসে এ বিষয়ে শুনানি হয়।
শুনানিতে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অপর তিন আসামি গ্রামীণ টেলিকমের এমডি ড. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূরজাহান বেগম ও মোঃ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বিচারকের সামনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে ড. ইউনূসের পক্ষে বলা হয়, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান এবং অপর তিন আসামিকে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে রাখা হচ্ছে। গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইনের ধারা ২৮ এর অধীনে তৈরি একটি ‘লাভের জন্য নয়’ কোম্পানি। যার লভ্যাংশ বিতরণযোগ্য নয়।
এই লভ্যাংশের অর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যয় করা হয়। এ কারণে এই কোম্পানির কোনো মালিকানা বা শেয়ারহোল্ডার নেই। বিবাদীদের কেউই শেয়ারহোল্ডার নন।
তাছাড়া আসামিরা সম্মানজনক পদে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সহায়তা করছেন। এ ছাড়া কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের মুনাফা প্রদান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আইনজীবী বলেন, যেহেতু গ্রামীণ টেলিকমের কোনো স্থায়ী কার্যক্রম নেই, সেহেতু এর মূল কাজ হচ্ছে চুক্তির মাধ্যমে পল্লীফোন কার্যক্রম এবং নকিয়া মোবাইল হ্যান্ডসেটের বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান।
পল্লীফোন প্রোগ্রামটি গ্রামীণফোনের সাথে একটি চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং প্রতি তিন বছর অন্তর নবায়ন করা হয়। পল্লীফোন গ্রামীণ টেলিকমের একটি প্রকল্প যা গ্রামীণফোনের নির্দেশে চুক্তির ভিত্তিতে গ্রামীণ টেলিকমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিনিময়ে, গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণফোন থেকে ১০ শতাংশ রাজস্বের অংশ পায় এবং চুক্তির মেয়াদ তিন বছর পর বাড়ানো হয়।
একইভাবে, ফিনল্যান্ডের নকিয়া মোবাইল কোম্পানির সাথে একটি চুক্তির মাধ্যমে, গ্রামীণ টেলিকম বাংলাদেশের সকল গ্রাহকদের নকিয়া হ্যান্ডসেটের বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করে। বিনিময়ে গ্রামীণ টেলিকম ডলারের ৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এই চুক্তির মেয়াদ তিন বছর। ফলে প্রতি তিন বছর অন্তর চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে।
আরও বলা হয়, বিষয়টি তাদের নজরে আনার পর থেকে গ্রামীণ টেলিকম কর্মীরা ২০ বছর চাকরিতে এবং অবসরে থাকার পরও কখনো মুনাফা দাবি করেননি । কিন্তু অতি সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ মহল যারা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সামাজিক ব্যবসার অগ্রগতি পছন্দ করে না তাদের প্ররোচণায় বিভ্রান্ত হয়ে মুনাফার সুবিধা আদায়ের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী ২০১৭ সালে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ সিভিল বিধানের অধীন ২১১ ধারায় তৃতীয় শ্রম আদালতে অনেকগুলো সিভিল বি.এল.এ (আই,আর) মামলা এবং সিবিএ কর্তৃক শিল্প বিরোধ মোকদ্দমা দায়ের করে।
কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অযৌক্তিক ও আইন বহির্ভূত দাবি দাওয়া থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরত না করে সরকারের কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ ইচ্ছাকৃতভাবে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে গ্রামীণ টেলিকম উইথ প্রফিট (ডব্লিউপিপিএফ) সম্পর্কে ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছড়ায়, টেলিকম উইথ প্রফিটের অবৈতনিক চেয়ারম্যান (ডব্লিউপিপিএফ)। ড.মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার পরিচালক বিবাদীর বিরুদ্ধে শ্রম আইনের তিনটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেন।
সব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন তিনি। তাই অভিযোগ অস্বীকার করে ক্ষতিপূরণসহ দায়ের করা মামলা খারিজ করতে আদালতে আবেদনও করেন বাদী।
উল্লেখ্য, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা বিচারাধীন রয়েছে তা হলো
মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বর্তমানে ১৬৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে এর মধ্যে ফৌজদারি আদালতে ১ টি, দুর্নীতি দমন কমিশনে ১টি এবং বাকি ১৬৬টি মামলা ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তবে শ্রমিকদের দাবিকৃত বকেয়া ইতিমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে, বর্তমানে ১০৬ টি মামলা নিষ্পত্তির পথে রয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।
ড. ইউনূস ও অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলার মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম সংক্রান্ত ৬৪টি মামলা রয়েছে এছাড়া গ্রামীণ কল্যাণে ৬৯টি, পল্লী যোগাযোগের জন্য ২৫টি এবং গ্রামীণ মৎস্য চাষের জন্য ৮টি।
জানা গেছে, শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ কল্যাণের কর্মচারীরা (বর্তমান ও সাবেক) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে এসব মামলা করেন। এসব ক্ষেত্রে শ্রমিকরা তাদের পাওনা পরিশোধের দাবি জানান। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলাটি এখনো তদন্তাধীন
ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত বছর শ্রমিকদের ৪৩৭ কোটি টাকা পরিশোধের পর ১৬৮টি মামলার মধ্যে ১০৬টি মামলা নিষ্পত্তির পথে।