November 21, 2024
ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইরান-সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ: পাল্টে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ

ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইরান-সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ: পাল্টে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ

ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইরান-সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ: পাল্টে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ

ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ইরান-সৌদি আরব ঐক্যবদ্ধ: পাল্টে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যুতে ঐক্য হতে যাচ্ছে ইরান-সৌদি আরব। অন্যদিকে তুরস্ক, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। চলমান এই যুদ্ধে বিশ্বের বেশ কয়েকটি পরাশক্তি ও শক্তিশালী দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। চীন একটি বিবৃতি জারি করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। কয়েকটি শক্তিশালী দেশ দ্বি-রাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। চীন, রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, বেলারুশ, ভিয়েতনাম, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সিরিয়া, রাশিয়াসহ অনেক দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবিতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বিক্ষোভে লাখ লাখ শান্তিপূর্ণ মানুষ অংশ নেয়। এ সময় তারা ফিলিস্তিনি পতাকা ও বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড তুলে ‘মুক্ত ফিলিস্তিন ‘ স্লোগান দেন। এছাড়া তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর  সমালোচনা করেন।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে আগামীকাল সোমবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোটের আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কো যুদ্ধবিরতি, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদের সমস্ত কাজের নিন্দা করে একটি খসড়া প্রস্তাবে ভোটের ডাক দিয়েছে রাশিয়া।

জাতিসংঘে রাশিয়ার ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর দিমিত্রি পলিয়ানস্কি বলেছেন যে গত শুক্রবার জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের অধিবেশনে যে খসড়া প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল তাতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। সোমবার বিকাল ৩টায় ভোটগ্রহণ হতে পারে।

এক পৃষ্ঠার খসড়া প্রস্তাবে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রদান এবং প্রয়োজনে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু সেখানে সরাসরি হামাসের উল্লেখ নেই।

ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের পুরো রাজনীতিই পাল্টে যাবে বলে আগেই জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভবিষ্যদ্বাণীটি সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। এরই মধ্যে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা পররাষ্ট্রনীতির পুনর্মূল্যায়ন করছেন।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সৌদি আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের দীর্ঘদিনের উদ্যোগ স্থগিত করেছে। এরই মধ্যে সৌদি কর্মকর্তারা মার্কিন কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি শনিবার এ বিষয়ে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ স্থগিত করেও মধ্যপ্রাচ্যের আরেক প্রভাবশালী দেশ ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে সৌদি আরব। তিন দিন আগে, ইরানের সরকারী বার্তা সংস্থা IRNA জানিয়েছে যে ইরানের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি এবং সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান গত বুধবার (১১ অক্টোবর) ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রথমবারের মতো ফোনে আলাপ করেছেন। এই দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে চীনের মধ্যস্থতার পর গত বুধবার প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দুই পরাশক্তি। দুই দেশের নেতারা ফোনে ৪৫ মিনিট কথা বলেন।

১১ অক্টোবর একটি সাক্ষাত্কারে, ইরানের রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক বিষয়ের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ মোহাম্মদ জামশিদি বলেছিলেন যে ইব্রাহিম রাইসি এবং মোহাম্মদ বিন সালমান প্রথমবারের মতো ফোনে কথা বলেছেন। এ সময় দুই নেতা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হন। একই সঙ্গে তারা ইসলামি ঐক্যের ওপর জোর দেন। আলোচনায় তারা একমত হয়েছেন যে ফিলিস্তিনে হামলার জন্য মার্কিন গ্রিন সিগন্যাল এবং সেখানে ইসরায়েলের অপরাধ তাদের জন্য মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতার কারণ হবে।

কিন্তু ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলার আগে পরিস্থিতি মোটেও এমন ছিল না। দুই দেশের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের শান্তি চুক্তি অনেক দূর এগিয়ে যাবে।তেলআবিবের সঙ্গে শান্তিচুক্তির বিনিময়ে সৌদির নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বড় আকারের নিশ্চয়তা চায় রিয়াদ। এমনকি এ কারণে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিও ছাড় দিতে রাজি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

তবে, ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে কোনো চুক্তি করলে তা আরবদের ক্ষুব্ধ করতে পারে। ফলে পুরো অঞ্চলে জুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সৌদি-ইসরায়েল চুক্তি আলোচনায় জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সৌদি-ইসরায়েল চুক্তি আলোচনা এখন এগোবে না। এআর-এর পরে আলোচনা শুরু হলেও সৌদিরা ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েলি ছাড়কে অগ্রাধিকার দেবে। এতে বোঝা যায় রিয়াদ ফিলিস্তিন ইস্যুকে পুরোপুরি ত্যাগ করেনি। এছাড়া সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান ইসরায়েলে হামাসের হামলার নিন্দা করতে সৌদি আরবকে চাপ দিলেও তা করতে অস্বীকার করেন।

আরও পড়ুন

ইসরায়েলের নির্মম নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না ফিলিস্তিনি শিশুরাও

ওয়াশিংটন ভিত্তিক মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ইরান বিষয়ক কর্মসূচির পরিচালক অ্যালেক্স ভাটাংকা বলেছেন, গত সপ্তাহে হামাসের হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে সৌদি ও ইরানের নীতি পরিবর্তন হয়েছে। সৌদি আরব এখনো মধ্যপ্রাচ্যকে বিশ্বস্ত মনে করে। সৌদি আরবকে এখন আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে ইরান মনে করে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধই তার প্রথম অগ্রাধিকার।

X