November 25, 2024
ইমরান খানকে রাখা হয়েছে যেই কুখ্যাত কারাগারে

ইমরান খানকে রাখা হয়েছে যেই কুখ্যাত কারাগারে

ইমরান খানকে রাখা হয়েছে যেই কুখ্যাত কারাগারে

ইমরান খানকে রাখা হয়েছে যেই কুখ্যাত কারাগারে

ইমরান আহমেদ খান নিয়াজি। পাকিস্তানের সদ্য বিদায়ী একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, সাবেক খেলোয়াড় এবং পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। খেলার পর তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ব ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন তিনি। ১৯৯২ সালে তার নেতৃত্বেই বিশ্বকাপ জিতেছিল পাকিস্তান। তিনি ২০১৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১০ এপ্রিল, ২০২২ -এ অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ৯ মে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

জনপ্রিয়তা দমনে বেশিরভাগ শাসকই আদালতকে ব্যবহার করেছে। ইমরান খানের ক্ষেত্রেও  তার ব্যতিক্রম হয়নি।  শাসনকে পাকাপোক্ত করতে এবং জনপ্রিয় নেতাদের উপর জুলুম অত্যাচার এর বৈধতা দিতে আর তার জনপ্রিয়তাকে তলানিতে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টায় পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশের শাসকই আদালত বা বিশেষ বাহিনীকে ব্যবহার করেছে । আর ইমরান খানের সাপোর্ট বা জনপ্রিয়তা পাকিস্তানি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি এবং সেটা ৯৮ পারসেন্ট এর উপরে । সেটা বুঝতে পেরেই তাদের চিরচরিত নিয়মে এগুচ্ছে দেশের বিশেষ ফোর্স এবং আদালত । গ্রেফতার হয়েছেন  ইমরান খান ।

ইমরান খানকে সম্প্রতি ইসলামাবাদ হাইকোর্টের বাইরে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় জাতীয় জবাবদিহি ব্যুরোর রেঞ্জার্সের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছে । একটি কালো গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় রেঞ্জার্স বাহিনী।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাঞ্জাবের অ্যাটক জেলে বন্দি করা হয়েছে। এই ‘কুখ্যাত’ কারাগারে বন্দী পাকিস্তানের প্রথম সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান। শনিবার ইসলামাবাদের একটি আদালত রাষ্ট্রীয় উপহার ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। রায় ঘোষণার পরপরই লাহোরের জামান পার্কের বাসা থেকে ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় তাকে অ্যাটক জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

রাওয়ালপিন্ডি-পেশোয়ার রেললাইন বরাবর পাঞ্জাবের কেন্দ্রস্থলে অ্যাটক জেল অবস্থিত। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যানকে সড়কে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অ্যাটক জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় কারাগারের দিকে যাওয়ার সব সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। তারা রাস্তা ঘেরাও করে। এ ছাড়া কারাগারের চারপাশে পুলিশ ও এলিট ফোর্স মোতায়েন রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কারা কর্মকর্তা ডনকে বলেন, ইমরানকে কারাগারের একটি ভিভিআইপি সেলে রাখা হয়েছে। সেলটিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই, তবে ঘরের ভিতরে শুধু একটি পাখা, একটি বিছানা এবং একটি টয়লেট রয়েছে। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ১৯৯৯ সালে অ্যাটক ফোর্টে বন্দী হন। পরে তাকে সৌদি আরবে নির্বাসিত করা হয়।

অ্যাটক ফোর্ট এবং অ্যাটক জেল আলাদাভাবে অবস্থিত। একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব প্রায় ২০ কিমি। মুঘল সম্রাট আকবরের শাসনামলে ১৫৮১  থেকে ১৫৮৩ সালে অ্যাটক ফোর্ট নির্মিত হয়েছিল। ১৯০৫ থেকে ১৯০৬ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক অ্যাটক কারাগারটি নির্মিত হয়েছিল। কারাগারটি ৬৭ একর জমির উপর নির্মিত।

বিদ্রোহের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আটক করার জন্য ব্রিটিশ শাসকরা বেশিরভাগই অ্যাটক জেল ব্যবহার করত। এটি এখন পাকিস্তানের একটি উচ্চ নিরাপত্তা কারাগার হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে বিপজ্জনক বন্দীদের রাখা হয়।  অ্যাটক কারাগারটি কুখ্যাত। এখানে বন্দিদের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিও রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে অ্যাটক ফোর্টে রাখা হয়েছিল। যদিও  পরে তাকে সৌদি আরবে নির্বাসিত করা হয়।

ইমরান খান কারাগারে কেমন আছেন?

কারাগারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন যে ইমরান খান পাকিস্তানের ১৯৭৮ সালের কারা আইনের অধীনে ‘অভিযুক্ত আসামি’ হিসাবে যে সমস্ত সুবিধা পাওয়ার কথা তা তিনি পাবেন।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড ভোগ করছেন। ইমরানের আইনজীবী এবং রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) দাবি করেছে যে ইমরানকে অ্যাটক কারাগারে ‘বি-শ্রেণির’ সুবিধা দেওয়া হয়েছে  এবং কাউকে তার সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

পিটিআই চেয়ারম্যানের আইনী উপদেষ্টা নাঈম হায়দার পাঞ্জোতা বলেছেন যে কোন আইনজীবী বা স্থানীয়দের জেলের আশেপাশে জড়ো হতে দেওয়া হচ্ছে না।

রোববার ইমরানের আইনজীবীরা কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর ছাড়াও কাপড়, খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাদের ফিরিয়ে দেয় এবং সোমবার আবার আসতে বলে।

পাঞ্জোতা বলেন, ‘আমরা তাদের জানিয়েছিলাম, আমরা সেখানে গিয়েছিলাম ইমরানের পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ও আরও কিছু নথির স্বাক্ষর নিতে। বেশ কিছু আবেদন ও আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করার  প্রয়োজনে।’

কারাগারের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন যে ইমরান খান পাকিস্তানের  আইন অনুযায়ী বন্দিদের তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে- উচ্চতর, সাধারণ ও রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতে।

আরও জানতে

বি-শ্রেণির অধীনে, ইমরান তার পছন্দ অনুযায়ী বই, সংবাদপত্র, টেবিল, চেয়ার, ২১ ইঞ্চি টিভি, ম্যাট্রেস, জেলের খাবার এবং ব্যারাকের টয়লেট সুবিধা পাবেন।  কর্মকর্তা বলেন, কিন্তু তাকে বাইরে থেকে খাবার দেওয়া যাবে না।

একইভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে তার ঘরে আলোর জন্য একটি লণ্ঠন রাখা হয়েছে । এছাড়াও, লন্ড্রি এবং ইস্ত্রি করার সুবিধাও রয়েছে।

তিনি বলেন, শনিবার ইমরান খান যখন কারাগারে আসেন, তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। তিনি আরও বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সপ্তাহে একবার তার পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। কোনো বাড়তি সুবিধা পেতে হলে তাকে জেল সুপারের অনুমতি নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X