April 1, 2025
দুনিয়া-জুড়ে ঈদ আনন্দ: গাজায় রক্ত, ক্ষুধা আর কান্না

দুনিয়া-জুড়ে ঈদ আনন্দ: গাজায় রক্ত, ক্ষুধা আর কান্না

দুনিয়া-জুড়ে ঈদ আনন্দ গাজায় রক্ত, ক্ষুধা আর কান্না

দুনিয়া-জুড়ে ঈদ আনন্দ: গাজায় রক্ত, ক্ষুধা আর কান্না

আজ সবাই বলছে যে ঈদের চাঁদ দেখা গেছে। কিন্তু গাজায় নির্যাতিত মুসলমানদের আকাশে এখনও চাঁদ দেখা যায়নি। আমরা সবাই মিলে সেই দিন বাস্তবে ঈদ উদযাপন করব, যেদিন আল্লাহর দুনিয়ায় কুরআনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। গাজায় নির্যাতিত মুসলিম মা বোন শিশুসহ সকলেই আল্লাহর বিধান মোতাবেক দেশ পেয়ে মুচকি হাসি দিবে। তাইতো বিদ্রোহী কবি বলেছেন,
‘যতদিন না কায়েম হবে খোদার ধরায় তাঁরই দ্বীন, কিসের আবার ঈদের খুশি? এ অনুষ্ঠান অর্থহীন’’

বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা তাদের ঘরে ঈদ উদযাপনে ব্যস্ত, ঈদের কেনাকাটায় পাল্লা ভারী হচ্ছে সকলের। কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজায় ঈদ উদযাপন নেই। শুধু কান্না, ক্ষুধা আর বোমার ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ। ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে প্রতিদিন শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বর্বর বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজাবাসীর এই করুণ  অবস্থায়  বিশ্বের সকল মুসলমান যদি জেগে না উঠে আর থ মানব হৃদয়ে  যদি কেঁপে না ওঠে। তাহলে সময় বেশি দূরে নয় অলস ভোগ-বিলাসী পৃথিবীবাসী করুণ অবস্থার সাক্ষাৎ পাবেই।  এটাই বাস্তবতা।

যদিও রমজানের শেষ দিকে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছিল, ১৮ মার্চ ইসরায়েল একতরফাভাবে তা ভেঙে নতুন আক্রমণ শুরু করে। তারপর থেকে প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং কমপক্ষে ১,৯৮৪ জন আহত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে বোমাবর্ষণের ফলে গাজার অনেক এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, চলমান আক্রমণে মৃতের সংখ্যা ৫০,২০৮ জন ছাড়িয়ে গেছে এবং ১,১৩,৯১০ জন আহত হয়েছে। তবে গাজা মিডিয়া অফিস বলছে যে মৃতের সংখ্যা আসলে ৬১,৭০০ এরও বেশি, যা আরও বাড়তে পারে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া মানুষের প্রকৃত সংখ্যা এখনও জানা যায়নি।

গাজার পাশাপাশি দক্ষিণ লেবাননেও ইসরায়েলি হামলা চলছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে হিজবুল্লাহর সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর এবারও ইসরায়েল প্রথমবারের মতো লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছে। ফলে লেবাননের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

অন্যদিকে, তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক করে দিয়েছে যে এই পরিস্থিতির ফলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তীব্র ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছে। মুসলমানরা যখন তাদের পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করছে, তখন গাজার মানুষ সামান্য খাবারের জন্য কাঁদছে।

গাজায় এই বিপর্যয় সত্ত্বেও, বিশ্ব থেকে কার্যত কোনও জোরালো প্রতিবাদ নেই। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে আল কুদস দিবস পালিত হয়েছে। এটি একটি ইহুদি-বিরোধী এবং ফিলিস্তিনি-পন্থী অনুষ্ঠান, যা রমজানের শেষ শুক্রবার, জুমাতুল বিদারে পালিত হয়। শিকাগোর বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন – “বর্ণবাদ: দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য খারাপ, ফিলিস্তিনের জন্য খারাপ”। তবে, নিরাপত্তার ভয় এবং অভিবাসন নীতির কারণে অনেকেই বিক্ষোভে যোগ দিতে সাহস পাননি।

গাজার উপর ইসরায়েলি অবরোধ চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহে বাধা দিচ্ছে। হাসপাতালগুলি আহতদের স্রোত সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, অনেকেই চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। রক্তের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। ডাক্তাররা আহতদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা করছেন, কিন্তু ওষুধের অভাবে তারা কার্যত অসহায়।

ইতিমধ্যে, ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মিডল ইস্টার্ন স্টাডিজকে ইসরায়েল-বিরোধী অবস্থান নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে এবং এর ফলে কেন্দ্রের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

গাজায় মানবিক বিপর্যয় সারা বিশ্বের চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যেন ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে ধ্বংস করার যেনো  বৈধ  লাইসেন্স পেয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে শিশুদের কান্নার ভিডিও, আহতদের আর্তনাদ – এগুলোর কোনওটিই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিন্দুমাত্র নাড়া দিতে পারছে না।

বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা যখন তাদের ঘরে ঈদ উদযাপন করছে, তখন গাজার মানুষ বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সেবা – সবকিছুই এখন তাদের জন্য দুষ্প্রাপ্য। এই ঈদ তাদের জন্য কেবল বেঁচে থাকার আরেকটি দিন, আনন্দের নতুন বার্তা নয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X