৫ লাখের বেশি অভিবাসীর বৈধতা বাতিল করলেন ট্রাম্প
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে ৫,৩০,০০০ অভিবাসীর অস্থায়ী আইনি মর্যাদা বাতিল করতে চলেছে। শুক্রবার (২১ মার্চ) প্রকাশিত ফেডারেল রেজিস্টারের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, তালিকায় কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত ২৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। অভিবাসীদের উপর ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপের এটি আরেকটি ঘটনা হতে চলেছে।
অস্থায়ী আইনি বাসস্থান পাওয়া অভিবাসীরা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের প্যারোল কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। সেই কর্মসূচির ফলে, অভিবাসীরা বিমানে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারতেন এবং মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দুই বছর থাকার অনুমতি পেতেন।
এদিকে, ২০ জানুয়ারী হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে সকলকে সতর্ক করে রেখেছেন। তিনি বাইডেনের আমলের প্যারোল কর্মসূচি বাতিল করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশও জারি করেছেন। তিনি দাবি করেন যে, সেই কর্মসূচির মাধ্যমে অভিবাসীদের আগমনে ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
এর আগে, ৬ মার্চ এক ভাষণে ট্রাম্প বলেছিলেন যে, তিনি শীঘ্রই প্রায় ২,৪০,০০০ ইউক্রেনীয় অভিবাসীর প্যারোল স্ট্যাটাস বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। বাইডেন প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী এই অভিবাসীদের প্যারোল স্ট্যাটাস দিয়েছে।
বাইডেন প্রশাসন প্রথম ২০২২ সালে ভেনেজুয়েলারদের জন্য এই প্রোগ্রামটি চালু করে। তারপর, ২০২৩ সালে, এর পরিধি বাড়িয়ে কিউবা, হাইতি এবং নিকারাগুয়া থেকে আসা অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে, যুক্তরাষ্ট্রে ৫,০০,০০০ অভিবাসী আইনি সুরক্ষা হারাতে পারেন এবং নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তবে, এই প্যারোল সুবিধা পাওয়া অভিবাসীদের মধ্যে কতজন বর্তমানে অন্য কোনও আইনি মর্যাদা পেয়েছেন তা স্পষ্ট নয়।
ইউএস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানিয়েছে যে, প্যারোল সুবিধা বাতিল করার ফলে দ্রুত নির্বাসন প্রক্রিয়ায় অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হবে। ট্রাম্প প্রশাসন জানুয়ারিতে এই আইন চালু করে। এর আওতায়, দুই বছরেরও কম সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অভিবাসীদের দ্রুত নির্বাসন দেওয়া হতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানিয়েছে যে, তারা কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ৫০০,০০০ এরও বেশি লোকের “অস্থায়ী অভিবাসী মর্যাদা” বাতিল করবে।
২৪শে এপ্রিল তাদের আইনি অবস্থান এবং নির্বাসন থেকে সুরক্ষা বাতিল হওয়ার আগে তাদের যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে বলা হচ্ছে।
৫৩০,০০০ ল্যাটিন আমেরিকান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন পরিচালিত “স্পন্সরশিপ” প্রোগ্রামের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, যা CHNV নামে পরিচিত। এই প্রোগ্রামের অধীনে, তাদের বৈধ অভিবাসী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প জানুয়ারিতে তার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রোগ্রামটি বাতিল করেন।
“অস্থায়ী সুরক্ষা”-এর অধীনে থাকা এই অভিবাসীদের মধ্যে কতজন ইতিমধ্যেই স্থায়ী অভিবাসন বা অন্য কোনও মর্যাদা পেয়েছেন যা তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকার অনুমতি দেয় তা কিন্তু স্পষ্ট নয়।
ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২২ সালে ভেনেজুয়েলার জন্য প্রথম CHNV প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন এবং পরে আরও দেশ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সম্প্রসারিত করেছিলেন।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে ওইসব দেশের কিছু নাগরিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যদি তাদের আমেরিকান স্পন্সর থাকে, তাহলে “অস্থায়ী অভিবাসী মর্যাদা”-এর আড়ালে দুই বছর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারতেন।
বাইডেন প্রশাসন যুক্তি দিয়েছিল যে এই কর্মসূচি অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের প্রবাহ কমাবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের জন্য আরও বেশি নিরাপত্তা তল্লাশির ব্যবস্থা করবে।
শুক্রবার, ইউএস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ পূর্ববর্তী প্রশাসনের যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে CHNV তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে, CHNV কর্মসূচির আওতাধীন কিছু ব্যক্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেওয়া হতে পারে, তবে প্রতিটি আবেদন পর্যালোচনা করা হবে এবং কেস-বাই-কেস ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে ট্রাম্প প্রোগ্রাম বাতিল করার আগে, হাইতি থেকে ২১৩০০০, ভেনেজুয়েলা থেকে ১২০৭০০, কিউবা থেকে ১১০৯০০, এবং নিকারাগুয়া থেকে ৯৩০০০ জন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন, বিবিসি জানিয়েছে। রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসা প্রায় ২,৪০,০০০ ইউক্রেনীয়ের “অস্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা” বাতিল করার কথা বিবেচনা করছেন প্রেসিডেন্ট।