November 22, 2024
বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সংশয়

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সংশয়

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সংশয়

বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সংশয়

আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু পর্যবেক্ষকদের একটি তালিকা নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে নতুন করে সংশয় সৃষ্টি করেছে। তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন চলতি মাসে ৬৮ জন পর্যবেক্ষকের অনুমোদন দিয়েছে এবং তাদের নাম অনলাইনে প্রকাশ করেছে। তাদের উপস্থিতিতে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হবে বলে  বলা  হচ্ছে। কিন্তু বিরোধী দল ও আন্তর্জাতিক সমালোচকদের আশঙ্কা প্রশমিত করার পরিবর্তে নির্বাচনে কারচুপি হবে বলে ধারনা করা  হচ্ছে । পর্যবেক্ষকদের এই তালিকা সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি করেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তালিকায় থাকা প্রায় অর্ধেক পর্যবেক্ষকের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কোনো রেকর্ড নেই ,  আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে । এটা নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ বিষয়ে নিক্কেই এশিয়া একাধিক পর্যবেক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাতেও একই সমস্যা খুঁজে পেয়েছে।

পর্যবেক্ষকদের একজন হলেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও ঢাকার একটি ওয়ার্ড কমিটির সদস্য মিজানুর রহমানের ‘শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র’।

যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করেন, স্থানীয় বা জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তার প্রতিষ্ঠানের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তবে বিস্তারিত না জানিয়ে তিনি দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষক হওয়ার পূর্ণ সক্ষমতা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও এ বিতর্কের কথা স্বীকার করেছেন। তারা বলেন, ওয়াচ লিস্ট সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। কারো নামে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। আনিসুর রহমান বর্তমান নির্বাচন কমিশনে ৬ সদস্যের প্যানেলের কমিশনার। কমিশনের ওয়েবসাইটে একটি নোটিশ পোস্ট করা হয়েছে, তিনি নিক্কেইকে জানিয়েছেন। এটি এ ধরনের তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তিনি বলেন, কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করব।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাতও নিশ্চিত করেছেন, সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ কোনো অভিযোগ থাকলে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে না।

কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, আগের নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগের পর ঘটনাটি কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরও ক্ষুণ্ন করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার তা অস্বীকার করেছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্যরা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন একটি পক্ষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে, তারা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কাজ করছে।

রুমিন ফারহানা, প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অন্যান্য সংসদ সদস্যদের সাথে গত বছরের শেষ দিকে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, আরেকটি বিব্রতকর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার বদ্ধপরিকর। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের এই তালিকা তারই প্রমাণ।

এদিকে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। বিএনপি ও তার সহযোগীরা প্রতিনিয়ত রাজপথে বিক্ষোভ করছে। তারা নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের প্রথম মেয়াদে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইনি ধারা বাতিল করে দেন।

বাংলাদেশের শত শত বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানির প্রধান দুটি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ঢাকায় বর্তমান সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা নিয়ে তাদেরসহ বৈশ্বিক শক্তিগুলো বারবার সংশয় প্রকাশ করেছে। এ বছর যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষিদ্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও শেখ হাসিনার সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি নাকচ করে দিচ্ছে। অন্যদিকে তারা বলছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছেন।

মুবাশ্বর হাসান সন্দিহান ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির একজন রিসার্চ ফেলো। তিনি বলেন, ভুয়া পর্যবেক্ষকদের ব্যবহার কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি সাধারণ কৌশল। তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বর্তমান তালিকাকে কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নয় বলে উল্লেখ করেন। আওয়ামী লীগ সম্ভবত একটি নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে যা এই পর্যবেক্ষক  দলগুলো অনুমোদন করবে।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বারবার সুষ্ঠু হওয়ার প্রতিশ্রুতি সত্য হলে তাদের আইন লঙ্ঘন বা কিছু মনিটরিং সংস্থা বেছে নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। অন্যান্য পদক্ষেপের সাথে এই ঘটনাটি (পর্যবেক্ষক নির্বাচন) একটি ইঙ্গিত দেয় যে বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যেখানে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা – যা  সরকার বা নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য নয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। প্রধান বিরোধী দলসহ বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করে। অভিযোগ আছে ,আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে দেওয়া হয়েছিল। বিরোধী দল ও সমমনা নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময়, কমিশন বিদেশী পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানায়। তবে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, তারা অভিজ্ঞতাহীন পর্যবেক্ষক ছিলেন। ওই পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনের ফলাফল অবাধ ও সুষ্ঠু ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্ট সেই নির্বাচনকে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৯৬ শতাংশ জয়লাভ করে। ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, উত্তর কোরিয়ায় এ ধরনের ঘটনা আশা করা যায়।

বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ গ্রুপ হল জানিপপের চেয়ারম্যান ড.  নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ  বলেন, ২০১৮ সালে আসা পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষকের পরিবর্তে ‘নির্বাচন পর্যটক’ ছিলেন। একজন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক হওয়ার জন্য কিছু গুণাবলী এবং ট্র্যাক রেকর্ড থাকতে হবে। স্পষ্টতই তাদের এটা ছিল না.

আরও পড়ুন

‘রাতের অন্ধকারে এমপি হয়েছ, আমরাই তো তৈরি করেছি’: আওয়ামী লীগ নেতা

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ২০১৮ সালের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। বিদ্যমান আইন কমিশনকে অনেক ক্ষমতা দিয়েছে। তারা নিরপেক্ষ ও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক বেছে নিতে পারে, যাদের কোনো স্বার্থ নেই। এটি করতে ব্যর্থ হলে তা কেবল নির্বাচন পর্যবেক্ষণকে উপহাসই করবে না, বরং কমিশন ইতিমধ্যে যে বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে তা আরও গভীর ও প্রসারিত করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X