প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নরম সুর: স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ওপর জোর
ফিলিস্তিন অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েল যে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে তার জন্য বিভিন্ন পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে। কারণ গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় ইসরায়েলের অভিযানকে সরাসরি সমর্থন দিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয়, বাইডেন এবং তার সেক্রেটারি অফ স্টেট ব্লিঙ্কেন ইসরাইল সফর করে সমর্থন দেখিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থানে ওয়াশিংটনের ওপর তুমুল ক্ষুব্ধ আরব দেশগুলো। এমনকি জর্ডান ইসরায়েল সফরের সময় বাইডেনের সাথে একটি নির্ধারিত বৈঠএও বাতিল করেছিল। ওয়াশিংটন ও অন্যান্য আরব দেশের মধ্যেও উত্তেজনা শুরু হয়েছে।
মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরব দেশগুলোর সংগঠন আরব লীগ, জাতিসংঘ, তুরস্ক, চীন ও রাশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশ মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে আলাদা ইসরাইল ও ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি বিশেষ করে আরব নেতাদের অনড় অবস্থানের কারণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের পাশে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দুই রাষ্ট্র কয়েক দশকের পুরনো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি দ্বন্দ্বের অবসানে সমাধানে কাজ করার প্রতিশ্রুতি জোরদার করবে।প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা প্রতিশোধমূলক আক্রমণ বেড়েছে যখন ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আক্রমণ শুরু করেছে। বাইডেন বসতি স্থাপনকারীদের উপর হামলার বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কট্টরপন্থী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলা ইতিমধ্যে জ্বলন্ত মধ্যপ্রাচ্যে আরও জ্বালানি যোগ করছে। তাদের থামাতে হবে। তাদের জবাবদিহি করতে হবে। এটা এখন বন্ধ করতে হবে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, পশ্চিম তীরের শাসক গোষ্ঠী বলেছে যে হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়েছে। বসতি স্থাপনকারীদের হাতে নিহত হচ্ছে ফিলিস্তিনিরা।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বলেছে যে বসতি স্থাপনকারীরা বেশ কয়েকটি ছোট বেদুইন সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং তাদের এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলে হামাসের হামলার আবারও নিন্দা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেছিলেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে সৌদি আরব সহ কয়েকটি দেশের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন উদ্যোগকে ব্যর্থ করতে হামাস এই হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় ১,৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে তেল আবিব।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইসরাইল-হামাস দ্বন্দ্ব শেষ হওয়ার পর ইসরাইল, ফিলিস্তিন ও তাদের অংশীদারদের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিন নিরাপত্তা, সম্মান ও শান্তিতে পাশাপাশি থাকার সমান অধিকারের দাবি রাখে। এই সংকট শেষ হলে ভবিষ্যতের জন্য লক্ষ্য থাকতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হল এটি একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান হওয়া উচিত।
হামাসের হামলার জবাবে গাজায় অবিরাম বোমাবর্ষণ করা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার বোমাবর্ষণে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে সাত শতাধিক ফিলিস্তিনি মারা যায়।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরায়েলের ‘অবিরাম’ বিমান হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, নোবেল জয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, “ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এবং এটি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কাজে যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত অগ্রসর হলে অন্যরাও অনুসরণ করবে।” বাইডেন প্রশাসনকে অবিলম্বে এই অত্যন্ত জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে। একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “কোনও বিলম্ব আর গ্রহণযোগ্য নয়।”
নোবেল বিজয়ী আরও বলেন, ‘আমি এই সংঘাতের সাথে জড়িত সকল পক্ষকে অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং এই ভয়ানক সঙ্কটে আটকে পড়া নিষ্পাপ শিশু এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করছি। ক্ষতিগ্রস্থ জনসংখ্যার জন্য জরুরী মানবিক সহায়তা প্রদান করা এখন গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের জীবন বাঁচাতে, তাদের মর্যাদা রক্ষায় এবং সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দিকে কাজ করতে আমাদের পুরোপুরি মনোযোগী হতে হবে।’
ডক্টর ইউনুস বিবৃতিতে বলেছেন, “দরিদ্র মানুষের কাছে জরুরী মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অবশ্যই জনগণের জীবন রক্ষা, তাদের মর্যাদা রক্ষা এবং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের দিকে কাজ করার উপর পুরোপুরি মনোযোগ দিতে হবে।”
1 Comment