November 23, 2024
ভিসা নীতি নিয়ে আবারো বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র

ভিসা নীতি নিয়ে আবারো বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র

ভিসা নীতি নিয়ে আবারো বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র

ভিসা নীতি নিয়ে আবারো বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বুধবার এক ঘোষণায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, যারা সে দেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী বা যারা তা করার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা এর আওতায় পড়বেন। এটি এই ধরনের ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করবে।

নতুন এই ভিসা নীতি অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম, হস্তক্ষেপ বা বাধার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি ও তার পরিবারকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না। এতে বলা হয়েছে, জাল ভোট দেওয়া, ভোটার ও নির্বাচনী এজেন্টদের বাধা দেওয়া, নির্বাচনী সমাবেশে হামলা, অনুপস্থিতিতে মামলা দায়ের, নির্যাতন, মত প্রকাশে বাধা দেওয়া ইত্যাদি অনিয়ম ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সরকারের সকল স্তরের ব্যক্তিরা (যেমন মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী) এবং বিরোধী দল এই কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে এই ভিসা নীতির আওতায় পড়তে পারে।

নতুন ভিসা নীতি তাই নিষেধাজ্ঞার চেয়ে অনেক বেশি ব্যাপক। কারণ, এটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নয়, বরং এটি সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য যে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রযোজ্য একটি সর্বজনীন নীতি। সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হলে তাদের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি প্রযোজ্য হবে:

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নেবে না বলেও জানিয়েছে দেশটি।

সোমবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন কর্মীকে কানাডায় আশ্রয় না দেওয়া এবং অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতায় বিএনপির জড়িত থাকার বিষয়টি ম্যাথিউ মিলারের কাছে তুলে ধরেন।

সাংবাদিক বলেন, কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপির সঙ্গে যুক্ত এক কর্মীর আশ্রয় আবেদন খারিজ করে এবং দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বাংলাদেশের পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএনপি অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ছিল, বিশেষ করে ২০১৪ সালে। জাতীয় নির্বাচনের সময় বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল। এবারও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সহিংসতা শুরু করার চেষ্টার অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। এই বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমার পর্যবেক্ষণ হলো আমরা বাংলাদেশ বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশের কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে অবস্থান নিই না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত।

আরও পড়তে

বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের ছয় সদস্য: বাইডেনের পর ব্লিঙ্কেনকে চিঠি

এর আগে একই ব্রিফিংয়ে আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সারা বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। শান্তিপূর্ণ বিরোধী সমাবেশে হামলা হচ্ছে যেখানে হাজার হাজার মানুষ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছে। বিরোধী দলের সমাবেশে ইন্টারনেট বন্ধের অভিযোগ, গ্রেফতারসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মোবাইল ফোন তল্লাশির হাজার হাজার মামলা। এমনকি মৃত বিরোধী নেতারাও বর্তমান সরকারের মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। তাহলে যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার খর্ব করছে, যুক্তরাষ্ট্র কি তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে?

ম্যাথু মিলার বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ২৪ মে ভিসা নীতি জারি করার সময় স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করার জন্য দায়ীদের জন্য এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন কার্যকলাপের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার ব্যবহার যাতে জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখা যায়।

এই নীতিতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখার জন্য পরিকল্পিত যেকোনো ব্যবস্থার ব্যবহারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ পর্যায়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মীদের হুমকি, হয়রানি ও বিচারের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি প্রশ্ন করেন, সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৬ শতাংশ মানবাধিকার কর্মী বিভিন্ন বাধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। অর্থ নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে আরেকটি অস্ত্র, কারণ তাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে। যার দরুন  অনেক আন্তর্জাতিক সাহায্য গ্রহীতা সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না বলে শুনেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা উদ্বেগজনক বলে মনে করেন?

জবাবে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেছেন, “সাধারণ নিয়ম হিসাবে, গণতান্ত্রিক সমাজের উচিত প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে তাদের ভূমিকা ও দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা সমর্থন করা।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা মানবাধিকারের উপর যেকোনো ধরনের বিধিনিষেধের বিরোধিতা করি এবং এই বিষয়ে আমার আর কোনো নির্দিষ্ট মন্তব্য করার নেই।”

X