জেনারেল আজিজের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, জাতিকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়ঃ মির্জা ফখরুল
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার খবরে দেশে ও দেশের বাইরে কিছুটা হলেও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নিজের ঘর নিজে সামলাতে না পারলে অন্য কেউ সামলাবে না। নিজের শক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে। তাদের (সরকার) পরাজিত করতে হবে। আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞায় অনেকেই খুশি হবেন। আমি মনে করি এটা বিভ্রান্তিকর। আমরা সব সময় বিভ্রান্ত হয়েছি। র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তাতে কি তাদের ভয়ংকর যাত্রা বন্ধ হয়েছে? হয়নি। তিনি বলেন জেনারেল আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞায় খুশি হওয়ার কিছু নেই:
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা (একাংশ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাগপার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ফখরুল বলেন, দুর্নীতির কথা আমরা হাজার বার বলেছি। বলেছে সারা বিশ্ব। তারা (আওয়ামী লীগ) অস্বীকার করেছে। এখন খবর এসেছে, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার কারণ দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করা এবং জনগণের আস্থাকে ক্ষুণ্ন করা। এটাই আমরা বলার চেষ্টা করেছি।
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা রাষ্ট্রযন্ত্র, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করেছেন। সৃষ্টি করেছেন ভয়ের রাজত্ব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, তরুণরা আজ কোথায়? দেশ ধ্বংস হচ্ছে, তাদের মধ্যে কি কোনো অনুভূতি নেই? মন কি নাড়া দেয় না? দেশ তাদের, ভবিষ্যত তাদের।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারকে উৎখাতের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, আমরা কেন উৎখাত করতে যাব? ভোটের অধিকার চেয়েছি , ভোটের মাধ্যমে তাদের পরাজিত করতে চেয়েছি । প্রয়োজনে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি।
মির্জা ফখরুল জাগপা নেতা শফিউল আলম প্রধানকে স্মরণ করে বলেন, এই দুঃশাসনের সময় তাকে প্রয়োজন ছিল। সমমনা জোটের সঙ্গে কাজ চলছে। ঐক্য আরও বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (বাংলাদেশ সময়) ভোরে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে ওয়াশিংটন থেকে এ খবর আসে। প্রকাশিত বিবৃতিতে আজিজ আহমেদকে নিষিদ্ধ করা হয়। ফলস্বরূপ, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে আজিজ আহমেদ বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে তার ভাইকে সহায়তা করেছিলেন তাই তিনি দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন এবং তিনি তার ভাইকে অন্যায়ভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতেও কাজ করেছিলেন। সামরিক বাহিনীতে চুক্তিবদ্ধ হন এবং সরকারি নিয়োগের জন্য ঘুষ গ্রহণ করেন।
তবে সাবেক সেনাপ্রধান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে তা আল-জাজিরাসহ দুটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমি যে অভিযোগগুলোর জবাব দিয়েছি, সেসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। আগে “আমি এর আগেও বিস্তারিত বলেছি।” “আমার বিরুদ্ধে কোন প্রমাণ নেই।”
আজিজ আহমেদ ২৫ জুন, ২০১৮ এ সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি ২৩ জুন, ২০২১ পর্যন্ত সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন
এখানে দুর্নীতি এখন সাধারণ ব্যাপার:
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা একটি বার্তা যে, যারা দুর্নীতি করে, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে, পরিচয় বা অবস্থান নির্বিশেষে তারা আইনের আওতায় এবং জাতীয়ভাবে জবাবদিহি করতে হবে এবং তাদের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রতকর ঘটনা, এবং এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় এখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হোক, রাজনৈতিক পদে হোক, শাসন ব্যবস্থায়, ক্ষমতার জোরে দুর্নীতি করা, জনগণের অধিকার হরণ করা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে,” তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র একটি অবস্থান গ্রহণ করেছে তাদের দিক থেকে৷ কিন্তু যার বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নিয়েছে তার অবস্থান বা পদ পদবি বিবেচনায় না নিয়ে দেশের ভেতর থেকেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার৷ তার সাথে যারা আছেন তাদের চিহ্নিত করা একটি চ্যালেঞ্জ এবং রাজনৈতিকভাবেও এটি সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের মতো প্রমাণসহ এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।’ একজন প্রাক্তন সেনাপ্রধানের বিষয়ে তাদের অবস্থান অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিব্রতকর।
আরও পড়তে
সাবেক সেনা প্রধান আজিজ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি