যাকাত কী? যা জানতে হবে
যাকাত ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। ঈমানের পর, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য ইবাদত হল নামাজ এবং যাকাত। কুরআনে অনেক জায়গায় নামাজ এবং যাকাত সম্পর্কে আদেশ দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য অফুরন্ত পুরষ্কার, রহমত এবং ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, সেই সাথে আত্মশুদ্ধিরও অন্যতম মাধ্যম হলো যাকাত।যাকাত, যার মাধ্যমে মানুষের সম্পদ পবিত্রতা লাভ করে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ
আর তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু আগে পাঠাও, তা আল্লাহর কাছে পাবে।” প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ তোমাদের কর্মের দ্রষ্টা। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ তোমাদের কর্মের প্রতি দৃষ্টি রাখেন। (সূরা আল-বাকারা: ১১০)
যাকাত, (الزَّكٰوةَ) আরবি শব্দ যার অর্থ হলো পবিত্রতা, বৃদ্ধি পাওয়া, বরকত হওয়া, পরিপূর্ণ হওয়া ইত্যাদি। যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। প্রতিটি স্বাধীন, মুসলিম পুরুষ ও নারীর প্রতি বছর তাদের আয় এবং সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করা বাধ্যতামূলক, যদি তা ইসলামী আইন দ্বারা নির্ধারিত সীমা (নিসাব) অতিক্রম করে, তাহলে তা দরিদ্র ও অভাবীদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়।
যাকাত প্রবর্তন করা হয়েছিল হিজরি দ্বিতীয় বছরে। যদি কোন মুসলিম পুরুষ বা মহিলার নিসাবের সমান সম্পদ থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ। তবে, যাকাত সকলের উপর ফরজ নয়। কিছু শর্তে যাকাত ফরজ।
সাধারণত, যদি সম্পত্তি ১ হিজরি বছরের জন্য নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে, তাহলে মোট সম্পত্তির ২.৫ শতাংশ (২.৫%) অথবা ১/৪০ ভাগ বণ্টন করতে হয়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে, হজ এবং যাকাত কেবল শর্তসাপেক্ষ, অর্থাৎ ধনীদের জন্য ফরজ বা প্রয়োজনীয়। পবিত্র কুরআনে। নামাজের পর এটি সবচেয়ে বেশিবার উল্লেখ করা হয়েছে।
যাকাতের কত প্রকার
যাকাত ৪ প্রকার, এগুলো হলো
১. ফসলের যাকাত; ২. পশুপালনের যাকাত; ৩. সোনা বা রূপার যাকাত; ৪. রোজার যাকাত।
১. ফসলের যাকাত – শরীয়তে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফসলের যাকাত প্রদানের পরিমাণ ফসল থাকলে যাকাত দিতে হবে।
২. পশুপালনের যাকাত – শরীয়তে নির্দিষ্ট পরিমাণ গবাদি পশু থাকলে যাকাত দিতে হবে।
৩. সোনা বা রূপার যাকাত – অর্থাৎ শরীয়তে নির্দিষ্ট পরিমাণ সোনা বা রূপা থাকলে যাকাত দিতে হবে।
৪. রোজার যাকাত – এই যাকাতকে মূলত সাদাকাতুল ফিতর বা যাকাতুল ফিতর বলা হয়।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তাবলী:
প্রথম শর্ত: ব্যক্তিকে স্বাধীন হতে হবে: কারণ দাসদের উপর যাকাত ফরজ নয়।
দ্বিতীয় শর্ত: মুসলিম হওয়া।
তৃতীয় শর্ত: সম্পদ নিসাব পরিমাণ হতে হবে: শরীয়ত অনুসারে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদকে নিসাব বলা হয়। পরে আলোচনা করা হবে।
চতুর্থ শর্ত: সম্পদের নিসাব পরিমাণ এক হিজরী বছরের জন্য পূর্ণ করতে হবে।
কারা যাকাত নিতেপারে
ইসলামে যাকাত দেওয়া ফরজ। অতএব, যাকাত দেওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণী রয়েছে এবং সেই শ্রেণীর মধ্যেই যাকাত দিতে হবে। সবাই যাকাত গ্রহণ করতে বা যে কাউকে যাকাত দিতে পারে না। মূলত, ইসলামে যাকাত দেওয়ার জন্য আট (৮) শ্রেণী রয়েছে। যাকাত এই ৮ শ্রেণীর মধ্যেই দিতে হবে। পবিত্র কুরআনে এই ৮ শ্রেণীর যাকাত উল্লেখ করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআন অনুসারে, আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِيْ الرِّقَابِ وَالْغَارِمِيْنَ وَفِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِّنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
‘নিশ্চয়ই ছাদাক্বাহ্ (যাকাত) হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (সুরা তাওবা আয়াত-৬০)
অর্থাৎ যাকাত প্রদানের আটটি শ্রেণী বা খাত রয়েছে:
১. দরিদ্র
২. মিসকীন বা অভাবগ্রস্ত
৩. যাকাত আদায়কারী বা প্রতিষ্ঠান
৪. অমুসলিমকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য
৫. দাস মুক্ত করার জন্য
৬. আল্লাহর পথে যুদ্ধরত ব্যক্তিকে
৭. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে ঋণমুক্তির জন্য
৮. ভ্রমণরত মুসাফির ব্যক্তিকে ।