লুইস্টনে বন্দুক হামলায় ২২ জন নিহতঃ যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলা চলছেই অবিরাম
সভ্যতা, শিক্ষা আর উন্নতির শীর্ষে থাকা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেইনের লুইস্টনে একাধিক বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়ালমার্টের একটি বার ও একটি বিতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে বন্দুক হামলায় ৫০-৬০ জন গুলিবিদ্ধ বা আহত হয়েছেন। তবে হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়।
আন্দ্রোস্কেজিজন কাউন্টি শেরিফের অফিস জানিয়েছে, হামলাকারীরা পলাতক রয়েছে। হামলার পর শেরিফের কার্যালয় সমস্ত ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। অফিস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছে, হামলাকারীর একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যাসল্ট-রাইফেল পাওয়া গেছে।
লুইস্টন পুলিশ বলছে, তারা গুলির ঘটনায় জড়িত একজন ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করেছে। বুধবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দুটি গুলির ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র রয়েছে। হামলাকারীকে গ্রেফতার করতে না পারায় আরেকটি হামলার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, গুলি চালানোর পরে এবং আততায়ী পলাতক হওয়ার পরে, লুইস্টনের কাছাকাছি শহরগুলিকেও সতর্ক করা হয়েছে এবং বাসিন্দাদের নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছিল।
উল্লেখ্য যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে, বছরের অর্ধেক বা ছয় মাসে বন্দুকে মৃত্যুর একটি নতুন রেকর্ডে পৌঁচেছে । চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে বিভিন্ন রাজ্যে বন্দুক হামলায় যে পরিমাণ মানুষ নিহত হয়েছে তা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি দ্বারা পরিচালিত একটি ডাটাবেসের বিশ্লেষণ অনুসারে, জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে মোট ৩৭৭ টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং এর মধ্যে নারী ও শিশুসহ মোট ১৪০ জন নিহত হয়েছে।
ডাটাবেস অনুসারে, আগের বছর জানুয়ারী থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বন্দুকের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৭ । মাত্র এক বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ গুণেরও বেশি বেড়েছে।
নিহতরা সবাই ‘গণহত্যা’র শিকার। মার্কিন পরিভাষায়, যখন একটি নির্দিষ্ট স্থানে একক ব্যক্তির দ্বারা একই সময়ে ৪ বা তার বেশি লোককে হত্যা করা হয়, তখন সেই হত্যাকে বলা হয় নির্বিচার হত্যা বা গণহত্যা’।
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ক্রিমিনোলজির অধ্যাপক জেমস অ্যালেন ফক্স এই বছরের পরিসংখ্যান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বলেছেন বন্দুক সহিংসতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং দিন দিন তা আরও খারাপ হচ্ছে। এমনকি কয়েক বছর আগেও, প্রতি বছর বন্দুক সহিংসতায় নিহত মানুষের সংখ্যা ছিল দুই থেকে তিন ডজনের মধ্যে
কিন্তু গত বছরের প্রথম ছয় মাসে গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আর এ বছর আমরা যে পরিসংখ্যান দেখছি তা বেশ উদ্বেগজনক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আগ্নেয়াস্ত্রের ক্রমবর্ধমান ও সহজ প্রাপ্যতা এবং ব্যাপক ব্যবহারের সাথে অহিংস হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি চলতি বছরের ৪ জুলাই দেশটির স্বাধীনতা দিবসেও রাজধানী ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন শহরে একাধিক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে।
” রাষ্ট্রপতি জো বিডেনও দেশে বন্দুক সহিংসতার সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন “আমরা অ্যাসল্ট রাইফেল এবং উচ্চ-ক্ষমতার ম্যাগাজিন বিক্রি নিষিদ্ধ করতে পারি, বন্দুক সংস্থাগুলিকে জবাবদিহি করতে পারি এবং নাগরিকদের উপর কঠোর বন্দুক কেনাবেচায় কঠিন নিয়ম আরোপ করতে পারি, তার দল, ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা বারবার পার্লামেন্টে বিল পেশ করেছে যাতে আগ্নেয়াস্ত্র কেনা, সঞ্চয় এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণকারী আইন সংস্কার করা যায়; কিন্তু রিপাবলিকান পার্টির বিরোধিতার কারণে ওই বিলগুলো পাস হয়নি।
জেমস অ্যালেন ফক্সও প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। এই নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপকের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘সবার জন্য বন্দুক’ নীতিতে রয়েছে এবং যদি এই নীতি চলতে থাকে তবে বন্দুক সহিংসতা আগামী দিনে আরও খারাপ হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
তবে এই বিপুল সংখ্যক মৃত্যু কেবল বন্দুক হামলার কারণে নয়, বন্দুকে আত্মহত্যার কারণেও। বন্দুক ভায়োলেন্স আর্কাইভ অনুসারে, এই সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যু ছিল আত্মহত্যা।
বিশ্বের জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে, তবে বেসামরিক হাতে থাকা অস্ত্রের ৪৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিকদের হাতে রয়েছে। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন অস্ত্র ও ম্যাস শ্যুটিং উভয় ক্ষেত্রেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বন্দুক সহিংসতা বন্ধে বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও দেশে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। মূলত, জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর বন্দুক সহিংসতা কমাতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দেশে বন্দুক সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। আমেরিকা এখন বন্দুক সহিংসতার অন্যতম দেশে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়তে
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩০ বছরে ১১ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু