হাসিনার অনুসারী রাশিয়াতে পলাতক স্বৈরাচার বাসার আল আসাদকে তাড়িয়ে সিরিয়াকে স্বাধীন ঘোষণা করল বিপ্লবী জনতা
বাংলাদেশের ২৪, এর জুলাই বিপ্লব সারা পৃথিবীতে মাইলফলক হয়ে থাকবে। সে বিপ্লবের ১০০ দিন পার হওয়ার পরপরই ২৪ বছর ধরে শোষণ করা ফ্যাসিস্ট আসাদকে অনেকটা ঝাড়ু পেটা করে তাড়িয়ে দিয়েছে সিরিয়ার বিপ্লবী জনতা। হাসিনা যেভাবে তার প্রিয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গিয়ে জীবন ভিক্ষা পেয়েছে । আসাদও পার্শ্ববর্তী মিত্র দেশ রাশিয়াতে পালিয়ে গিয়ে জীবন বাঁচালো । আর সিরিয়াকে স্বাধীন ঘোষণা করল বিপ্লবী জনতা।
সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামস (এইচটিএস) দেশটিকে “মুক্ত” ঘোষণা করেছে। স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রাজধানী দামেস্ক থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর দলটি এই ঘোষণা দেয়। এইচটিএস রোববার সকালে টেলিগ্রাম পোস্টে বলেছে, “স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ পালিয়ে গেছেন। এটি একটি অন্ধকার যুগের সমাপ্তি এবং একটি নতুন যুগের সূচনা করে।”
বিদ্রোহী গোষ্ঠী ঘোষণা করেছে, “আসাদ সরকারের অর্ধ শতাব্দীর শাসনামলে বাস্তুচ্যুত বা কারারুদ্ধ হওয়া সিরিয়ানরা এখন দেশে ফিরতে পারবে।” HTS বলেছে।”এটি হবে একটি ‘নতুন সিরিয়া’, যেখানে সবাই শান্তিতে বসবাস করবে এবং ন্যায়বিচারের জয় হবে,” বাশার আল-আসাদের পালানোর খবর শুনে বিদ্রোহীরা উদযাপন শুরু করে
এর আগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ রোববার ভোরে বিমানে করে পালিয়ে যান রাশিয়া চলে যায়। হোমস শহর দখলের পর বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করতে থাকে এবং তিনি বিমানে করে অজানা গন্তব্যে চলে যান।
যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে যে দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে একটি ব্যক্তিগত বিমান উড্ডয়ন করেছে। সম্ভবত সেই বিমানেই বাশার আল-আসাদ পালিয়ে গেছেন। বিমানবন্দরে সরকারি বাহিনী বিদায় জানানোর পর এটি উড্ডয়ন করে।
সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে বিদ্রোহী বাহিনী পশ্চিম দামেস্কের গ্রামাঞ্চলে অগ্রসর হয়েছে। তারা জানিয়েছে, পূর্ব ঘৌতার বিভিন্ন শহর থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দামেস্ক সহ সারা দেশে লক্ষ লক্ষ জনতাকে উল্লাস করতে দেখা গেছে ।
বাশার আল-আসাদের পতনে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া
বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশটির বিদ্রোহীরা সিরিয়াকে মুক্ত ঘোষণা করেছে। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বিদ্রোহীরা প্রবেশ করায় তিনি আজ সকালে একটি ব্যক্তিগত বিমানে অজানা গন্তব্যে পালিয়ে যান। পালানোর পর এমন মন্তব্য করলেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর রোববার ট্রাম্প নতুন একটি পোস্ট দেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার সমর্থন হারিয়ে আল আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। সে পড়ে গেছে। ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়া আর আসাদকে রক্ষা করতে আগ্রহী নয়। এর আগে, গত শুক্রবার মার্কিন ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, সিরিয়া একটি বিশৃঙ্খল রাষ্ট্র। সিরিয়ার পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা আমাদের লড়াই নয়। যারা লড়াই করছে তারা লড়াই করুক। তাতে আমাদের জড়ানোর দরকার নেই।
বাশার আল-আসাদ তার পরিবার নিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নিয়েছে
ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সিরিয়া থেকে পালিয়ে সপরিবারে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে মস্কোতে রয়েছেন। গতকাল দিনভর বাশার আল-আসাদের অবস্থান নিয়ে নানা গুঞ্জন ছিল। তার গন্তব্য সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
রুশ বার্তা সংস্থা তাস এবং রিয়া নভোস্তির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, বাশার আল-আসাদ তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মস্কো পৌঁছেছে। মানবিক কারণে রাশিয়া তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে।
এর আগে, সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধাদের ১২ দিনের অভিযানে রবিবার বাশার সরকারের পতন ঘটে। এর মাধ্যমে দেশে তার দুই দশকের শাসনের অবসান ঘটে।
এটি লক্ষণীয় যে বাশার আল-আসাদ শক্তিশালী সামরিক নেতা হাফেজ আল-আসাদের ছেলে। তিনি তার পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতা পেয়েছিল। আসাদের বাবা হাফেজ আল-আসাদ ১৯৭১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার ক্ষমতায় ছিলেন। তার বাবার মৃত্যুর পর, আসাদ ২০০০ থেকে প্রায় দুই দশক ধরে সিরিয়ার একনায়ক হিসেবে ক্ষমতায় ছিলেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা গ্রহণের এগারো বছর পর, যখন সাধারণ সিরিয়ানরা গণতন্ত্রের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল, তখন আসাদ ও তার বাহিনী তাদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন চালায়। আসাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলা কণ্ঠকে তিনি ‘সন্ত্রাসী’ তকমা দিয়ে কারারুদ্ধ করেছিলেন।
তারপরও আসাদ গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকে দমাতে পারেননি। ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে স্বাধীনতাকামী মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। পরের বছরগুলোতে আসাদ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোর হয়ে ওঠেন। এতে হাজার হাজার সিরীয় নিহত হয়। সে সময় আসাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়াও, সেই আন্দোলনের সময় ক্ষমতাচ্যুত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিটমহল অঞ্চলে নির্বাচন করেন। তবে বিরোধীরা নির্বাচনকে অগণতান্ত্রিক বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ক্ষমতা থেকে দূরে সরে গেলেও, আসাদ তার রাজনৈতিক দল এবং তার সমর্থক আলাউইত দলের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।