নেতানিয়াহুকে ‘স্বৈরাচারী’ আখ্যায় স্লোগানে বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার ঘোষণার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। রাস্তাঘাট কাঁপছে নেতানিয়াহু বিরোধী স্লোগানে। স্বৈরাচারী’ সবার মুখে মুখে নেতানিয়াহুকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে স্লোগান।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইসরায়েলের মতে, মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর নেতানিয়াহু প্রশাসন পুনরায় আক্রমণ শুরু করার পর থেকে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সাধারণ ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বৃহস্পতিবার রোনেন বারকে বরখাস্ত ইস্যুতে ভোটাভুটির ঘোষণার পর ক্ষোভ আরও তীব্র হয়। গত রাত থেকে ইসরায়েলিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে। শুক্রবার রোনেন বারকে বরখাস্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছেন।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের মতে, বৃহস্পতিবার রাতে তেল আবিব এবং জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও জড়ো হয়েছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর শুরু করে, যার ফলে পুলিশের সাথে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে।
বিক্ষোভকারীরা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন স্বৈরশাসকও বলে অভিহিত করেছেন। ৫৯ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী রিনাত হাদাশি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ইসরায়েলে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ কারণেই আমরা চিন্তিত। স্বৈরশাসক নেতানিয়াহু আমাদের জিম্মিদের পরিত্যাগ করেছেন। তিনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির প্রতি স্পষ্ট অবজ্ঞা প্রদর্শন করছেন,” ।
ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা আজ স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় নিরাপত্তা প্রধানকে বরখাস্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। বৈঠকের পর মন্ত্রিসভা শিন বেট প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের ঘোষণা দিয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইসরায়েলের মতে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানের বরখাস্ত দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। ১০ এপ্রিল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। যদিও প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, ২০ এপ্রিল শিন বেটে তার শেষ দিন হবে, পরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তারিখটি এগিয়ে আনা হয়।
রোনেনকে অপসারণের সিদ্ধান্তকে নেতানিয়াহু এবং নিরাপত্তা প্রধানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার ফলস্বরূপ দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে নেতানিয়াহুর অফিসের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কাতারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত শুরু হওয়ার পর থেকে এই উত্তেজনা বেড়েছে। নেতানিয়াহু অভিযোগগুলিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। তবে সমালোচকরা বলছেন যে, তিনি ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি দুর্বল করার চেষ্টা করছেন এবং রোনেনের অপসারণ সেই প্রচেষ্টারই একটি অংশ।
রোনেন নিজে এর আগে ৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে হামাসের আক্রমণ রোধে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবুও, রোনেনকে অপসারণের পদক্ষেপ, যা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারীভাবে করা হয়, তার জন্য পুরো ইস্রাইল জুড়ে নিন্দার ঝড় উঠছে।
এছাড়াও, ইসরায়েলি ক্ষোভ জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। হামাস এখনও ৫৯ জন জিম্মি ধরে রেখেছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েল তাদের আক্রমণ পুনরায় শুরু করায় তাদের জীবনের জন্য আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, বন্দীদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন, হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম, এক বিবৃতিতে বলেছে যে, এটি এমন একটি ফলাফল যা ইসরায়েলের সাধারণ জনগণ কখনই মেনে নেবে না।