গ্রিনল্যান্ড একদিন যুক্তরাষ্ট্রেরই হবে নিশ্চিত: ট্রাম্প
গ্রিনল্যান্ড ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপে যাওয়ার সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম পথ। যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে বিরল মৃত্তিকা, ইউরেনিয়াম এবং লৌহ আকরিকের উপরও তার দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে তারা শীঘ্রই গ্রিনল্যান্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ পাবে। শনিবার লাস ভেগাস থেকে ফ্লোরিডা যাওয়ার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এই কথা বলেন। এর আগে ট্রাম্প গত বছরের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প আবারও ডেনমার্কের এই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমরা গ্রিনল্যান্ড পেতে যাচ্ছি। সেখানকার প্রায় ৫৭,০০০ বাসিন্দাও আমাদের সাথে থাকতে চান।”
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন গত সপ্তাহে টেলিফোনে কথোপকথনে স্পষ্ট করে বলেন যে, “গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।”
ট্রাম্প ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে, গ্রিনল্যান্ডের উপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য “একেবারে অপরিহার্য”।
ট্রাম্প বলেন, “আমি জানি না ডেনমার্ক কী চায়।” কিন্তু গ্রিনল্যান্ড বিক্রির অনুমোদন না দেওয়া বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য খুবই অপ্রীতিকর হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যদি তারা স্বাধীনতার কথা বলে, তাহলে আমি বলবো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যারা সেই স্বাধীনতা প্রদান করতে পারে।”
এদিকে, গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুট এগেদে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ,“গ্রিনল্যান্ডের জমি গ্রিনল্যান্ডের ব্যবসা।” তবে তিনি প্রতিরক্ষা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসেন এই মাসের শুরুতে বলেছিলেন যে,“গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীদের।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এর ভবিষ্যৎ কেবল স্থানীয় জনগণের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।”
গ্রিনল্যান্ড এখনও ডেনমার্ক রাজ্যের অংশ, তবে এটি স্বায়ত্তশাসিত। তবে, গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতার বিষয়ে ঐক্যমত রয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় যে, ভবিষ্যতে গ্রিনল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।
তবে, ট্রাম্পের দাবির বিপরীতে, অনেক গ্রিনল্যান্ডবাসী তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কাপিসিলিট এলাকার একজন জেলে বলেছেন, “ট্রাম্প এখানে আসতে পারেন, কিন্তু গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীদের।”
স্থানীয় গির্জার একজন যাজক, ক্যালিয়ার রিঙ্গস্টেড, ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার ইচ্ছাকে “অগ্রহণযোগ্য” বলে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, “গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।”
জানুয়ারীর শুরুতে মার-এ-লাগোতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে, সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি কি বিশ্বকে আশ্বস্ত করবেন যে, পানামা খাল এবং গ্রিনল্যান্ড দখলের জন্য সামরিক বা অর্থনৈতিক চাপ ব্যবহার করা হবে না। ট্রাম্প উত্তর দিয়েছিলেন, “না, আমি এর গ্যারান্টি দিতে পারি না। তবে আমি এতটুকুই বলতে পারি: (পানামা খাল এবং গ্রিনল্যান্ড) আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়।”