November 21, 2024
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনঃ বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতি

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনঃ বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতি

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনঃ বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতি

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনঃ বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতি

সোমবার রাতে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ফলাফল কেন্দ্র থেকে ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনের ফলাফল  বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর রিটার্নিং কর্মকর্তা মুনির হোসেন খান ঘোষণা দেন। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম পেয়েছেন ৫ হাজার ৬০৯ ভোট। সে হিসবে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনঃ বিগত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতি।

নির্বাচনী ফলাফলে বলা হয়েছে: যেখানে নির্বাচনী এলাকায় ভোটার সংখ্যা তিন লাখের বেশি (৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন) সেখানে মোট ভোট পড়েছে মাত্র ৩৭ হাজার ৪২০টি। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৩৮৩টি ভোট। মোট ১২৪টি কেন্দ্রে ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ এবং ২০ নং ওয়ার্ড এবং ঢাকা সেনানিবাস এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৭ নির্বাচনী এলাকা। ২০০৮ সালে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকার উল্লিখিত এলাকাগুলো আগে ঢাকা-৫ আসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। নতুন এ আসন সৃষ্টির পর তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রধান তিন প্রার্থী ছিলেন সাবেক তিন সেনা কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে প্রার্থী হন জাতীয় পার্টির তৎকালীন চেয়ারম্যান লে.জে. (অব.) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়ে বিএনপি নেতা প্রয়াত ব্রি. জে. (অব.) হান্নান শাহকে (৫৬ হাজার ২৬৭ ভোট) পরাজিত করেন।

নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন মে. জে. (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম। ওই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৬২ হাজার ১৪২ জন। ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৭২৭ জন, ভোটার উপস্থিতি ছিল ৭০ দশমিক ৭ শতাংশ।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়- যেখানে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৮ জন। ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ৮ হাজার ৬৮৭ জন। ভোটার উপস্থিতি ছিল ৬৬.৩৬ শতাংশ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠান ফারুক ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬১০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আন্দালিব রহমান পার্থ (৩৮ হাজার ৬৩৯ ভোট) । অর্থাৎ এবারের উপনির্বাচনের চেয়ে ৫ দশমিক ৭৭ গুণ বেশি ভোটার ওই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।

এর আগে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে এবং বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন বর্জনের প্রেক্ষাপটে এরশাদ তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) অজনপ্রিয় প্রার্থী এস এম আবুল কালাম আজাদ ৪৩ হাজার ৫৮৫ ভোট পেয়েছিলেন।  তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ হান্নান ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৬ ভোট। ২ লাখ ৯০ হাজার ২৭৮  ভোটারের মধ্যে ওই নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন ৫১ হাজার ৬৩১ জন।  ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৭.৭৯ শতাংশ। উপরোক্ত বিভিন্ন কারণে উল্লিখিত নির্বাচনে সাধারণ মানুষের কোনো আগ্রহ না থাকলেও এবারের উপনির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি ভোটার ওই নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।

সার্বিকভাবে দেখা যায়, ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনে যে কয়েকটি নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে এবারের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সবচেয়ে কম। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে শুরু করে সকল স্তরের নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত থাকার জন্য ভোটারদের বারবার অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু প্রতি ১০০ ভোটারের মধ্যে ১২ জনেরও কম (১১.৫১ শতাংশ) তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

আরও  খবর

অশালীন মন্তব্য করায়: সিইসিকে আইনি নোটিশ

বিশ্ববাসীর চোখ তিনটি নির্বাচনের দিকে

সোয়া তিন লাখ ভোটারের মধ্যে মাত্র  যে ৪৭ হাজার ভোট পড়েছে সেগুলো নিয়েও রয়েছে সন্দেহ এবং কারচুপির অভিযোগ। ভোটের দিন প্রথম আলো অনলাইনের প্রতিবেদনে (যেখানে না হয়: জাল ভোট দিয়ে আ.লীগ নেতা) বলেন, ‘গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নওকন প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত যে ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছিলেন, সেই ভোটকেন্দ্রে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত শুরু হয়। ভোটার উপস্থিতি ছিল ০.৬১ শতাংশ। বেলা সাড়ে ১২টায় তা দাঁড়ায় ৩ শতাংশে। দুপুর দুইটার পর নৌকা প্রতীক ব্যাজধারীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় দেখা যায়, ভোটের হার বেড়েছে ১০ শতাংশে।

সোমবার সকাল ১১টার দিকে বাংলাদেশের ১৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সংখ্যক ভোটে নির্বাচিত ক্ষমতাসীন দলের মোহাম্মদ এ আরাফাত মন্তব্য করেন, গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকার বাসিন্দারা দেরিতে ঘুম থেকে ওঠায় সকালে ভোটার সংখ্যা কম হতে পারে। তবে সাংবাদিকরা বলেন, ‘দিন শেষেও কোনো কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন দেখা যায়নি। সকাল সকাল মনে হচ্ছিল ভোটাররা আসবেন, ভোটাররা লাইন  ধরে  সিরিয়ালে ভোট দেবেন। কিন্তু সেভাবে ঘটেনি। দুপুরে মনে করা হয়েছিল লাঞ্চের পর ভোটাররা আসবেন। সেটাও হয়নি। শেষ বিকেলে ভোটারদের প্রত্যাশা থাকলেও ফলাফল শূন্য।

নৌকার ব্যাজধারী নেতা-কর্মীরা এ কেন্দ্রে প্রবেশের কারণে সেখানে অন্য চারটি কেন্দ্রের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে-গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস কবির বলেন আমার  হাসি পায়, এমনটা কোথাও হয় না, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও। ভোট দেওয়ার পর কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার সময় একজন বয়স্ক ভোটার  বলেন, ভেতরে সবাই নৌকার লোক। তারা যা করতে চায় তাই করছে। নৌকা ব্যাজধারীদের জাল ভোট দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বাবুল চন্দ্র সাহা  বলেন, আমি খেয়াল করিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X