সৌদি আরব এ বছর ১০১ জন বিদেশীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে
সৌদি আরবে চলতি বছর শতাধিক বিদেশীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই সংখ্যাটিকে ‘অভূতপূর্ব’ বলে বর্ণনা করেছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় নাজরান প্রদেশে শনিবার এক ইয়েমেনি নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সরকারি সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, সৌদি আরবে মাদক পাচারের অভিযোগে ওই ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
সৌদি আরব বিভিন্ন অভিযোগে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের শাস্তি দেয়। জানুয়ারী ১, ২০২৪ থেকে, দেশটির সরকার রেকর্ড ১০১ জনকে শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করেছে। এই সংখ্যা ২০২২ এবং ২০২৩ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশীদের সংখ্যার প্রায় তিনগুণ।এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এ পর্যন্ত মোট ১০১ জন বিদেশীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। যেখানে সৌদি আরবে যথাক্রমে ২০২৩ এবং ২০২২ সালে ৩৪ জন বিদেশীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
জার্মান ভিত্তিক ইউরোপীয়-সৌদি অর্গানাইজেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) এর আইনি পরিচালক তাহা আল-হাজি এই সংখ্যাটিকে নজিরবিহীন বলেছেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব এর আগে কখনো এক বছরে ১০০ বিদেশীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেনি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো সৌদি আরবের মৃত্যুদণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে আসছে। তারা এটাকে অত্যধিক কঠোর শাস্তি হিসেবে অভিহিত করছে। এটি আন্তর্জাতিক পর্যটন ও বিনিয়োগ আকর্ষণে সৌদি আরবের প্রচেষ্টার সাথে সাংঘর্ষিক।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, ২০২৩ সালে সৌদি আরব বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে চীন ও ইরান।
২০২৪ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পাকিস্তানের ২১, ইয়েমেনের ২০, সিরিয়ার ১৪, নাইজেরিয়া থেকে ১০, মিশরের ৯, জর্ডানের ৮ এবং ইথিওপিয়ার ৭জন রয়েছেন। এছাড়া ভারত, সুদান ও আফগানিস্তানের তিনজন এবং শ্রীলঙ্কা, ইরিত্রিয়া ও ফিলিপাইনের একজন করে নাগরিক রয়েছেন।
এসওএইচআর-এর তাহা আল-হাজ্জি বলেন, বিদেশীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী। তারা বড় মাদক কার্টেলের শিকার এবং গ্রেফতার থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্মুখীন হয়।
২০২২ সালে, সৌদি আরব মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের উপর তিন বছরের স্থগিতাদেশ তুলে নেয়। এএফপির তথ্য অনুযায়ী, মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য চলতি বছর ৯২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ৬৯ জন বিদেশী।
রিপ্রেভের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রধান জেদ বাসিউনি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার সৌদি আরবে একটি নতুন সংকটের ইঙ্গিত দেয়। মাদক সংক্রান্ত গ্রেপ্তার এবং মৃত্যুদণ্ড সহিংসতার চক্রকে স্থায়ী করে।
বাসিউনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে বছরের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিদেশি নাগরিকদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ২০২২ সালে একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন যে রাজতন্ত্র মৃত্যুদণ্ড থেকে দূরে সরে গেছে হত্যা বা জনসাধারণের হুমকি দেয় এমন অপরাধ ছাড়া। তবে মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করছেন, বাস্তবতা যুবরাজের এই বক্তব্যকে পুরোপুরি অস্বীকার করে।
আরো পড়তে