গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ১৩ হাজার, নারী ও শিশু ৯০০০
গাজায় ইসরায়েলি হামলা ৭ অক্টোবর থেকে অব্যাহত রয়েছে। প্রায় দেড় মাস ধরে অবরুদ্ধ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে হামলায় অন্তত ১৩,০০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। ৫৫০০০ এর বেশি শিশু এবং ৩৫০০০ এরও বেশি নারী নিহত হয়। রোববার সন্ধ্যায় গাজা প্রশাসনের জনসংযোগ বিভাগের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, গাজা প্রশাসনের জনসংযোগ বিভাগ এক বিবৃতিতে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দিয়েছে। সেই বিবৃতি অনুযায়ী, গাজায় মৃতের সংখ্যা ১৩,০০০ ছাড়িয়েছে। এ সময় ইসরায়েলি হামলায় সাড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি শিশু ও সাড়ে তিন হাজার নারী নিহত হয়।
মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া বাড়ির নিচে কেউ চাপা পড়েছে কিনা কিংবা প্রয়োজনীয় কোন কিছু এখনো টিকে রয়েছে কিনা তাই খতিয়ে দেখছেন গাজার অনেক পরিবারের সদস্যরা
গাজার জনসংযোগ বিভাগের মতে, এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৩০,০০০ গাজাবাসী আহত হয়েছে। আহতদের ৭৫ শতাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি বর্বর হামলার কারণে এখনো ছয় হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হওয়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে তারা সবাই চাপা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অবকাঠামোগত ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ৮৩টি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে এবং তাদের হামলায় ১৬৬টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় তিনটি চার্চেও হামলা হয়। ইসরাইল গাজায় ২৫টি হাসপাতাল ও ৫২টি চিকিৎসা কেন্দ্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৪৩,০০০আবাসন ইউনিট সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ২২৫,০০০ ইউনিট কোনও না কোনওভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হিসাবে, গাজা উপত্যকার মোট আবাসন ইউনিটের অন্তত ৬৬ শতাংশ ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফিলিস্তিনি মিডিয়া অফিসের মতে, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের ফলে এই পর্যন্ত ১২৭০ টি গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের হাত থেকে রেহাই পাননি চিকিৎসকরাও। হামলায় মোট ২০০ চিকিৎসক, ২২ জন সিভিল ডিফেন্স কর্মী এবং ৫১ জন সাংবাদিকও নিহত হন।
জাতিসংঘের একজন সাবেক কর্মকর্তাও আলাদা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গাজায় যা হচ্ছে তা গণহত্যা।গাজায় ইতিমধ্যে গণহত্যা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন একজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ। ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক জন কুইগলি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গণহত্যা সম্পর্কে একটি জনপ্রিয় ধারণা রয়েছে। কোনো একটি স্থানে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা হলে তা গণহত্যা; যখন একটি রাষ্ট্র কিছু শর্ত আরোপ করে যা একটি দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের মৃত্যু ঘটায়।’ তাই গণহত্যা ।
তিনি বলেন, “তাই আমি মনে করি, ইসরায়েলি সরকার যখন উত্তর গাজা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ বা শর্ত দেয় তখন গণহত্যা শুরু হয়েছিল। কারণ ইসরায়েল জানত যে এত বেশি মানুষের মৃত্যু ছাড়া এ ধরনের উচ্ছেদ সম্ভব নয়।
জাতিসংঘের একজন সাবেক কর্মকর্তাও আলাদা সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গাজায় যা হচ্ছে তা গণহত্যা। ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অধিকার ইসরায়েলের নেই বলে মন্তব্য করেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ।
ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার থাকলেও ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালানোর অধিকার তাদের নেই বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সিসকা আলবানিজ। বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে (আগের টুইটার) এক পোস্টে তিনি এই মন্তব্য করেন।
পোস্টে, ইসরায়েলের দখলে থাকা ফিলিস্তিনি অঞ্চলগুলির জন্য জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেছেন যে ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ‘সামরিক দখলে’ রেখেছে।
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণে চার লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শনিবার এক বিবৃতিতে ওসিএ এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, গাজার মানুষ প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। বিভিন্ন রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
শুক্রবার, ইসরাইল উত্তর গাজার ১১ লাখ বেসামরিক নাগরিকদের দক্ষিণ গাজায় চলে যাওয়ার জন্য ২৪ ঘন্টা সময়সীমা দিয়েছে।
জাতিসংঘ এই ঘোষণা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, এটি খুবই বিপজ্জনক এবং কিছু ক্ষেত্রে অবাস্তব।
গত ৭ অক্টোবর গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। ইসরায়েলের মতে, হামাসের এই হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া হামাস ইসরাইল থেকে দুই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে।
৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল গাজা অবরোধ করে নির্বিচারে বোমা হামলা চালাচ্ছে। তারা গাজায় স্থল অভিযানও চালাচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা গাজায় হামলা অব্যাহত রাখবে। এরই মধ্যে রোববার আল শিফা হাসপাতালের নিচে সুড়ঙ্গের ভিডিও প্রকাশ করেন তারা। সেখানে হামাসের ঘাঁটি রয়েছে বলে দাবি তাদের। যদিও হামাস বরাবরই এই দাবি অস্বীকার করে আসছে।