ট্রাম্পের মন্তব্যের পর গ্রিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা জোরদার করছে ডেনমার্ক
এই সপ্তাহে, নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন যে, বিশাল গ্রিনল্যান্ড দ্বীপের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘বড়মাপের প্রয়োজন’। প্রেসিডেন্ট-ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করার পর ডেনিশ সরকার তার এই আর্কটিক ভূখণ্ডটির জন্য প্রতিরক্ষা বাজেটে বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।
মঙ্গলবার ডেনিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী টলস্টয় লোন পাউসেন বলেছেন যে, প্যাকেজটি ক্রোনারে ‘এক বিলিয়নের বেশি’। ডলারে, এটি কমপক্ষে ১৫০ কোটি।
তিনি ঘোষণার সময়কে এটাকে ‘ভাগ্যের পরিহাস’ বলে বর্ণনা করেছেন। সোমবার, ট্রাম্প বলেছিলেন যে, বিশাল দ্বীপের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ‘পরম প্রয়োজন’।
১৮৬৭ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড ক্রয় করার চেষ্টা বা বিবেচনা করেছে। গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের অংশ। এটি পিটুফিক মহাকাশ ঘাঁটির আবাসস্থল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি। ১৯৫১ সালে, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রটি ডেনমার্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির অধীনে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত হয়।
গ্রিনল্যান্ড মূলত আর্কটিক অংশ। গ্রীনল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন সোনা, রূপা, তামা এবং ইউরেনিয়াম রয়েছে এবং এই অঞ্চলের জলে তেলের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। এসব সম্পদের জন্য বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, রাশিয়া গ্রীনল্যান্ডের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন পর্যন্ত এলাকা দাবি করার চেষ্টা করেছে।
ডেনিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী টলস্টয় লোন পাউসেন বলেন তাদের প্রতিরক্ষা প্যাকেজটিতে দুটি নতুন পরিদর্শন জাহাজ, দুটি নতুন দূরপাল্লার ড্রোন এবং দুটি অতিরিক্ত কুকুর স্লেজ দল অন্তর্ভুক্ত থাকবে, । এটি গ্রীনল্যান্ডের রাজধানী নুউকের আর্কটিক কমান্ডে কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করবে এবং F-35 সুপারসনিক ফাইটার জেটকে উড্ডয়নের অনুমতি দেওয়ার জন্য দ্বীপের তিনটি বেসামরিক বিমানবন্দরের একটিকে আপগ্রেড করবে।
তিনি বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে আর্কটিকেতে যথেষ্ট বিনিয়োগ করিনি, এখন আমরা একটি শক্তিশালী উপস্থিতির পরিকল্পনা করছি,” ।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্যাকেজের সঠিক পরিমাণ প্রকাশ করেননি, তবে ডেনিশ মিডিয়া অনুমান করেছে যে এটি প্রায় ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ক্রোনার হতে পারে।
সোমবার ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ সমগ্র বিশ্বের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য অপরিহার্য।”
ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউট ইল বলেন, আমরা বিক্রির জন্য নই।
তিনি তখন বলেন যে, গ্রীনল্যান্ডকে সহযোগিতা ও বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত রাখা উচিত, বিশেষ করে প্রতিবেশীদের সাথে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, গ্রিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করার পরিকল্পনাটি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার অধীনে রয়েছে এবং এটিকে ট্রাম্পের মন্তব্যের সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসাবে দেখা উচিত নয়।
তারা বলেছে যে, ডেনমার্ক গ্রীনল্যান্ডে তার সামরিক সক্ষমতা গড়ে তুলতে ধীর গতিতে কাজ করেছে, কিন্তু দেশটি যদি চীন এবং রাশিয়াকে ভূখণ্ডের চারপাশে জলসীমায় দখল করা থেকে আটকাতে না পারে, তাহলে এই অঞ্চলে আরও মার্কিন নিয়ন্ত্রণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা বাড়বে।
ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা একাডেমিতে কর্মরত সেনা মেজর স্টিন কিয়েরগার্ড পরামর্শ দিয়েছেন যে, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য হতে পারে ডেনমার্ককে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এই ধারণাটি উত্থাপন করেছিলেন, তবে ডেনিশ কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন যে গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ড কেনার কথা বলেছিলেন। তার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে সে সময় ডেনিশ নেতারা।
শুধু ট্রাম্পই নয়, গ্রিনল্যান্ড কেনার ধারণা এর আগে উঠেছিল ১৮৬০-এর দশকে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসনের প্রশাসনের সময়।