কেন নির্বাচন নিয়ে এতো মাথাব্যথা? সন্দেহ হয় রে! বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে বসে থাকবো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
নির্বাচনে বিদেশিদের আগ্রহ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কারণেই আজ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি। তাহলে আমার প্রশ্ন আজ কেন এই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। হঠাৎ একটা দেশের নির্বাচন নিয়ে কেন এতো আগ্রহ? এর পেছনে কি- এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে তা দেখেই হচ্ছে? দেশটা যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন কেন নির্বাচন নিয়ে এতো মাথাব্যথা? সন্দেহ হয় রে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, আমাকে বেশি কথা বললে, সব বন্ধ করে বসে থাকবো। ভোট দিলে আবার করব। দেখা যাক দায়িত্ব নিতে রাজি কে! সব রেডি করে রেখেছি, এখন বসে বড় বড় কথা বলা।
শুক্রবার বিকেল ৪টায় গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশন এবং যুক্তরাজ্য সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, আমি পড়ে এসেছি, আমাকে পড়াতে হবে না। রক্ত দিয়ে এদেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে এনেছি। জনগণের জন্য সবইআমাদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এসেছে । তাহলে নির্বাচনের কথা বলছেন কেন? এটা নিয়ে সন্দেহ আছে। তারা জানে আমাদের মানুষ কতটা সচেতন। কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা চোখ ও কান দিয়ে বধির।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশ আমাদের দেশের নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তারা কোথায় ছিল যখন সামরিক স্বৈরশাসক ছিল, জনগণের ভোটের অধিকার ছিল না? আমরা ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছি।
নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি, স্বচ্ছ ভোটার তালিকা তৈরি করেছি, নারীদের ক্ষমতায়ন করেছি এবং জনগণের কাছে তাদের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছি । এসব কাজ আওয়ামী লীগ করেছে। আমাকে শেখাতে হবে না। এসবই হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। যার কারণে মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এসেছি বলেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। এটা কোনো দেশের অনুদান বা ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে নয়। আমরাই এটা করেছি।
ওয়াশিংটন সফরকালে সরকারপ্রধান আরও বলেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানের সঙ্গে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন । তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সবুজ জলবায়ু তহবিলের অর্থায়ন এবং “ক্ষতি ও ক্ষয়ক্ষতি” তহবিল বাস্তবায়নে শক্তিশালী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানাই।
জেক সুলিভান; নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস দমনের মতো সরকারের অর্জনের প্রশংসা করেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আবারও বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আশাবাদী যে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থানকে যেমন শক্তিশালী করেছে, তেমনি এটি বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে প্রশস্ত করবে। সামগ্রিকভাবে আমি মনে করি এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ খুবই সফল।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা কেউ বলেনি। মনে নেই, এমন কোনো কথা হয়নি। কেউ জিজ্ঞেস করেনি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতার পর এটা আর কে চায়?
বিএনপির আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা বারবার তারিখ দিচ্ছে। এই তারিখে নামবে, সেই তারিখে নামবে। তাদের সরানো যাক। জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি হলে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার সঙ্গে বেশি কথা বললে আমি সব বন্ধ করে বসে থাকব। ভোট দিলে আবার করব। দেখা যাক দায়িত্ব নিতে রাজি কে! সব রেডি করে রেখেছি, এখন বসে বড় বড় কথা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আমার বাবা-মাকে হারিয়েছি। আমি হারান কিছুই আছে। আমি ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে সংগ্রাম করছি। কত বছরের রাজনীতি? আমার স্বপ্ন ছিল- জাতির জনকের, আমি তা করেছি, এখন কেউ না খেয়ে চলে না।
রিজার্ভ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,যেসব আঁতেল, জ্ঞানীগুণী কথা বলেন, তারা কি জানেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি, তখন রিজার্ভ কত ছিল? বাংলাদেশ কোথায় ছিল, কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছি? যতটুকু রিজার্ভ প্রয়োজন, আমাদের আছে। আমাদের ভালো থাকা জরুরি, নাকি রিজার্ভটা দরকার বেশি? যদি বলে, তাহলে রিজার্ভ আগের জায়গায় এনে দেই? বিদ্যুতকেন্দ্র-টেন্দ্র বন্ধ করে দেই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি, প্রতিদিন একটু করে লোডশেডিং দিতে। যাতে বিদ্যুৎ থাকার গুরুত্বটা বোঝে। আর তাই সবাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে ।
সুবিধা নিচ্ছে বিত্তবানরা। এ কারণে যারা বেশি ব্যবহার করবে তাদের বেশি টাকা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। সেই অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা।
এ সময় বিএনপিকে বিরোধী দল বলা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এই প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যারা জাতীয় সংসদে নেই, যাদের একটি আসনও নেই, তারা বিরোধী দল হবে কিভাবে? বিরোধী দল কারা, যাদের সংসদে আসনও নেই? যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারবে না, তারা কি বিরোধী দল ! তিনি বলেন, রাস্তায় কেউ ঘেউ ঘেউ করে বেড়ালেই বিদেশিরা তাকে বিরোধী দল হিসেবে ধরে না।
জি-টোয়েন্টি সম্মেলন থেকে খালি হাতে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী- বিএনপির অভিযোগের কোনো জবাব দিতে চান না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই- বিএনপির নেতারা কীভাবে মাইক্রোফোন নিয়ে মিথ্যা বলেন তা সবাই জানে। মিথ্যা বলা তাদের অভ্যাস এবং সবকিছু ছোট করার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। তারা যা বলে সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথা কেউ শুনবে না। কেউ মিথ্যায় বিশ্বাস করবে না- দেশবাসীর কাছে এটাই আমাদের আবেদন।
আরও পড়ুন
আমেরিকায় যাওয়ার দরকার নেই, আরও অনেক মহাদেশ আছে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বলেন,বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন কী ছিল! তারা যা করেছে তার একটি ভগ্নাংশও যদি আমরা করতে পারতাম। তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। বিএনপির জন্ম অবৈধভাবে, মিথ্যার ওপর টিকে আছে। তাদের কোন শিকড় নেই। তারা মিথ্যার উপর নির্ভর করে। তা করতে হবে. এটা তাদের অভ্যাস। সুশীল সমাজের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকজন নামকরা অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকেই বলেছেন, আমরা মেগা প্রজেক্ট করেছি, কিন্তু গরিবদের জন্য কিছুই করিনি। এমন বক্তব্য শুনে মনে হয় তারা বাংলাদেশ দেখেননি। তারা ঘরের ভিতরেই আছে। এবং শুধুমাত্র টেলিভিশন দেখে । পৃথিবীর দিকে তাকায়ওনা।তিনি বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে অবৈধভাবে আর টিকে আছে মিথ্যার ওপরে। তাদের শেকড় নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এটাই করবে। এটা তাদের অভ্যাস। সুশীল সমাজের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, কিছু সনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করে ফেলেছি, কিন্তু দরিদ্রের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এরকম বক্তব্য শুনলে মনে হয় তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন-দুনিয়া তাকিয়ে দেখেন না।