November 22, 2024
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল সিরিয়া

প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল সিরিয়া

প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল সিরিয়া

প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল সিরিয়া

ইতিহাসের জঘন্য ব্যক্তিত্ব বাশার আল-আসাদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেশটির সাধারণ মানুষ । এক শতাব্দী আগে দেশটির বিভিন্ন  রাজনৈতিক দল , পরে তাদের সাথে সাথে  সশস্ত্র গোষ্ঠী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।  কিন্তু আসাদ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এ লড়াইকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। সেই লড়াই এখনও চলছে। এবার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে সামিল হলেন সাধারণ মানুষও  । কিন্তু এবার মানুষ নির্যাতন সহ্য করতে করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়ে জনসাধারণ যে যেমনি পেরেছে রাস্তায় নেমে পড়েছে  আসাদের বিরুদ্ধে।  বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে সিরিয়া।

গত সপ্তাহে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দ্বিতীয় সপ্তাহে বেড়েছে। সিরিয়ার বর্তমান ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিবাদে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ শুরু হয়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই তা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

শুক্রবার দেশের বিভিন্ন প্রদেশে বিক্ষোভে ‘বাশার চলে যাক, সিরিয়া মুক্ত হোক’, ‘সিরিয়া খামার নয়, আমরা ভেড়া নই’ প্রভৃতি স্লোগানে প্রতিধ্বনিত হয়।

সিরিয়া বর্তমানে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ১২ বছর আগে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তখন সিরিয়ার পাউন্ডের মূল্য ছিল ৪৭ ডলারে। বর্তমানে সেই মূল্য ১৫ হাজার ৫০০ ছুঁয়েছে।

সিরিয়ার ইতিহাসে এর আগে কখনো ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের এত অবমূল্যায়ন ঘটেনি।

এই বছরের জুনে, জাতিসংঘ বলেছিল যে সিরিয়ায় ১২ বছরের সংঘাত দেশটির জনসংখ্যার ৯০ শতাংশকে দারিদ্র্যসীমার নীচে ঠেলে দিয়েছে। একই সঙ্গে বাড়ছে খাদ্য ও জ্বালানির দাম আর  বিদ্যুৎতো বলতে গেলে নেই-ই। সরকার বিক্ষোভ দমনে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি মূল্য, আর্থিক দুর্নীতি এবং সরকারি অব্যবস্থাপনা সরকার বিরোধী বিক্ষোভে ইন্ধন যুগিয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা বারবার আসাদের পদত্যাগ দাবি করে আসছে। দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে বিক্ষোভ ক্রমেই গতি পাচ্ছে।

সিরিয়ার ১৪টি প্রদেশের মধ্যে ৩টি ছাড়া বাকি সবগুলোই এখনো রাজধানী দামেস্কের ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রদেশে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ বিরল, তবে এবার বিক্ষোভ শুরু হয়েছে প্রধানত সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রদেশে।

উল্লেখ্য, বাশার আল-আসাদ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিরিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হাফিজ আল-আসাদের পুত্র এবং রাজনৈতিক উত্তরসূরি। সিরিয়ার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আসাদ পরিবার অত্যন্ত আলোচিত ভূমিকা পালন করে। পরিবারটি মূলত সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাবি বা নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের বাসিন্দা। ১৯৭০ সালে, পরিবারটি ‘সংশোধনী বিপ্লব’ নামে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিরিয়ার রাজনীতিতে প্রবেশ করে।

তারপর থেকে, সিরিয়ার শাসক বাশার আল-আসাদের পরিবারের সদস্যরা সিরিয়ার সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীতে বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণ এবং নেতৃত্বের অবস্থান দখল করেছে। পরিবারের সদস্য ছাড়াও মূল আলাব সম্প্রদায়ের অনেকেই সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। বাশার আল-আসাদের নেতৃত্বাধীন বাথ পার্টি বর্তমানে সংবিধানকে কেটে ছেড়ে নিজের মতো করে সাজিয়ে এখন সাংবিধানিকভাবে সিরিয়ার শাসক দল। বাশার ২০০০ সালে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের আগ পর্যন্ত সিরিয়ার রাজনীতিতে খুব বেশি জড়িত হননি। বরং ক্ষমতার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আগে তিনি সিরিয়ান কম্পিউটার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ছিলেন। বাশার আল-আসাদ ২০০১ সালে গণভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

মানবতা ধ্বংসের ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে ইসলামকে ধ্বংসের ক্ষেত্রে বাশার পরিবার খুবই খুবই  চতুর, জঘন্য  এবং হিংস্র প্রকৃতির নিম্নে এর সামান্য উল্লেখ করা হলোঃ

ভ্রান্ত বিশ্বাসে বিশ্বাসী সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা আসাদ ও তার বাহিনী যে পরিমাণ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এই হত্যাযজ্ঞ সাম্প্রতিক পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। অবৈধ ক্ষমতার দখলদার মুসলিম নামধারী এই জালিম তার ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য ইসলামের উপর যে আক্রমণ ও জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড দেখিয়েছে । তারপরেও   কিছু অমানুষ শাসকের সমর্থনে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে ।

উদাহরণস্বরূপ,২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮২ -এ, হামা শহরে নুসাইরি (আলাবি) গোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট আসাদ এবং তার ভাই কর্নেল রিফাত আসাদের নেতৃত্বে সিরিয়ার সেনাবাহিনী দ্বারা আহলে সুন্নাহ, বিশেষ করে ইখওয়ানুল মুসলিমীনের উপর

যে  হামলা ও গণহত্যা  চালায় তা সাম্প্রতিক অতীতে নজিরবিহীন। ওই গণহত্যায় নিখোঁজ, গ্রেফতার ও দেশত্যাগী ছাড়াও প্রায় ৪০ হাজার সাধারণ মানুষ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় শুধুমাত্র সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতা থাকার লালসে। পৈশাচিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে জাতিগত প্রতিবাদ এবং বাইরের চাপ প্রতিরোধ করার জন্য সমস্ত ধরণের মিডিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা সহ প্রেসের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। হামা শহরের সংযোগকারী সমস্ত রাস্তা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। কাউকে শহর ছেড়ে যেতে দেওয়া হয়নি। হামলার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাতে পুরো শহরকে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারে ফেলে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছিল। অনেক মসজিদ এবং গির্জা ধ্বংস করা হয়েছিল, রাস্তায় রাস্তায় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, হাজার হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছিল এবং অনেক কবরস্থান ভেঙে ফেলা হয়েছিল। অবশেষে, স্বৈরশাসক এবং তার বাহিনীর দ্বারা ২৭ দিন ধরে গণহত্যা ও বাড়িঘর ধ্বংস করার পর (ফেব্রুয়ারি২-২৮, ১৯৮২), হামা শহরের এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে গেলে ধ্বংসযজ্ঞ শেষ হয়।

আরও পড়তে

সবার মধ্যে মন মরা মুখ গোমরা ভাব কেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বারবার আন্দোলন করেও থামানো যাচ্ছে না এই জঘন্য খুনিকে । তবে আগে রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু করলেও এখন এই  জনমনে আন্দোলন নেমে এসেছে। দেখা যাক জনগণের ভাগ্যে কি লেখা আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X