ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?
ইরান সরাসরি ইসরায়েল আক্রমণ করেছে। এ অবস্থায় অনেকের মনেই কৌতূহল দেখা দিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হলে কোন দেশ এগিয়ে থাকবে। অস্ত্র এবং গোলাবারুদ একটি যুদ্ধের একমাত্র নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান নয়। একটি দেশের ভূগোল, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনীতি এবং অন্যান্য অনেক কারণ একটি যুদ্ধ জয় বা পরাজয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। যাইহোক, সম্মুখ যুদ্ধের বিজয় মূলত অস্ত্র ও গোলাবারুদের পরিমাণ দ্বারা নির্ধারিত হয়।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সার্বিকভাবে এগিয়ে ইরান। সর্বশেষ গ্লোবাল ফায়ার আর্মস ইনডেক্স অনুসারে, ইরান বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তিগুলির মধ্যে ১৪তম স্থানে রয়েছে, যেখানে ইসরায়েল ১৭তম স্থানে রয়েছে। জনশক্তি, অর্থনীতি, ভৌগোলিক অবস্থান, সামরিক যান, ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদির দিক দিয়ে ইরান ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে।
১অক্টোবর, ইরান ইসরায়েলে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ওই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বিমান ঘাঁটি এবং সামরিক স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইরানের হামলার পর তেহরানে পাল্টা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিল তেল আবিব। অবশেষে ২৬ অক্টোবর (শনিবার) ভোরে ইরানের ওপর বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও দুই ইরানি সেনা নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি হামলায় ইরান কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেটাই দেখার বিষয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরাইল যুদ্ধ চাইলেও ইরানের সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় ইসরাইল। এ কারণেই আজ ইরানে তাদের হামলার সুযোগ ছিল খুবই কম।
এ অবস্থায় ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক শক্তিতে কারা বেশি অগ্রসর তা তুলে ধরেছে আল জাজিরা।
সৈন্য:
সৈন্য সংখ্যায় ইরান ইসরায়েলের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তেহরানে ৬১০,০০০ সক্রিয় সৈন্য রয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলের সৈন্য সংখ্যা১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ সৈন্য।।
রিজার্ভ সৈন্য:
রিজার্ভ সৈন্যের দিক থেকে ইসরাইল ইরানের চেয়ে এগিয়ে। দেশে ৪ লাখ ৬৫ হাজার রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে। অন্যদিকে ইরানের রয়েছে ৩ লাখ ৩৫ হাজার রিজার্ভ সৈন্য।
প্রতিরক্ষা বাজেট:
ইরান ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাজেটের কাছাকাছিও নেই। ইসরাইল গত বছর প্রতিরক্ষা খাতে ২৭.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। অন্যদিকে ইরান এ খাতে ১০.৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। অর্থাৎ প্রতিরক্ষা খাতে ইরানের চেয়ে দেড় গুণ বেশি খরচ করেছে ইসরাইল।
যুদ্ধবিমান:
ইসরায়েলের ৩৪৫ টি যুদ্ধবিমান রয়েছে। যা USA-এ তৈরি। অন্যদিকে ইরানের রয়েছে ৩১২টি যুদ্ধবিমান। যেটি রাশিয়ার তৈরি পুরনো ফাইটার প্লেন।
বিমান প্রতিরক্ষা:
ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম যেমন আয়রন ডোম, ডেভিড লিং এবং অ্যারো সিস্টেম ইত্যাদি । ইরানের কাছে রয়েছে বাবর-৩৭৩ এস-৩০০ এবং খোরদাদ।
আর্টিলারি:
ইসরায়েলের ৫৩০ টি কামান রয়েছে। অন্যদিকে ইরানের কাছে ৬ হাজার ৭৯৮টির বেশি আর্টিলারি রয়েছে।
হেলিকপ্টার:
হেলিকপ্টারের সংখ্যায় ইরান এগিয়ে। এক্ষেত্রে তেল আবিব পিছিয়ে রয়েছে। ইরানের ৫৭টি হেলিকপ্টারের বিপরীতে ইসরায়েলের রয়েছে ৪৩টি হেলিকপ্টার।
সাবমেরিন:
সাবমেরিনের দিক থেকে ইরান খুবই শক্তিশালী। দেশটিতে ১৭টি সাবমেরিন রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের রয়েছে ৫টি সাবমেরিন।
নৌশক্তি:
নৌশক্তির দিক থেকে ইসরায়েলের চেয়ে এগিয়ে ইরান। ইরানের মোট ১০১টি যুদ্ধজাহাজ আছে, যেখানে ইসরায়েলের আছে মাত্র ৬৭টি।
তবে সামরিক শক্তি পারমাণবিক বোমার কথা উল্লেখ করে না। এক্ষেত্রে ইরানের কাছে পারমাণবিক বোমা নেই, কিন্তু ইসরাইল আছে।
আরো পড়ুন