যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থীদের ওপর ইসরায়েলপন্থীদের হামলা
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, লস এঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) এর ক্যাম্পাসে একটি ফিলিস্তিনিপন্থী শিবির সহিংস ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। সেখানে ইসরায়েলপন্থী বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। এরপর দেশটির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
অনলাইনে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে মুখোশধারী পাল্টা প্রতিবাদকারীরা ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। তারা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনিপন্থীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণ করছে এবং ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে।
ইউসিএলএর ভাইস-চ্যান্সেলর মেরি ওসাকো ঘটনাটিকে ‘ভয়ংকর সহিংসতা’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাতে ফিলিস্তিনিপন্থী শিবিরে সহিংসতার ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ডাকা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেখানে সমাবেশকে অবৈধ ঘোষণা করার পর ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
হামলার পর ফিলিস্তিনিপন্থী এক শিক্ষার্থী বলেন, সহিংসতা সম্পূর্ণ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ইসরায়েলপন্থীরা সহিংসতা শুরু করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্র বলেন, “তারা প্রতি রাতে ইহুদিবাদী আগ্রাসনের মুখোমুখি হচ্ছে। ভাগ্যক্রমে আমি শারীরিকভাবে নিরাপদ, কিন্তু আমার অনেক সহপাঠী নিরাপদ নেই।’
ক্যাম্পাসের একজন প্রতিবেদক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন যে ইউসিএলএ-তে সহিংসতার সময় টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছিল। ডেইলি ব্রুইনের ডিলান উইনওয়ার্ডের মতে, ঘটনাটি কভার করার সময় ক্যাম্পাসের এক সংবাদপত্রের প্রতিবেদক টিয়ার-গ্যাসের শিকার হন।
তিনি বলেন, স্থানীয় সময় রাত ১০টা থেকে ইসরায়েলপন্থী পাল্টা প্রতিবাদকারীরা সেখানে হাজির হচ্ছে। তারা পটকা, পানির বোতল ও অন্যান্য জিনিস ছুড়ে মারে।
এদিকে, অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান বিক্ষোভ জোরদার হচ্ছে। গণগ্রেফতার এবং শক্তি প্রয়োগ সত্ত্বেও, বিক্ষোভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্তত ছয়টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএল এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে। কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইবেক ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে তাঁবু আন্দোলন। মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ফিলিস্তিনিপন্থীরা বিক্ষোভ করছে। মিসরের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি জন কায়রো ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়েছে। এছাড়া ফ্রান্সের সায়েন্সেস পো এবং সারবোনে এবং ইনস্টিটিউট অফ পলিটিক্যাল স্টাডিজ ক্যাম্পাস এবং ইতালির সাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই প্রতিবাদ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছে। কয়েকদিন ধরে চলমান বিক্ষোভ দমনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে তারা। কয়েকটি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ বলপ্রয়োগ করেছে। কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
এদিকে ক্যাম্পাসে তাঁবু ফেলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা দাবি করে যে গাজায় ইসরায়েলি হামলাকে সমর্থনকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিও জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালায়। একটি অভিযানে গাজায় যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের উচ্ছেদ করা হয়। এসময় অনেক বিক্ষোভকারীকে পুলিশ গ্রেফতারও করে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠান বাতিল:
ইসরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভে ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানটি বাতিল করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১০ মে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানটি বাতিল ঘোষণা করার আগে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই মাসের শুরুতে বলেছিল যে বিদায়ী মুসলিম ছাত্রী আসনা তাবাসসুমকে একটি অজ্ঞাত নিরাপত্তা হুমকির কারণে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে দেওয়া হবে না। কিন্তু আশনা তাবাসসুম অভিযোগ করেন, তিনি বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে মামলা:
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যালেস্টাইন লিগ্যাল নামে একটি সংস্থা নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নাগরিক অধিকারের মামলা করেছে। সংস্থাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনি আইনজীবীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে।
বৃহস্পতিবার সংগঠনটি অভিযোগ করে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থীদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ বৈষম্যমূলক আচরণ করে। তারা বিষয়টি তদন্ত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগকে আহ্বান জানিয়েছে। এ অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।