যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়লো দুই দেশ
গেলো বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে বেশ কয়েকটি রুশ ও ইরানি সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে যে, তারা ইরানের অভিজাত রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর একটি সহায়ক সংস্থা এবং রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার (জিআরইউ) সাথে যুক্ত একটি সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দুটি সংস্থাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের সময় সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা বপন এবং আমেরিকান ভোটারদের প্রভাবিত করার” চেষ্টা করছিল।
ব্র্যাডলি স্মিথ, মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সন্ত্রাসবাদ ও আর্থিক গোয়েন্দা বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত আন্ডার সেক্রেটারি বলেছেন: “ইরান ও রাশিয়ার সরকার আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছে এবং বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার মাধ্যমে আমেরিকান জনগণকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে । প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক অর্থাৎ যারা আমাদের গণতন্ত্রকে দুর্বল করতে চায়।”
এদিকে, মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে, “রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি এবং করবে না।”
দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যেমন বারবার জোর দিয়েছেন, আমরা আমেরিকান জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করি। একটি ‘রাশিয়ান ষড়যন্ত্রের’ কোনো পরামর্শ একটি বিদ্বেষপূর্ণ অপবাদ; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংগ্রামে ব্যবহার করার জন্য উদ্ভাবিত।” তবে, নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ইরানি মিশন তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধের জবাব দেয়নি।
রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো জয়ী হয়েছেন। জো বাইডেনের কাছে হোয়াইট হাউসের দৌড়ে হেরে যাওয়ার চার বছর পর ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় ফিরে আসেন।
মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বলেছে যে, কগনিটিভ ডিজাইন প্রোডাকশন সেন্টার নামে একটি কোম্পানি ইরানের বিপ্লবী গার্ড কর্পসের পক্ষে ২০২৩ সাল থেকে মার্কিন ভোটারদের মধ্যে উত্তেজনা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্র মস্কো ভিত্তিক সেন্টার ফর জিওপলিটিক্যাল এক্সপার্টাইজ (সিজিই) মার্কিন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো এবং ডিপফেক ভিডিও তৈরির অভিযোগ করেছে।
মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে যে সিজিই ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সম্পর্কে ভিত্তিহীন অভিযোগ করার জন্য একটি ভিডিও সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছে। তবে ভিডিওটি কোন প্রার্থীকে লক্ষ্য করে তা বলা হয়নি।
বিবৃতিতে, ট্রেজারি বিভাগ বলেছে যে, জিআরইউ-এর নির্দেশনা এবং অর্থায়নের অধীনে, সিজিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সরঞ্জাম ব্যবহার করে কিছু ওয়েবসাইট তৈরি করে মিথ্যা তথ্য ছড়ায়। এই সংবাদ-ভিত্তিক ওয়েবসাইটগুলিকে আসল ওয়েবসাইটের মতো দেখতে ডিজাইন করা হয়েছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক সার্ভারের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর জন্য অন্তত ১০০ টি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছিল এবং ব্যবহার করা হয়েছিল। ওয়াশিংটনও সিজিই-এর পরিচালকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অভিযোগ ও নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। ওয়াশিংটনে রাশিয়ার দূতাবাস এক বিবৃতিতে বলেছে যে, ‘রাশিয়ান ষড়যন্ত্রের’ সব মার্কিন অভিযোগই বিদ্বেষপূর্ণ অপবাদ। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে লাভবান হওয়ার জন্য এই ধরনের অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে।”
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অভিযোগ বা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইরানের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে রাশিয়া ও ইরানকে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছে।
