কঠিন সময়ে ইমরান খানের পাশে দাড়ালেন ওয়াসিম আকরাম ও অন্যান্য কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা
ইমরান খান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। তাঁর নেতৃত্বেই ১৯৯২ সালে পাকিস্তান প্রথম ও একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতেছিল। এরপর ইমরান পাকিস্তানের জাতীয় নায়ক হয়ে ওঠেন। তার তুমুল জনপ্রিয়তার পরেই ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এই প্রাক্তন ক্রিকেটার।
ইমরান খান ১৯৮৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান। তবে ১৯৯২ বিশ্বকাপের আগে তিনি অবসর ভাঙ্গেন এবং দলে ফিরে আসেন এবং দেশের হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। অধিনায়কত্ব ছাড়াও পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফরমেন্সে দেখান এই অলরাউন্ডার। ক্রিকেটের ইতিহাসে ইমরানই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি পরবর্তীতে তার দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
গত বছর সংসদে অনাস্থা ভোটে হেরে প্রধানমন্ত্রীত্ব হারান ইমরান খান। তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এই নেতাকে চলতি বছরের ৯ মে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সরকারি পণ্য বিক্রির অভিযোগে ৫ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় গ্রেপ্তার হন তিনি। দেশটির আদালত তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। এমনকি নির্বাচন কমিশন তাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে।
এদিকে, গত ১৪ আগস্ট ছিল পাকিস্তানের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস। এই উপলক্ষে, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) তাদের ক্রিকেট কৃতিত্বের মুহূর্তগুলি সংগ্রহ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু দুই মিনিট ২১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে এক পলকের জন্যও জায়গা পাননি ইমরান খান।
এই কারণে পাকিস্তান ক্রিকেট ভক্তদের কাছ থেকে জাকা আশরাফের নেতৃত্বাধীন পিসিবি অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ ক্ষুব্ধ দেশের আরেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম। তাই সুইং কিং খ্যাত এই প্রাক্তন ক্রিকেটার ইমরানের পাশে দাঁড়িয়ে পিসিবিকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন।
ওয়াসিম বলেন, ‘আমি দীর্ঘ ফ্লাইট ও ট্রানজিটের পর শ্রীলঙ্কায় এসেছি। পৌঁছে আমি পিসিবির ছোট ভিডিও দেখে অবাক হলাম যেখানে ইমরান খানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু ইমরান পাকিস্তান ও বিশ্ব ক্রিকেটের আইকন। পাকিস্তান ক্রিকেটকে শক্ত ভিত দিয়েছিলেন তিনি। পিসিবির উচিত এই ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা এবং ক্ষমা চাওয়া।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম এ সদস্য ও নায়ক ওয়াসিম আকরাম এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘ব্যক্তি হিসেবে আপনি একজন। কিন্তু আপনার কাছে কোটি কোটি মানুষের ক্ষমতা আছে। ক্যাপ্টেন আপনি শক্তিশালী, দৃঢ় থাকুন।
এদিকে পিসিবির টুইটারে প্রকাশিত ভিডিওতে পাকিস্তান ক্রিকেটের অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত রয়েছে। সেই ভিডিওতে হানিফ মোহাম্মদ, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতার, ওয়াসিম আকরামের মতো দেশের কিংবদন্তিদের বেশ কয়েকটি ফুটেজ দেখা গেছে। শহীদ আফ্রিদি, বাবর আজম, নাসিম শাহের মতো ক্রিকেটাররাও জায়গা পেয়েছেন। তবে ইমরান খানকে একবারের জন্যও দেখা যায়নি।
পিসিবির ভিডিওতে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত, প্রথম এশিয়া কাপ জয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়সহ আরও অনেক ঘটনা দেখানো হয়েছে। কিন্তু এসবের মধ্যে শুধু ইমরান খানকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।
পাকিস্তানের হয়ে ইমরানের একটি সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার ছিল। দেশের হয়ে ৮৮ টেস্টে ৩৬২ উইকেট এবং ১৭৫ ম্যাচে ১৮২ উইকেট পাওয়া ইমরানকে রাখা হয়নি। পাকিস্তানের হয়ে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দুর্দান্ত ছিলেন তিনি। সাদা পোশাকে ৬ টি সেঞ্চুরি ও ১৮ হাফ সেঞ্চুরি সহ ৩ হাজার ৮০৭ রান এবং ওয়ানডেতে ১ সেঞ্চুরি ও ১৯ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩ হাজার ৭০৯ রান আছে তাঁর।
গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান অনাস্থা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হন। এবার তাকে দুর্নীতির দায়ে গ্রেফতার করেছে দেশের বর্তমান সরকার। একই সঙ্গে ইমরানের বিরুদ্ধে ৮ দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করা হয়েছে। এরপর থেকে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিটিআই) সমর্থকরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গণগ্রেফতার শুরু করেছে। এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় এক হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইমরানের পাশে দাঁড়িয়েছেন দেশের সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে আসার আগে দেশের জার্সিতে ২২ গজ খেলেছেন ইমরান খান। সত্তর ও আশির দশকে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। যাইহোক, ১৯৯২ সালে, তার নেতৃত্বে, সবুজ পুরুষরা তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ পায়।
অনেকের মতে, কিংবদন্তি ইমরান খানের জন্য ১৯৯২ সালে পাকিস্তান অসম্ভবকে অর্জন করেছিল। কেউ কেউ বলছেন, ইমরান খান কিভাবে একটি গড় পড়তা দল নিয়ে সতীর্থদের মধ্যে থেকে সেরাটা তুলে এনে। বিশ্বকাপ জিততে হয় তার জ্বলজ্বল উদাহরণ এবং
সুদর্শন, কৌশলী এবং নেতা ইমরান খান পরে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং অবশেষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। গত বছরের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। অবশেষে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এমন কঠিন সময়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন এক সময়ের সতীর্থ থেকে তারকা ক্রিকেটাররা।
পাকিস্তানের আরেক কিংবদন্তি স্পিডস্টার শোয়েব আখতার লিখেছেন, ‘আমাদের দেশের নায়কের সঙ্গে এটা দেখতে ভালো লাগছে না। এভাবে নেওয়া হচ্ছে ইমরান খানকে! তার শারীরিক অসুস্থতা এবং দেশের জন্য তার আত্মত্যাগের কারণে তাকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত ছিল। আমরা কোথায় যাচ্ছি? আমাদের দেশের বীরকে সম্মান করুন।
ওয়াকার ইউনূস লিখেছেন, ‘ক্যাপ্টেন, আমরা তোমার পেছনে আছি। আসুন আমাদের নেতা ও স্বাধীনতা রক্ষা করি।’
ইমরান খানকে এভাবে গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধ্যাপক হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ হাফিজ বলেন, এটা বেদনাদায়ক ও নিন্দনীয় কাজ।
আরও পড়ুন
ইমরান খানের সুস্থতা কামনায়ঃ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের তারকা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম
টুইটার জরিপে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান প্রায় ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন