অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াতে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করবেন ট্রাম্প: অভিবাসী ছাড়া আমেরিকা কেমন হবে?
অভিবাসী না থাকলে আমেরিকার জনসংখ্যা অনেক কম হবে। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। সেই তথ্য বলছে যে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী (অভিবাসসী) চার কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে, যা মোট মার্কিন জনসংখ্যার ১৪.৩ শতাংশ।
এই তালিকায় প্রথম মেক্সিকো থেকে আসা মানুষ. সেখান থেকে ১৬ মিলিয়ন মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে। অন্যদিকে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ২.৮ মিলিয়ন এবং চীন থেকে ২.৫ মিলিয়ন লোক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে জন্মহার কমে যাওয়ায় দেশটির জনসংখ্যা বাড়েনি।
এর মানে হল, অন্যান্য অনেক দেশের মতো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বার্ধক্য জনসংখ্যার সমস্যা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের সাথে, কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা সঙ্কুচিত হচ্ছে।
কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ২০৪০ সালের মধ্যে, মৃত্যুর সংখ্যা জন্মের চেয়ে বেশি হবে। অভিবাসন তখন জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে চালিত করবে। তাই যৌক্তিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বা অন্য রাষ্ট্রের মানুষ প্রয়োজন।
কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সবসময় তার বিরুদ্ধে এবং সেটার বাস্তবায়ন করতে চলেছেন কঠোর হস্তে
তারই প্রেক্ষিতে…
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একের পর এক খড়্গ পড়ছে অবৈধ অভিবাসীদের ওপর। একের পর এক দুঃসংবাদ শুনতে পাচ্ছেন তারা। এবার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নের জন্য তিনি সামরিক বাহিনী ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। এবার ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি অবৈধ অভিবাসন ইস্যুতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন এবং সামরিক বাহিনী ব্যবহার করবেন। স্থানীয় সময় সোমবার ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন ট্রাম্প। তিনি তার প্রথম মেয়াদে সীমান্ত ক্রসিং প্রতিরোধে মেক্সিকান সীমান্তে একটি প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেন। এই নির্বাচনে তার অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল যুক্তরাষ্ট্রকে অবৈধ অভিবাসীদের হাত থেকে মুক্ত করা।
একজন রক্ষণশীল অধিকার কর্মী ট্রাম্পের মালিকানাধীন একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন যে, বাইডেন অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের প্রকল্পে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। ট্রাম্প এটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা এবং সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করার’ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পরে ট্রাম্প পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, এটা সত্য। রিপাবলিকান নেতা এর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় এ কথা বলেছিলেন।
মার্কিন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করছে। যদি ট্রাম্প পরিকল্পনা অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কার করা শুরু করেন, তাহলে তা সরাসরি প্রায় দুই কোটি পরিবারকে প্রভাবিত করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামরিক বাহিনী দিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের বহিষ্কারের পরিকল্পনা করেছেন। সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি তিনি অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অন্তত দুই কোটি পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প শপথ নেবেন। এর আগে তিনি নতুন প্রশাসনের আয়োজনে মনোযোগ দিয়েছেন। তিনি ইমিগ্রেশন কট্টরপন্থী টম হোমনকে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও, ট্রাম্প সোমবার তার পরিবহন সচিব হিসাবে উইসকনসিনের প্রাক্তন প্রতিনিধি এবং ফক্স বিজনেস নিউজ হোস্ট শন ডাফিকে মনোনীত করেছেন।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, পরিবহন সচিব হিসাবে শন ডাফি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান, অটোমোবাইল, রেল, ট্রানজিট এবং অন্যান্য পরিবহন-সম্পর্কিত বিষয়গুলির তত্ত্বাবধানের জন্য দায়ী থাকবেন। এছাড়াও, ডফি ট্রাম্প সরকারের সমস্ত প্রধান অবকাঠামো নির্মাণ, আপডেট এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী থাকবেন।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর শন ডাফি সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ আমেরিকান জনগণের উদ্দেশে একটি পোস্টে লিখেছেন, “আমি আপনাকে পরিবহন খাতের স্বর্ণযুগে নিয়ে যেতে খুব উত্তেজিত।” তবে বিশ্লেষকদের মতে, ডাফির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর উচ্চ হার কমানো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন এবং সেনাবাহিনী ব্যবহার করবেন।
ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে ট্রাম্প এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি মূলত রক্ষণশীল জুডিশিয়াল ওয়াচের সভাপতি টম ফিটনের ৮ নভেম্বর একটি পোস্টের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন। টম ফিটন সেই পোস্টে লিখেছেন যে, পরবর্তী প্রশাসন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যাপকভাবে নথিভুক্ত অভিবাসীদের নির্বাসনে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করতে পারে। ট্রাম্প তার পোস্টের জবাবে লিখেছিলেন, “সত্য”।
এর আগে, তার নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরে, ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের বিতাড়নের কাজ শুরু করবেন। এছাড়া নির্বাচনের পর তার প্রথম সাক্ষাতকারে ট্রাম্প এনবিসি নিউজকে বলেন, গণ বিতাড়নের কোনো বিকল্প নেই।