বাংলাদেশে ‘আরব বসন্ত’ ঘটাতে পারে যুক্তরাষ্ট্রঃ আশংকা রাশিয়ার
নির্বাচনের পর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র; আরব বসন্তের মতো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে রাশিয়া। শুক্রবার এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারে ওয়াশিংটন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করে আসছে রাশিয়া। এরই মধ্যে, ২২ নভেম্বর, রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ করেছেন। ওই দিন তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে অক্টোবরে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তবে মস্কোর অভিযোগ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আরব বসন্তের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে।
তার আগে (আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে) ওয়াশিংটন বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাসহ আরও কিছু চাপ প্রয়োগ করতে পারে। বাইডেন প্রশাসনের টার্গেট হতে পারে বাংলাদেশের প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনেক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করতে পারে। জাখারোভা এও মন্তব্য করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অকাট্য প্রমাণ ছাড়াই এই অভিযোগ আনবে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ, সড়কে যান চলাচল বন্ধ, বাস পোড়ানো এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে পশ্চিমা কূটনৈতিক মিশনের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের সম্পর্ক আমরা দেখতে পাচ্ছি। ঢাকা।” বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরোধীদের সাথে বৈঠক, যা আমরা গত ২২ নভেম্বর ব্রিফিংয়ে কথা বলেছিলাম।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন না হলে যুক্তরাষ্ট্র আরব বসন্তের মতো বাংলাদেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করতে পারে। এটা ‘দুর্ভাগ্যজনক’ হবে মন্তব্য করে জাখারোভা বলেন, রাশিয়া বিশ্বাস করে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম জনগণ শাসন ইস্যুতে যে কোনো বহিরাগত শক্তির ‘ষড়যন্ত্র’ মোকাবেলা করে অবশেষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
আরব বসন্ত কী?
উল্লেখ্য,১৭ ডিসেম্বর, ২০১০ -এ, তিউনিসিয়ার ফুটপাতে একজন সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ বাওয়াজিজি পুলিশের দুর্নীতির প্রতিবাদে নিজেকে আগুন ধরিয়ে আত্মহুতি দেন । সেই ঘটনা থেকেই আরব বসন্তের জন্ম। ২৬ বছর বয়সী ওই যুবকের আত্মহত্যার খবর সারাদেশে বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
তিউনিসিয়ার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে । তীব্র প্রতিবাদের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন রাষ্ট্রপতি জয়নাল আবেদিন বেন আলী। দুই দশকেরও বেশি সময়ের বেন আলীর রাজত্বের অবসান ঘটে।
আসল বিষয়টি ছিল, ২০১০ সালের শুরু থেকে আরব বিশ্বে যে গণ বিপ্লবের ঢেউ বয়ে গিয়েছিল তাকে পশ্চিমা সাংবাদিকরা আরব বসন্ত বলে অভিহিত করেছেন। তিউনিসিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে মিশর, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে। প্রথমে মিশরে প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতন হয়। পরে লিবিয়ায় মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফির শাসনের অবসান ঘটে। আরব বিশ্বের এই গণ-অভ্যুত্থানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় ইউরোপীয় ন্যাটোভুক্ত সহচর রাষ্ট্রগুলো অস্ত্র সরবরাহ করে এবং সরাসরি আঘাত হেনে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়কের পতন ঘটায় বলে অভিযোগও রয়েছে।
আরব বসন্তের ফলে, মাত্র আড়াই বছরে, লিবিয়া, সিরিয়া, মিশর, তিউনিসিয়া, বাহরাইন এবং ইয়েমেনের গণ-আন্দোলনের ফলে দেশীয় উৎপাদনে মোট ২৫৬০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় গণঅভ্যুত্থান এবং বিক্ষোভ ইতিহাসে নজিরবিহীন। এখন পর্যন্ত আলজেরিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন, মিশর, ইরান, জর্ডান, লিবিয়া, মরক্কো, তিউনিসিয়া এবং ইরাক, কুয়েত, মৌরিতানিয়া, ওমান, সৌদি আরব, সোমালিয়া, সুদান এবং সিরিয়াতে ছোট-বড় বিদ্রোহ চলছে ।
এসব বিদ্রোহে ধর্মঘট, বিক্ষোভ, জনসভা, সমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচিকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে গণবিদ্রোহের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলি দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাজ, যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারণা থেকে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এদিকে তিউনিসিয়া, মিসরে বিদ্রোহের ফলে শাসকের পতন হয়েছে, তাই এখানে একে বিপ্লব বলা হয়। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং খরার প্রাদুর্ভাবও প্রধান কারণ।
তিউনিসিয়ার জেসমিন বিপ্লব ১৪ জানুয়ারি শাসক জাইন এল আবেদিন বেন আলীকে উৎখাত করে এবং তিনি সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ২৫ জানুয়ারী মিশরে একটি বিদ্রোহ শুরু হয় এবং ৩০ বছর ধরে শাসন করা রাষ্ট্রপতি মোবারক ১৮ দিনের বিদ্রোহের পর ১১ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগে বাধ্য করেন। একই সঙ্গে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন;
আরও পড়ুন
বিদেশে বসবাসরত সচিবদের সন্তান যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি