প্রোটিন রহস্যের সমাধান করে রসায়নে নোবেল পেলেন গুগলের দুই বিজ্ঞানীসহ ৩ জন
এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ডেভিড বেকার, ডেমিস হ্যাসাবিস এবং জন জাম্পার। ডেভিড বেকার মার্কিন নাগরিক, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার যুক্তরাজ্যের নাগরিক। ডেভিড বেকার যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ডেমিস হাসাবিস ইউকে থেকে এসেছেন, গুগলের ডিপমাইন্ড প্রকল্পে কাজ করছেন এবং হ্যাসাবিসের মতো জন জাম্পারও একজন গুগল ডিপমাইন্ড গবেষক।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এই নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে।
রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি জানিয়েছে, ‘কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন’-এর জন্য ডেভিড বেকারকে এবং ‘প্রোটিন স্ট্রাকচার প্রেডিকশন’-এর জন্য যৌথভাবে ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পারকে রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
প্রোটিন গবেষণার জন্য এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমেরিকান বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইনের জন্য পুরস্কারের অর্ধেক পেয়েছেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ডেমিস হাসাবিস এবং আমেরিকান বিজ্ঞানী জন এম জাম্পার প্রোটিনের গঠন অনুমানের জন্য বাকি অর্ধেক পেয়েছেন।
প্রোটিন গবেষণায় রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কারণ কী? আসলে চারপাশের জীবনের বৈচিত্র্যের পেছনে প্রোটিনই প্রধান কারণ। এগুলোকে জীবনের বিল্ডিং ব্লক বলা যেতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা তাদের ‘জীবনের মৌলিক রাসায়নিক সরঞ্জাম’ বলতে পছন্দ করেন। এই প্রোটিনই জীবনের ভিত্তি রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। প্রোটিন হরমোন, অ্যান্টিবডি এবং বিভিন্ন অঙ্গ বা টিস্যুর গঠনগত একক হিসেবেও কাজ করে। এই বছরের নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানীরা সেই প্রোটিনের গঠনের পিছনে কোডটি ক্র্যাক করেছেন। সহজ করে বলতে গেলে, তারা প্রোটিন হ্যাক করেছে!
আসুন পরিষ্কার করা যাক. যেকোনো প্রোটিন সাধারণত ২০ টি ভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিডের সমন্বয়ে গঠিত হয়। অর্থাৎ, এই অ্যামিনো অ্যাসিডগুলিকে জীবনের মৌলিক বিল্ডিং ব্লক বলা যেতে পারে। অ্যামিনো অ্যাসিড একত্রিত হয়ে প্রোটিন গঠন করে এবং তারা সমস্ত জৈবিক রাসায়নিক বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
১৬ শতকের বিজ্ঞানীরা প্রোটিনের এই গুরুত্ব সম্পর্কে জানতেন। জীবনের কাঠামোগত একক হল প্রোটিন। কিন্তু ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত এই বিবরণগুলি বোঝার প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এর আগে, বিজ্ঞানীরা প্রোটিন বিশ্লেষণ করার উপায় খুঁজে পাননি। সে সময় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক জন কেন্ড্রু এবং ম্যাক্স পেরুৎজ এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোটিনের প্রথম ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করেন। এই জন্য, তারা ১৯৬২ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়।
গবেষকরা তখন প্রায় ২০০,০০০প্রোটিনের ছবি তৈরি করতে এক্স-রে ক্রিস্টালোগ্রাফি ব্যবহার করেন। এটাই এ বছরের নোবেল পুরস্কারের ভিত্তি। এক সময় মানুষ মনে করত প্রকৃতিতে এমন প্রোটিন তৈরি করা সম্ভব নয়। ডেভিড বেকার সেই ধারণাটি বদলে দেন।