রাইসির জানাজায় ২০ লক্ষ মানুষ, আয়াতুল্লাহ খামেনির ইমামতি: অংশ নেন হামাস প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও তার সঙ্গীদের জানাজায় লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন। এই নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আলী খামেনি। বুধবার সকালে ইব্রাহিম রাইসিসহ দুর্ঘটনায় নিহত আটজনের কফিন তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়। এর আগে মঙ্গলবার, তাবরিজ, কোম এবং তেহরানের গ্র্যান্ড মোসাল্লা মসজিদে কয়েক হাজার মানুষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
তেহরানে অনুষ্ঠিত নামাজে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ প্রতিরোধের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল শেখ নাইম কাসেমসহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রতিরোধ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নামাজে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ এবং ইরানের আধাসামরিক বাহিনী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় তিনি শোকাহতদের উদ্দেশে বলেন, আমি ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে, গাজার প্রতিরোধ গোষ্ঠীর পক্ষে সমবেদনা জানাতে এসেছি। এ সময় তিনি রমজানে তেহরানে রাইসির সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা স্মরণ করেন। বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ, রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রদূত এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরাও মোনাজাতে অংশ নেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ছাড়াও ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আল-সুদানী, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ, রুশ প্রতিনিধি দল, আফগানিস্তানের তালেবান প্রতিনিধিরা নামাজে অংশ নেন। ইরান স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল ৪টার দিকে বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রাইসির স্মরণে একটি স্মরণসভার আয়োজন করে। এতে তুরস্ক, ইরাক, ভারত, রাশিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, চীন, আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার প্রতিনিধি ছিলেন।
বুধবার সন্ধ্যায় দাফনের জন্য রাইসির মরদেহ তার নিজ শহর মাশহাদে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার মাশহাদে ইমাম রেজা মাজারে রাইসিকে দাফন করা হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কবরস্থান,এটি প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীকে আকর্ষণ করে, ইরানের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া বলছে এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত অন্য কর্মকর্তাদের মরদেহ দাফনের জন্য নিজ নিজ শহরে পাঠানো হবে।
প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু বড় ক্ষতি: পুতিন
আনাদোলুতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুকে ‘বিশাল ক্ষতি’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি রাইসিকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য অংশীদার এবং তার প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী একজন হিসাবে বর্ণনা করেন। এছাড়া রাইসির মৃত্যুর পরও ইরানের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যু ইরান ও ইরানের জনগণের জন্য প্রথম এবং সর্বাগ্রে একটি বড় ক্ষতি।” তিনি একজন অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য মানবিক নেতা , একজন স্পষ্টভাষী, আত্মবিশ্বাসী মানুষ যিনি তার জাতীয় স্বার্থ দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন। তিনি অবশ্যই প্রতিশ্রুতিশীল একজন মানুষ ছিলেন এবং তার সাথে কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমি শুধু মনে রাখি যে, আমরা যদি কোনো বিষয়ে একমত হই, আমরা সবসময় নিশ্চিত হতে পারি যে সেই চুক্তিগুলো পূরণ হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯ মে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি হেলিকপ্টার ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে বিধ্বস্ত হয়। দীর্ঘ অনুসন্ধান অভিযানের পর সোমবার পাহাড়ি ও বরফে ঢাকা এলাকা থেকে হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। ইরানি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পীর হোসেইন কোলিভান্দ সোমবার বলেছেন, হেলিকপ্টারের সব যাত্রী ও ক্রু দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
চীন ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আল আরাবিয়া জানিয়েছে যে চীন ইরানের সাথে কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করতে, অভিন্ন স্বার্থ রক্ষা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, মঙ্গলবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। মঙ্গলবার সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহদি সাফারির সঙ্গে বৈঠককালে ওয়াং ই এ মন্তব্য করেন।
ওয়াং ই বলেন, ইরান অসামান্য নেতাদের হারিয়েছে এবং চীন ভালো বন্ধু ও অংশীদারদের হারিয়েছে। রোববার ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কঠিন সময়ে চীন দৃঢ়ভাবে ইরানি বন্ধুদের পাশে রয়েছে। রোববার আজারবাইজানের সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের যৌথভাবে নির্মিত বাঁধের উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। সেখানে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভও ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে ইব্রাহিম রাইসি, আবদুল্লাহিয়ান এবং তাদের সাথে থাকা অন্যান্য কর্মকর্তারা তিনটি হেলিকপ্টারের বহর নিয়ে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাব্রিজে ফিরছিলেন। মাঝ আকাশে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। পরে সব লাশ উদ্ধার করা হয়।
ইরানে সব বিয়ে স্থগিত, সিনেমা হল বন্ধ:
ইরানে ৭ দিনের জন্য সব ধরনের উৎসব স্থগিত করা হয়েছে। তার সঙ্গে সব ধরনের বিয়েও স্থগিত করা হয়েছে। যাদের বিয়ে আগেই ঠিক করা হয়েছিল তাদেরও স্থগিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সম্মানে ইরানে সব ধরনের বিয়ে স্থগিত করা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বুধবার (২২ মে) ইরানি গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছে। ইরানের সকল কমিউনিটি সেন্টার শোকের সময়কালের জন্য বন্ধ থাকবে। এছাড়া সব বিয়েও স্থগিত থাকবে।
ইরানি গণমাধ্যম আরও বলেছে, প্রেসিডেন্ট রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ানকে সম্মান জানাতে সিনেমাসহ সব সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে কনসার্টও। এসব কার্যক্রম সাতদিন বন্ধ থাকবে।