ইরান ইসরায়েলে সহস্রাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করবে
১অক্টোবর ইরান ইসরায়েলে ১৮১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারপর থেকে, ইসরায়েল প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, তেহরান সম্ভাব্য হামলার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিকে কাতারভিত্তিক আল জাজিরা জানিয়েছে, লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলার পরিধি তীব্র হলে ইরান যুদ্ধে যোগ দেবে। আক্রমণের পরিসর কম হলে কিছু নাও করতে পারে। তারা মূলত যুদ্ধ চায় না। তবে দেশটি তার সৈন্যদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
চার ইরানি কর্মকর্তা টেলিফোন সাক্ষাত্কারে মিডিয়াকে বলেছেন যে সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলি হামলার জবাব দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীকে ধারাবাহিক পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা বলেছে, ইসরাইল হামলা করলে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হবে। তা হলে ইরান অবশ্যই পাল্টা আক্রমণ করবে। কিন্তু ইসরায়েল যদি তার ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঘাঁটিতে শুধুমাত্র ‘সীমিত’ হামলা চালায়, তাহলে তারা পাল্টা জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
তবে চার কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন যে সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খামেনি ইরানের তেল, শক্তি এবং পারমাণবিক অবকাঠামোতে হামলা হলে বা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা নিহত হলে একটি বড় পাল্টা আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
চার কর্মকর্তার মধ্যে দুইজন দেশটির সজাগ বিপ্লবী গার্ডের সদস্য। তারা বলেছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হলে পাল্টা আক্রমণ হিসেবে ইসরায়েলে ১০০০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পরিকল্পনা বিবেচনা করা হচ্ছে। উপরন্তু, পাল্টা আক্রমণের অংশ হিসাবে, প্রক্সি বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে, যা পারস্য সাগর এবং হরমুজ প্রণালীর মধ্য দিয়ে তেল সরবরাহ ও পরিবহন ব্যাহত করবে, বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ইরান প্রকাশ্যে বলছে তারা যুদ্ধ চায় না। কিন্তু ইসরাইল বড় ধরনের হামলা চালালে দেশটির নেতারা বসে থাকতে পারবেন না। কারণ তারা নিজেদেরকে সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বল হিসেবে দেখতে চায় না। ইরানের নেতারা নিজেদের শক্তিশালী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবে, বিশেষ করে হামাস ও হিজবুল্লাহর বেশ কয়েকজন নেতাকে হত্যার পর।
লেবাননে ইসরায়েলের বিমান হামলায় ঘুমন্ত তিন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ লেবাননের হাসবাইয়া শহরে নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় ইসরায়েলি হামলায় ৩ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আল জাজিরা জানিয়েছে যে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে হাসবাইয়া শহরের একটি কম্পাউন্ডে দুই ফটোসাংবাদিক এবং একজন সহযোগী (টেকনিশিয়ান) নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন ফটোসাংবাদিক ঘাসান নাজ্জার ও সহকারী টেকনিশিয়ান মোহাম্মদ রেদা। হিজবুল্লাহ-সংশ্লিষ্ট আল-মানার টিভি জানিয়েছে যে তাদের ফটোসাংবাদিক উইসাম কাসিমও নিহত হয়েছেন।
আলজাজিরার সাংবাদিক ইমরান খান বলেন, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরটিতে এটি খুবই গুরুতর ঘটনা। ইসরাইল কোনো সতর্কতা জারি করেনি। হাসবাইয়া খালি করার নির্দেশ নাই। এলাকাটি আসলে তুলনামূলকভাবে শান্ত ছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানান, যে বাংলোতে লোকজন ঘুমাচ্ছিল সেটি সরাসরি ইসরাইল লক্ষ্য করে। স্থানীয় নিউজ স্টেশন আল জাদিদ দ্বারা সম্প্রচারিত ফুটেজে ধসে পড়া ভবন এবং গাড়িগুলোকে ধুলো ও ধ্বংসস্তূপে আবৃত ‘প্রেস’ লেখা দেখা গেছে। লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জিয়াদ মাকারি এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ তিনি লিখেছেন, এটি একটি হত্যা।
মনিটরিং এবং ট্র্যাকিংয়ের পরে এটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে করা হয়। সাতটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্বকারী ১৮ জন সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।