১৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর থাইল্যান্ডে ফিরেই গ্রেপ্তার থাকসিন সিনাওয়াত্রা
থাকসিন সিনাওয়াত্রা (জন্ম ২৬ জুলাই, ১৯৪৯) একজন বিশিষ্ট থাই রাজনীতিবিদ এবং ধনকুবের, যিনি চিয়াং মাই প্রদেশের সান কামফায়েং এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ২০০১থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, তার ছোট বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা ২০১১থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ১৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দেশে ফেরেন তিনি। এবং পরে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
১৫ বছর নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা কারাগারে বন্দি হয়েছেন। তবে অনেকে বিশ্বাস করেন যে তিনি এমন একটি চুক্তিতে দেশে ফিরেছেন যা তাকে বেশিদিন কারাগারে রাখতে পারবে না।
মূলত, দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে ভোটের কয়েক ঘণ্টা পরেই থাকসিন ফিরে আসেন এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে, তার বোন, ইংলাক সিনাওয়াত্রা, থাইল্যান্ডের আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, টিকটকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যেখানে থাকসিনকে গাঢ় নীল স্যুট এবং লাল টাই পরা, একটি ছোট প্লেনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে।
ইংলাক সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা আরেকটি ছবি দেখিয়েছেন যে থাকসিন সিঙ্গাপুরে তার প্রাইভেট জেটের ভেতরে বসে আছেন। ইংলাক পোস্টে বলেছেন, “আমার ভাই যে দিনটির জন্য অপেক্ষা করছিল সেই দিনটি এসেছে।”
ডন মুয়াং বিমানবন্দরে অবতরণের পর তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছুক্ষণ দেখা যায়। এ সময় তিনি পুয়ে থাইয়ের নির্বাচিত বিধায়ক ও উপস্থিত শত শত সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তারপর বিমানবন্দর টার্মিনালের ভিতরে ফিরে যান।
৭৪ বছর বয়সী থাকসিন থাইল্যান্ডের দুইবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
দুর্নীতির দায়ে জেলে যাওয়া এড়াতে ২০০৮ সালে দেশ ছেড়েছিলেন থাকসিন। এরপর থেকে তিনি দেশের বাইরে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে রয়েছেন।
থাকসিনকে অনুপস্থিতিতে বিচার করা হয়েছিল এবং বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অন্যান্য আরও মামলা রয়েছে।
থাকসিন ইতিমধ্যেই বলেছেন যে তিনি দেশে ফিরে বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে মামলাগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও অভিহিত করছেন তিনি।
৭৪ .বছর বয়সী এই নেতাকে দেশে ফেরার পরপরই সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং আগের তিনটি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য তাকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর তাকে ব্যাংককের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
সেখানে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, বার্ধক্যজনিত কারণে থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে নির্দিষ্ট চিকিৎসা সরঞ্জামসহ আলাদা উইংয়ে রাখা হবে। সেখানে, তিনি অবিলম্বে ১০ দিনের কোয়ারেন্টাইনের মধ্য দিয়ে যাবেন, যার প্রথম পাঁচ দিন তিনি তার বাড়িতে থাকবেন।
এর আগে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই থেকে একটি প্রাইভেট জেটে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় রাজধানী ব্যাংককে অবতরণ করেন। তার শত শত উত্সাহী সমর্থক উল্লাস, বক্তব্য এবং গান গাইছিলেন।
এছাড়াও, উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডে তার দলের শক্ত ঘাঁটি থেকে অনেকেই থাকসিনের প্রত্যাবর্তনের মুহূর্তটি দেখার জন্য রাতারাতি ব্যাংককে ছুটে আসেন। কিন্তু থাকসিন তাদের অভ্যর্থনা জানাতে পারেননি। দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে, তিনি সংক্ষিপ্তভাবে বিমানবন্দর টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে আসেন এবং রাজা ও রানীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান।
দেশে ফেরার পর থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়। মূলত তার অনুপস্থিতিতে প্রদত্ত কারাদণ্ড নিয়ে কী করা হবে তা ঠিক করবে। পরে তাকে আটক করা হয় বলে জানা গেছে।
দেশে ফেরার পর, থাকসিনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অন্যান্য ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে আদালতে অভিযুক্ত করা হয়। তবে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী।
থাইল্যান্ডের সবচেয়ে সফল নির্বাচিত নেতাকে দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণশীল রাজকীয়রা ভয় পান। তারা থাকসিনকে দুর্বল করার লক্ষ্যে সামরিক অভ্যুত্থান এবং বিতর্কিত আদালতের মামলাগুলিকে সমর্থন করেছে।
এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতার সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থায় থাকসিনকে দেশে ফিরিয়ে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হলে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
থাইল্যান্ডে থাকসিনের জনপ্রিয়তা কমেনি। ২০০১সাল থেকে তার নিজ নিজ দল সব নির্বাচনেই এগিয়ে রয়েছে। ব্যতিক্রম ছিল এবারের নির্বাচনে। এবার সংসদের নিম্নকক্ষে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে প্রগতিশীল মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)। সরকার গঠনের লক্ষ্যে সমমনাদের নিয়ে সরকার গঠন করেছে দলটি। যাইহোক, থাইল্যান্ডের সামরিক জান্তা কর্তৃক নিযুক্ত সিনেটরদের বাধার মুখে এমএফপি নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন
সবার মধ্যে মন মরা মুখ গোমরা ভাব কেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এর ফলে তিন মাস ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। পার্লামেন্টে ফিউ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোটের নেত্রী শ্রেথা থাভিসিন, প্রয়োজনীয় ৩৭৪ ভোট পেয়ে অবশেষে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সিনেটের সমর্থনে আজ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। গত মে মাসের নির্বাচনে এমএফপির পর দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ফিউ পার্টি। দলটি এমএফপির গঠিত প্রথম জোটেও ছিল।
এদিকে ফিউ পার্টির নতুন জোটে নাখোশ দলটির অনেক সমর্থক। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের একজন গবেষক অ্যারন কনেলি মনে করেন, থাকসিনের পুরনো শত্রুদের কোনোরকম প্রত্যাশার বাইরেই জোটে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যদি থাকসিন রাজকীয় ক্ষমা না পান, তবে কিছু দলের সমর্থক প্রশ্ন করতে পারেন কেন তাদের দল এমন জোটে যোগ দিল।”