যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্রদের ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ: ৯০০ গ্রেপ্তার
আকস্মিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এই প্রতিবাদ দিন দিন তীব্র হচ্ছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, বিক্ষোভ থামাতে গণগ্রেফতার শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে বিক্ষোভের তীব্রতা বাড়ছেই কমছেনা। নতুন নতুন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।
এদিকে, মার্কিন কর্তৃপক্ষের গ্রেফতারসহ বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। বিক্ষোভকারীদের অন্যতম দাবি হল গাজা যুদ্ধ থেকে লাভবান ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে সরিয়ে নেওয়া। তারা ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র, প্রযুক্তি এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে এমন সংস্থাগুলির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করারও দাবি করে।
তারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতিরও আহ্বান জানিয়েছে। ছাত্ররাও অনেক খ্যাতিমান লোকের সমর্থন পেয়েছে। এমনকি তাদের দাবি পোর্টল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও মেনে নিয়েছে। পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি ঘোষণা করেছে যে এটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের মধ্যে বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে উপহার এবং অনুগ্রহ গ্রহণ করা বন্ধ করবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, বোয়িং তার ওয়েবসাইটে জানিয়েছে যে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বর্তমানে ৯ টি বোয়িং পণ্য ব্যবহার করে। এবং বোয়িং ইসরায়েলের অর্থনীতিতে $৩.৫ বিলিয়ন অবদান রাখে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইসরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ শুরু হয় দেশটির কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই তা সারা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে। কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ সামাল দিতে পারছে না।
এতে চাপে রয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি সিনেট কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ থামাতে বেশ কয়েকটি ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে ক্যাম্পাস পুলিশকে ডাকে। আটক করা হয়েছে ৯০০ শিক্ষার্থীকে। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের বিষয়টিও সামনে এসেছে। কিন্তু তাতেও সমাধান হয়নি। উল্টা ইউনিভার্সিটির সিনেট প্রেসিডেন্ট মিনোশি শফিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। প্রস্তাবটি ৬২-১৪ ভোটে পাস হয়।
এনবিসি টুডে-র একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বিক্ষোভ সারা আমেরিকা জুড়ে ৪০ টিরও বেশি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ক্যাম্পাসে তাঁবু তৈরি করে গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের দাবি জানাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বোস্টনের এমারসন কলেজে। সেখান থেকে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এছাড়া ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির ২৪ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার জর্জিয়ার এমরি ইউনিভার্সিটিতে ছাত্রদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। সেদিন দর্শন বিভাগের প্রধান নোলি ম্যাকাফিকে গ্রেপ্তার করার পরপরই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তারের আগে, তিনি আটলান্টা পুলিশের ছাত্রদের তাঁবুর কাছে যাওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। পুলিশকে থামতে বললে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ক্যারোলিন ফোহলিনকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ওহাইওতেও ছাত্রদের পুলিশ আটক করেছে। ওই রাতে অন্তত ৩০ জনকে আটক করা হয়।
এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ইসরায়েলপন্থী এবং ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্ররা একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পরস্পরবিরোধী স্লোগান দেয়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে লাগাম টেনে ধরতে আইন প্রণেতাদের চাপের মুখে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলস্বরূপ, কলম্বিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় সেনেট, বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল, প্রশাসনের বিক্ষোভ পরিচালনার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে, সারা দেশে ৪০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভূতপূর্ব বিক্ষোভ এবং ফিলিস্তিনপন্থী প্রতিবাদ শিবির অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভের কারণে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অশান্তিতে রয়েছে। দেশটির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানি ও ব্যক্তিদের বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। শিক্ষকরাও তাদের সাহায্য করছেন। অস্থায়ী তাঁবু বসিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অচল করে দিচ্ছে অশান্ত শিক্ষার্থীরা। ফিলিস্তিনের জন্য আন্দোলন গতি পাচ্ছে এবং নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নজিরবিহীন ছাত্র বিক্ষোভ দীর্ঘ মেয়াদে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন নীতি পরিবর্তন করে দিতে পারে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জায়নবাদী রাষ্ট্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, অস্ত্র দাতা এবং আর্থিক সমর্থক। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন হয়তো সেটা বদলে দিতে পারে।
নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর থেকে এটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েল-বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ফ্রান্স, ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও আন্দোলন চলছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা দাবি করে যে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন ইসরায়েলে সরবরাহ করা অস্ত্র তৈরিকারী কোম্পানি এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ না করে এবং তহবিল গ্রহণ না করে ।