চাঁদে গ্যাস লাইন স্থাপন করবে নাসা!
নাসা:
“১৯৬৯ সালে প্রথম চন্দ্র বিজয়ী দুনিয়ার সর্ব উন্নত মহাকাশ সংস্থা নাসা,ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NASA) হল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের একটি স্বাধীন সংস্থা যা অ্যারোনটিক্স এবং মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণা পরিচালনা করে। ১৯৫৮ সালে, ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি ফর অ্যারোনটিক্স (NACA) প্রতিস্থাপনের জন্য একটি নতুন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা গঠিত হয়। এর সদর দপ্তর ওয়াশিংটন, ডি.সি।”
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার। পৃথিবীর আকারের এক-চতুর্থাংশ এই উপগ্রহের প্রতি মানুষের অসীম আগ্রহ। সেই আগ্রহই সকল চাঁদকেন্দ্রিক গবেষণা এবং অভিযানের পিছনে চালিকা শক্তি।
পৃথিবীর মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চাঁদ নিয়ে গবেষণা করে আসছে। আমেরিকা প্রথম মহাকাশচারী চাঁদে পাঠিয়েছিল। আগামী দিনে, মানুষ নাসার সহায়তায় আবার চাঁদে পা রাখার পরিকল্পনা করছে।
চাঁদের উপর গবেষণা যতদূর এগিয়েছে, চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা এবং গবেষণা চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি, চীনের চাং’ই-৬ চাঁদ থেকে মাটি এবং পাথরের নমুনা পৃথিবীতে আনতে গিয়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই চাঁদের মাটিতে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা চলছে। শুধু গাছ নয়, মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ঘর তৈরি এবং ট্রেন চালানোর পরিকল্পনাও করেছে।
তবে, নাসা সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্যতিক্রম পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে যা বৈজ্ঞানিক মহলে সাড়া ফেলেছে। তারা জানিয়েছে যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে একটি গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। সংস্থাটি এমন একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
জানা গেছে যে, এই গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের কাজ সম্পূর্ণরূপে রোবট দ্বারা সম্পন্ন করা হবে। পাইপলাইনের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে যাতে ভবিষ্যতে চন্দ্র অভিযানের সময় অক্সিজেন বহন করতে না হয়। বরং, পাইপলাইনের মাধ্যমে সেখানে নির্মিত বেসে সরাসরি গ্যাস সরবরাহ করা যায় এমন ব্যবস্থা করা উচিত।
চাঁদে গ্যাস লাইন স্থাপনের এই প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে লুনার সাউথ পোল অক্সিজেন পাইপলাইন (L-SPOP)। এই প্রকল্পটি চন্দ্রের মাটিতে গবেষণায় এক বৈপ্লবিক বিপ্লব আনতে পারে। আর্টেমিস মিশনের আগে এই পরিকল্পনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। আর্টেমিস প্রোগ্রামের লক্ষ্য হল চাঁদে স্থায়ীভাবে মানুষের উপস্থিতি স্থাপন করা। বিজ্ঞানীদের মতে, এই পরিকল্পনা পৃথিবী থেকে অক্সিজেন বহনের ঝুঁকিও কমাবে। এতে খরচও সাশ্রয় হবে। আর্টেমিস মিশনের আওতায় চাঁদে একটি স্থায়ী বেস তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। যাতে বিজ্ঞানীরা সেখান থেকে তাদের গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন।
সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য, গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, চাঁদে অক্সিজেন পাইপলাইন স্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাসা জানিয়েছে যে, নির্মাণ কাজটি রোবট দ্বারা সম্পন্ন করা হবে। যদি কোন ত্রুটিও পাওয়া যায়, তাহলে রোবটের সাহায্যে এটি মেরামত করা হবে। আপাতত, লক্ষ্য হল প্রতি ঘন্টায় ২ কেজি অক্সিজেন সরবরাহ করা। দীর্ঘমেয়াদী মিশনে যতটা সম্ভব কম শক্তি ব্যবহার করা হবে। কমপক্ষে ১০ বছরের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। নাসার লক্ষ্য হল চন্দ্র অভিযানে পৃথিবীর উপর নির্ভরতা যতটা সম্ভব কমানো।
এই গ্যাস পাইপলাইনটি সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদি চন্দ্রের মাটিতে এই প্রকল্প সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য কোথাও একই পদ্ধতি গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
নাসা ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করেছে। চন্দ্রের মাটির নিচ থেকে দক্ষিণ মেরুতে জমে থাকা বরফের স্তর থেকে অক্সিজেন বের করা হবে। সংস্থাটি আর্টেমিস মিশনের আগে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে চন্দ্রের মাটি থেকে অক্সিজেন বের করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। ২০২৬ সালে আর্টেমিস মিশনে মহাকাশচারীদের জন্য এই প্রকল্পটি সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নাসার পরিকল্পনা অনুসারে, নিষ্কাশিত অক্সিজেন সংকুচিত ট্যাঙ্কে পূরণ করা হবে। এটি তরল অবস্থায় সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু চাঁদে সেই ট্যাঙ্ক বহন করা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু এটি ব্যয়বহুলও বটে।
আবার, অক্সিজেন তরলীকরণ কেন্দ্র থেকে যেখানে অক্সিজেন উত্তোলন করা হবে এবং মহাকাশচারীদের ঘাঁটি থেকে দূরত্বও বেশ অনেক। তাই, আপাতত, পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখান থেকে নিকটবর্তী একটি কারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ করা হবে। জানা গেছে যে, পাইপটি চাঁদের মাটিতে পাওয়া অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হবে। কারণ দক্ষিণ মেরুর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কেবল সেখানে থাকা অ্যালুমিনিয়ামই দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারে। সেই অ্যালুমিনিয়ামটি যে পদ্ধতিতে অক্সিজেন উত্তোলন করা হবে তার জন্যও সহায়ক। এভাবে চন্দ্র জয়ের অগ্রসর একটি পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে পৃথিবীর সবচাইতে উন্নত এবং শক্তিশালী মহাকাশ সংস্থা নাসা।