November 22, 2024
ইসলাম শ্রমিক/শ্রমজীবীদের দিয়েছে অনন্য মর্যাদাঃ মহান মে দিবস প্রসঙ্গ

ইসলাম শ্রমিক/শ্রমজীবীদের দিয়েছে অনন্য মর্যাদাঃ মহান মে দিবস প্রসঙ্গ

ইসলাম শ্রমিক/শ্রমজীবীদের দিয়েছে অনন্য মর্যাদাঃ মহান মে দিবস প্রসঙ্গ

ইসলাম শ্রমিক/শ্রমজীবীদের দিয়েছে অনন্য মর্যাদাঃ মহান মে দিবস প্রসঙ্গ

১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১মে ঘটে যাওয়া শহিদদের আত্মত্যাগে শ্রমিকদের আন্দোলনের ফসল মে দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে; আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রমিকের মর্যাদাকে যেভাবে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়ে গেছেন, তা আলোকপাত করতে চাই।

ইসলাম এক ব্যক্তির সাথে অন্য ব্যক্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য স্বীকার করে না। এ কারণে শ্রমিকদের কোনোভাবেই অসম্মান করার সুযোগ নেই। ইসলামে মানুষের মর্যাদা তাকওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত হয়; সম্পদ বা মর্যাদার ভিত্তিতে নয়। তাই শ্রমের মর্যাদার বিষয়ে ইসলামের অবস্থান তুলনাহীন।

মহান আল্লাহ সুরা বালাদে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রমনির্ভর করে।’একজন শ্রমিক তার শ্রম বিক্রি করে জীবিকার আশায়। ইসলামের বিধান নিশ্চিত করে যে সে প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রমের মূল্য পাক ।

এ প্রসঙ্গে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরি পরিশোধ করে দাও।” (ইবনে মাজাহ) ।

ইসলাম মালিককে শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘শ্রমিককে তার সামর্থ্যের চেয়ে বেশি কাজ দিও না। যদি কখনো তা করতে হয়,তবে তুমি নিজেই তাকে সাহায্য করবে।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বললেন, ‘বিচারের দিন আমি আল্লাহর আদালতে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করব যে শ্রমিকের কাছ থেকে পুরো কাজ নিয়েছে কিন্তু তাকে তার প্রাপ্য  মজুরি দেয়নি।'( মুসলিম)।

মানবজাতির নির্দেশিকা আল-কোরআনে বলা হয়েছে, “নামাজ শেষ হলে, তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রুজি) অন্বেষণ করবে।” সূরা জুমা, আয়াত ১০।

যারা কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বন্ধু বলে অভিহিত করেছেন। এই পদের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা আকাশচুম্বী হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পরিবারের জন্য পানি নিয়ে যেতেন। তিনি নিজের জুতা নিজেই সেলাই করতেন । মসজিদ নির্মাণ, পরিখা খননসহ সামাজিক কাজে অংশ নিয়েছেন ।

আল্লাহর নবীর শ্রমের মাধ্যমে শ্রমের উচ্চ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ না করে শ্রমিক নিয়োগ করতে নিষেধ করেছেন।

নাসায়ী বায়হাকির একটি হাদিস দেখায় যে, শ্রমিকদের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতটা করুণা করতেনঃ

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, আমার বান্দা (গৃহের চাকর) আমার  সাথে দুর্ব্যবহার ও জুলুম করেছে, (এখন আমি তার সাথে কেমন আচরণ করব?) তিনি বললেন, আমি তাকে দিনে সত্তর বার ক্ষমা করব। ”

হজরত আবু মাসউদ (রা.) বলেন, ‘একবার আমি আমার শ্রমিককে চাবুক দিয়ে প্রহার করছিলাম। এমন সময় কেউ একজন রাগান্বিত কণ্ঠে আমার নাম ধরে ডাকছিল, হে আবু মাসউদ! হে আবু মাসউদ! খুব রাগী কন্ঠে কে আমাকে ডাকছে বুঝতে পারলাম না। কাছে আসার পর দেখলাম, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন। তখন তিনি আমাকে বললেন, আবু মাসউদ! আপনি এই কর্মীর উপর যতটা শক্তিশালী, সর্বশক্তিমান আল্লাহ  আপনার চেয়ে অনেক বেশি  শক্তিশালী।’

ইসলামে শ্রম নিয়োগে শ্রমিকের, যোগ্যতা ও পরিবেশকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অধীনদের জন্য খাদ্য ও বস্ত্রের ব্যবস্থা কর, তাদের সাধ্যের বেশি কাজ  করতে বাধ্য করোনা।’  সহজ কথায়, একজন শ্রমিককে তার সামর্থ্যের বাইরে জোর করে চাপিয়ে কাজ দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X