২৬৬ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করলো ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে। ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে যে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ২৬৬ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। যুদ্ধবিরতি ১৯ জানুয়ারী কার্যকর হয়েছিল এবং এখনও অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েলের এই ধরনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে ১৩২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ এবং সেখানে অভিযানের কারণে ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
তবে, মধ্য গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। সেখানে ১১০ বারেরও বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হয়েছে। এছাড়াও, রাফায় ৫৪ বার, গাজা শহরে ৪৯ বার, খান ইউনিসে ১৯ বার এবং উত্তর গাজায় ১৩ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
৭ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলন হামাস ইসরায়েলি সীমান্তে আকস্মিক আক্রমণ চালায়। সেই সময়, ১,১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২০০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করে রাখা হয়।
এরপর ইসরায়েল গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। দখলদার বাহিনী ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে আক্রমণ করার পর গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
উভয় পক্ষের সম্মতিতে ১৯ জানুয়ারী একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং হামাস তাদের দ্বারা বন্দী ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে শুরু করে। অন্যদিকে, ইসরায়েল তাদের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদেরও মুক্তি দিচ্ছে।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে এখন পর্যন্ত সেখানে ৪৮,২৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়াও, আরও ১,১১,৬৯৩ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
ঠুনকো চুক্তির ঘন ঘন লঙ্ঘন
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় তেল আবিব বারবার হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। একদিকে, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকি তৈরি করা হচ্ছে, অন্যদিকে, ইসরায়েল এবং তার মিত্র রাষ্ট্র যে কৌশল অনুসরণ করছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে, একটি বিশাল মার্কিন বোমারু বিমান ইসরায়েলে পৌঁছেছে।
গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে রাফা শহরের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় হামাস-পরিচালিত পুলিশ বাহিনীর তিন সদস্য নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে যে শনিবারের হামলা ১৯ জানুয়ারী থেকে চলমান যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। আনাদোলু এবং ওয়াফার প্রতিবেদন অনুসারেতো বলা হয়েছে, বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী এখন পর্যন্ত ৮৫০ বারেরও বেশিবার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।
তবে, ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে যে, তারা তাদের বাহিনীর দিকে আসা কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এদিকে, রবিবার হামাস-পরিচালিত গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, নিহত পুলিশ সদস্যদের গাজায় প্রবেশকারী ত্রাণ ট্রাকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, মন্ত্রণালয় বর্বর ইসরায়েলি অপরাধের নিন্দা জানিয়েছে এবং মধ্যস্থতাকারী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দখলদার বাহিনীকে পুলিশ বাহিনীর উপর আক্রমণ বন্ধ করতে বাধ্য করার আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে যে, তারা তাদের বাহিনীর দিকে আসা কয়েকজন সশস্ত্র ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। একই সাথে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে হামলার উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে। এছাড়াও, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার সকল বাসিন্দাকে তাদের নির্দেশ অনুসরণ করার এবং ওই অঞ্চলে মোতায়েন ইসরায়েলি সেনাদের কাছে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, ইউএস পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করে দিয়েছেন যে,ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী দল হামাস সামরিক বা সরকারি বাহিনী হিসেবে টিকে থাকতে পারে না। পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই সতর্কবার্তা দেন। তিনি আরও বলেন যে হামাস সম্পর্কে ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট। তাদের নির্মূল এবং ধ্বংস করতে হবে।