যুদ্ধ বিরতিতে বাড়িতে ফিরতে চাওয়া ২২ লেবানিজকে হত্যা করল ইসরাইল
ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে ২২ জন লেবানিজকে গুলি করে হত্যা করেছে। রবিবার চুক্তি অনুসারে ইসরায়েলি সেনাদের এলাকা থেকে সরে যাওয়ার কথা থাকলেও তেল আবিব তা করেনি। পরিবর্তে, অসভ্য বর্বর নেতানিয়াহুর বাহিনী সেখান থেকে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাওয়া সাধারণ লেবানিজদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও অনেক মানুষ আহত হয়েছে। এদিকে, গত শুক্রবার, ইসরায়েল বলেছে যে, রবিবারের সময়সীমা পার হওয়ার পরেও তারা সেখানে তাদের সেনা রাখবে। অজুহাত হিসেবে, দক্ষিণ লেবাননকে হিজবুল্লাহ মুক্ত না করার অজুহাত দেখিয়েছে। তারা বলছে, সেখানে হিজবুল্লাহকে অস্ত্রমুক্ত করা হয়নি এবং লেবাননে সেনা মোতায়েনের শর্তাবলী পূর্ণাঙ্গ রূপে বাস্তবায়ন করা হয়নি।
তবে, মার্কিন-সমর্থিত সামরিক বাহিনী ইসরায়েলকে প্রত্যাহার বিলম্বিত করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। তারা বলেছে যে, রবিবার ইসরায়েলের হাতে নিহতদের মধ্যে একজন লেবানিজ সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন।
২৭শে নভেম্বর হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তিতে বলা হয়েছিল যে, হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা লেবাননের সীমান্ত এলাকা থেকে সরে যাবে এবং ৩০ কিলোমিটার দূরে লিটানি নদীর ওপারে চলে যাবে। অন্যদিকে, ইসরায়েল আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তার সমস্ত সৈন্য প্রত্যাহার করবে। তবে, ইসরায়েল চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। তারা দাবি করেছে যে, লেবাননের সৈন্যদের যে এলাকাগুলি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল সেখানে অবস্থান নেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা করেনি। এই কারণে, তাদের সৈন্যরা আপাতত লেবাননের ভূখণ্ডে থাকবে।
ইস্রায়েল রবিবার নিরীহ লেবাননের জনগণের উপর গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেছে। তারা বলেছে যে, বেসামরিক লোকেরা তাদের দিকে দৌড়াতে শুরু করলে তারা গুলি চালায়। ইসরায়েল আরও বলেছে যে, একজন সৈন্যের মৃত্যুর তদন্ত করা হবে।
হিজবুল্লাহ-ইসরায়েল সংঘাত গাজা যুদ্ধের সমান্তরাল। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক পর্যায়ে, ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে। তাদের তীব্র স্থল ও বিমান আক্রমণ লেবাননের দশ লক্ষেরও বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে। যুদ্ধটি ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং দুর্বল করে দেয়।
ইতিমধ্যে, ইসরায়েলের সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি ব্যর্থতার দায়িত্ব ছেড়ে পদত্যাগ করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তার নাগরিকদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা তাকে সারা জীবন তাড়া করবে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীর বহু বছরের সেবা এবং নেতৃত্বের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন কর্তৃক নিযুক্ত জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত দাবি করেছেন যে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অধিকার রয়েছে, যা তারা ধর্মীয় কারণে দখল করে। তবে, জাতিসংঘের আরেক বিশেষ দূত সতর্ক করে বলেছেন যে, ইসরায়েলকে হত্যা বন্ধ করতে বাধ্য না করা পর্যন্ত গণহত্যা কেবল গাজাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।
অন্যদিকে, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, গাজায় যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় তিনি বলেন যে, যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা এই অঞ্চলের নেতাদের সম্মিলিত দায়িত্ব।