ইসরাইল নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে আবারো যুদ্ধাপরাধ করছে
জেনিনে ব্যাপক ড্রোন হামলা, রাস্তায় বন্দুক হামলা , জরুরী বৈঠকের আহ্বান হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়েছে।ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের জেনিন ক্যাম্পে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় নির্লজ্জ অভিযান পরিচালনা করছে ইসরাইল। দুই দিনের অভিযানে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। জেনিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অধিকৃত পশ্চিম তীরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এভাবে ইসরাইল নিরস্ত্র মানুষের বিরুদ্ধে আবারো যুদ্ধাপরাধ করছে।
অবৈধ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সামরিক আগ্রাসনের মুখে জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি পালিয়েছে। ইসরা য়েল সোমবার অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করেছে। এতে ভারি অস্ত্রসহ এক থেকে দুই হাজার সৈন্য অংশ নেয়। এ সময় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলি হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় শরণার্থী শিবিরে শিশু সহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে।। অন্যদিকে আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। জেনিনের ডেপুটি গভর্নর কামাল আবু আল-রব বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “এখন পর্যন্ত ৩,০০০ মানুষ শরণার্থী শিবির ছেড়েছে।” তিনি বলেন, যারা পালিয়েছে তাদের জেনিনের স্কুল ও অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এই শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ বাস করে। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্টও জানিয়েছে, তিন হাজার মানুষ পালিয়ে গেছে। পলায়নের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। কারণ ইসরায়েলিরা বলেছে, তারা আরও কয়েকদিন তাদের অভিযান চালিয়ে যেতে পারে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর বড় আকারের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে। জেনিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ অধিকৃত পশ্চিম তীরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। পশ্চিম তীরে দোকানপাট ও অফিস বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন ছুটির জন্য ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। জেনিন ক্যাম্প, প্রায় ১৮০০০ ফিলিস্তিনিদের বসবাস, ইসরায়েলি বাহিনী এবং হাজার হাজার সৈন্য দ্বারা ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে -এবং রাস্তায় রাস্তায় বন্দুক হামলা হয়।
ফিলিস্তিন রেড ক্রসের একজন কর্মকর্তা জানান, জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে তিন হাজার ফিলিস্তিনিকে স্থানীয় হাসপাতালে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকেই অসুস্থ ও বৃদ্ধ।
ইসরায়েলের ভাষ্য, এই অভিযানের মাধ্যমে ‘সন্ত্রাসী আস্তানা’কে টার্গেট করা হচ্ছে। তবে ফিলিস্তিনি পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইসরাইল তাদের নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে আবারও যুদ্ধাপরাধ করছে।
জাতিসংঘ বলছে, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। অভিযানের ফলে শরণার্থী শিবিরের বিশাল এলাকা জুড়ে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে যারা ক্যাম্প ত্যাগ করতে চায় তারা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে পারছে না বলে জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর ব্যাপক ‘ফায়ারিং ‘ হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে যে তারা জেনিন এলাকায় একটি “সন্ত্রাসী অবকাঠামো” আঘাত করেছে এবং ২০ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে।
তবে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শেতায়েহ বলেছেন, ইসরাইল শিবিরটি ধ্বংস করে সেখানকার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছে। জেনিনের বড় শরণার্থী শিবিরের কেন্দ্রস্থলে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ড্রোন হামলা হয়। এটি গত কয়েক বছরে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলার একটি। তিনি বলেন, নিয়মিত বিরতিতে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন এবং উড়ন্ত ড্রোনের আওয়াজও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, এ পর্যন্ত সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন যে তাদের লক্ষ্য সাধারণ ফিলিস্তিনিরা নয় বরং জেনিন এবং শরণার্থী শিবিরে অবস্থিত জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি, যেগুলি ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে তিনি বলেছেন।
প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। জেনিনের কয়েকটি রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে ফিলিস্তিনিরা। তরুণ বাধ্য হয়ে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলি সামরিক জিপের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে এবং সেনারা পাল্টা গুলি চালায়। জেনিন ব্রিগেড নামে একটি ফিলিস্তিনি দল বলেছে যে তারা শেষ নিঃশ্বাস এবং গুলি পর্যন্ত লড়াই করবে,জেনিন ব্রিগেড বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র দল নিয়ে গঠিত বলে জানা গেছে।
গত এক বছরে, জেনিন শরণার্থী শিবিরে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি সামরিক হামলা হয়েছে এবং ইসরায়েলিদের উপর গুলি চালানোর বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময়, এলাকায় ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। ২০০২ সালের এপ্রিলে, ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে একটি পূর্ণ-স্কেল সামরিক অভিযান শুরু করে যাতে কমপক্ষে ৫২ ফিলিস্তিনি এবং ২৩ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়।
বর্বর ইসরাইলি বাহিনীর পৈচাশিক এই হামলা নতুন নয় । হাজার হাজার নিরপরাধ শিশু মা-বোন সহকারে অনেক ফিলিস্তিনিকে জীবন দিতে হয়েছে এই অবৈধ দখলদার ইসরাইলের হাতে। কিন্তু বিশ্বের সকল অর্গানাইজেশন গুলো কেন যেন দেখেও না দেখার মত অপরাধ করেই চলছে।
1 Comment