ভিসা নীতিতে গণমাধ্যমও অন্তর্ভুক্ত করা হবে: পিটার হাস
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার (২২/০৯২/২৩) থেকে শুরু হয়েছে।
গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি ঘোষণার পর, এর বাস্তবায়ন শুরু হয় এমন সময়ে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে রয়েছেন এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি তার পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ জোরদার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা শুরু করলে সর্বত্র হৈচৈ পড়ে যায়। ভিসা নীতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ভিসা নীতির ফলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ, নির্বাচন ঠেকাতে সহিংসতা চালালে তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে। অন্যদিকে ভিসা নীতির কারণে ক্ষমতাসীনরা চাপে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
নিষেধাজ্ঞার খবরের পর বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। তালিকায় কারা আছেন বা এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ আছে কি না বা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের কী হবে বা আরও নিষেধাজ্ঞা থাকবে তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।
এভাবেই আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গণমাধ্যমও যুক্ত হবে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ এর এক প্রতিবেদনে রোববার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ কথা বলেন।
চ্যানেল ২৪ জানিয়েছে, রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আজ টেলিভিশন স্টেশনের অফিসে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না দেশটি।
ওই ঘোষণার প্রায় চার মাস পর গত শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে ঘোষণা করে যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা শুরু করবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী এবং জড়িত ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিচ্ছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতি অনুযায়ী, এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অন্যান্য ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সেই সাথে এখন যুক্ত হল গণমাধ্যমেও।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে এই বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার গণমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু সদস্যের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী জনৈতিকরাও ।
তিনি বলেন, ‘আমরা এই ভিসা নীতি ঘোষণা করার পর থেকে মার্কিন সরকার উন্নয়নের দিকে কড়া নজর রাখছে। তথ্য-প্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি।
তবে কাদের ওপর বা কতজনের ওপর এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা তিনি বলেননি। এ প্রসঙ্গে ব্রায়ান শিলার বলেন, এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম তারা প্রকাশ করবেন না। কারণ ভিসার তথ্য মার্কিন আইনে গোপনীয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নির্বাচনে বাধাদানকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে, তবে সেসব বাংলাদেশির সংখ্যা প্রকাশ করেনি। ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস অবশ্য বলছেন, সংখ্যাটা ইস্যু নয়, কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে সেটাই মূল বিষয়। পিটার হাস তার এবং ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে তার সকল সহকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন। ভয় না পেয়ে কাজ করতে পারাটাও জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
রোববার একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪-এর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন, এতে লুকানোর কিছু নেই। তিনি মনে করিয়ে দেন যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বাইডেন প্রশাসনের নীতির কেন্দ্রে রয়েছে।
1 Comment