হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেন শামীম ওসমানঃ ক্ষমতা ছাড়ার প্রশ্নে বেকায়দায় মোমেন
নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশলে বলেন ; বা ক্ষমতার প্রান্ত ভাগে এসে বিতসন্তস্ত হয়ে প্রায়শ্চিত্ত বলেন ; যাই বলেন না কেন নরম স্বরে কথা বলছে আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন বিলাসী আমাদের ক্ষমতাসীন টিমের অন্যতম খেলোয়াড় শামীম ওসমান । এবং সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার প্রশ্নে উত্তর দিতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।
নিজের অজান্তে কোনো ভুল হয়ে থাকলে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। ওমরাহ হজে যাওয়ার আগে শনিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় কবরস্থানে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের কবর জিয়ারত করে বিরোধী দলসহ সবার কাছে ক্ষমা চান তিনি।
ফেসবুক পেজের একটি ভিডিওতে শামীম ওসমানকে মৃত্যুর স্মৃতিচারণ করতে এবং মাদক নির্মূলের শপথ করতে শোনা যায়। তিনি বলেন, আমি একজন মানুষ। ফেরেশতা এবং শয়তানরা ভুল করে না। মানুষ হিসেবে আমি ভুল করতেই পারি। রাজনীতি করই, মাঝে মাঝে অনেক কথা বলতে হয়। হয়তো যারা বিরোধী দলে আছেন তারা কষ্ট পাচ্ছেন। সবার কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
ত্রুটি ঘটতে পারে। হয়তো এটা ঘটেছে। তাই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ফিরে আসব কিনা জানি না। আপনারা দোয়া করবেন।
শামীম ওসমান বলেন, আজ আমাদের ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান স্বপন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তিনি আমার চেয়ে ছোট। তাই সবার উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলতে চাই, মানুষের জীবন খুবই ছোট। এই সংক্ষিপ্ত জীবনে আমরা অনেক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ি। যা আমাদের উচিত নয়। আগামীকাল পরিবার নিয়ে তাওয়াফ করতে যাব। আমি যেমন নিজের জন্য দোয়া করি, তেমনি আমি আমার অঞ্চল ও দেশসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করতে চাই।
তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম হজে গিয়েছিলাম, তখন আল্লাহর কাছে নারায়ণগঞ্জ থেকে নিষিদ্ধ যৌনপল্লী পুনর্বাসনের মাধ্যমে অপসারণ করতে চেয়েছিলাম। শেখ হাসিনার ইচ্ছা আল্লাহ কবুল করেছেন। আমি এখন আল্লাহর কাছে চাইবো যেভাবে মাদক চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে তা দূর করার জন্য কাজ করুন। পুলিশের একার পক্ষে তা অপসারণ করা সম্ভব নয়। দোয়া করবেন আমি যেন দলমত নির্বিশেষে মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সমাজের সকল ভালো মানুষের সাথে কাজ করতে পারি।
কবে ক্ষমতা ছাড়ছেন প্রশ্নে, কী বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আ. মোমেন
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। বর্তমান সময়ে রাজনীতি সচেতন মানুষের কাছে খুবই পরিচিত মুখ। তিনি নিয়মিত হোয়াইট হাউস, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং জাতিসংঘের প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের ইস্যু তুলে ধরেন। তবে সরকার সমর্থকরা এবং স্বয়ং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন সময় মুশফিকুলের নাম নিয়ে নানা মন্তব্য করে অভিযোগ করেছেন , তিনি আমেরিকানদের কাছে বাংলাদেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন।মুশফিকুল ইউনাইটেড নেশনস করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনেরও সদস্য।
জাতিসংঘে কাজের সুবাদে মাঝেমধ্যে নিউইয়র্কে আসেন মুশফিকুল। শনিবার সকালে বাঙালীপাড়া জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে বসেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিলেন। এ সময় হঠাৎ রেস্টুরেন্টে হাজির হন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্বস্ত্রীক এ কে আব্দুল মোমেন। সে সময় তাকে কেউ সাংবাদিক মুশফিকুলের কথা বলেন। সঙ্গে সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুশফিকুলের টেবিলের কাছে গিয়ে কুশল বিনিময় করেন। চেয়ার টেনে কিছুক্ষণ কথা বললেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী সেলিনা মোমেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা।
ভার্জিনিয়ার একজন ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট জাহিদ খান উপস্থিত ছিলেন সেখানে। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিক মুশফিকুল তার কয়েকজন বন্ধুসহ নবান্ন রেস্টুরেন্টে বসে সকালের নাস্তা শুরু করেছিলেন। ঠিক তখনই সেখানে হাজির হন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী। সোজা মুশফিকের টেবিলের সামনে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন তিনি। মতবিনিময় শেষে জানালেন তার আমেরিকান জীবনের নানা অধ্যায়ের গল্প। উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ফোবানা গঠনে তার ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন। তিনি আমেরিকার সাথে তার অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের কথাও মনে করিয়ে দেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মুশফিক বলেন, কবে ক্ষমতা ছাড়ছেন? জবাবে মোমেন বলেন, ‘ক্ষমতা ছাড়ব কেন? নির্বাচন হবে নির্বাচনের মতো। আমেরিকায় নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট কি ক্ষমতা ছাড়েন? এরপর মুশফিক বলেন, “এই তুলনা করবেন না। দেশের সব রীতিনীতি, প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। এসব কেতাবি কথা বলে কী লাভ? বরং প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে যত তাড়াতাড়ি পারেন ক্ষমতা থেকে সরে পড়েন। অবস্থা কিন্তু ভালো না। বিপদে পড়ে যাবেন। তখন আর কিছুই করার থাকবে না। বরং এখনই বিদায় নিলে দেখা যাবে কিছু করা যায় কি-না। পাল্টা উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ না আমরা এসব নিয়ে চিন্তা করছি না। তবে হ্যাঁ পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ। বরং এখন চলে গেলে দেখব কিছু করা যায় কি না।জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না। ,আমরা এসব নিয়ে ভাবছি না।কিন্তু হ্যাঁ পরিস্থিতি একটু খারাপ।পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে কারো সাথে ব্যক্তিগত আলাপও করা যায় না।সবাই পেছনে পড়ে আছে।সেদিন একজনের মৃত্যুর খবর পেলাম। আমার বন্ধুরা ও তার বাসায় গিয়েছিলাম ।আমার আরেক বন্ধু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলও সেখানে আসেন।মুশফিকুল বলেন, আপনার দল আওয়ামী লীগই দেশকে এই জায়গায় নিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন
ছাত্রলীগ নেতাদের পিটিয়ে দাঁত ফেলে দিয়ে ধরা খেলেন এডিসি হারুন: হলেন সাময়িক বরখাস্তঃ নেপথ্যে…নারী?
এ সময় তিনি মুশফিককে জিজ্ঞেস করেন, কী খাবেন, আপনার জন্য কিছু অর্ডার করব? জবাবে মুশফিক বলেন, নাস্তা করছি। আরও ভাল হয় আমাদের সাথে যোগ দিন’। এরপর ডাঃ মোমেন ধন্যবাদ জানিয়ে অন্য টেবিলে বসে সঙ্গীদের সাথে নাস্তার অর্ডার দেন।