মায়েদের ব্রেস্ট-পাম্প ব্যবহারের এদিক সেদিক
কর্মজীবী হওয়ার কারণে অথবা যৌক্তিক কোনো কারণে যেসকল মায়েদের সারাদিন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব হয়ে উঠেনা। সেক্ষেত্রে অনেকেই ব্রেস্ট পাম্পের সাহায্যে দুধ সংরক্ষণ করেন। তবে হ্যাঁ অনর্থক বাজে চিন্তায় শারীরিক সৌঠব আর সৌন্দর্যের অযৌক্তিক রক্ষণাবেক্ষণকে কেন্দ্র করে কখনই পাম্প ব্যবহার করা উচিত নয়।
মায়ের দুধ শিশুর জন্য ফর্মুলা দুধের তুলনায় অনেক বেশি উপকারী। মায়ের শরীর থেকে অ্যান্টিবডি বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। ফর্মুলা দুধে এগুলো থাকবে না। এগুলোতে রোগের ঝুঁকিও বেশি। তবে কর্মজীবী মহিলাদের জন্য সারাদিন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে অনেকেই ব্রেস্ট পাম্পের সাহায্যে দুধ সংরক্ষণ করেন।
মা যখন ঘরের বাইরে থাকেন, তখন সেই দুধ শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানির ব্রেস্ট পাম্প দোকানে, মল বা অনলাইনে পাওয়া যায়। তবে, এই ব্রেস্ট পাম্প সম্পর্কে অনেকেরই অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও, অনেক মহিলা ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করতে ভয় পান।
ব্রেস্ট পাম্প কীভাবে ব্যবহার করবেন?
অনেকের মনে হয় বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাই পাম্পিং করলে দুধ তৈরি হয় না। কেউ কেউ মনে করেন যে এইভাবে দুধ বের করলে স্তনে ব্যথা হবে। আসলে, কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বুকের দুধ পাম্প করে সংরক্ষণ করা খুবই সহজ।
- প্রথমত, মায়ের উচিত আরও বেশি করে পানিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। স্তন্যদানকারী মায়েদের নিজেদের নিয়মিত দুধ পান করা উচিত। শাকসবজি, ফলমূল, মাছ এবং মাংসের পাশাপাশি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কালোজিরা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এতে দুধের সরবরাহ উন্নত হবে।
- দ্বিতীয়ত, শিশুদের সাধারণত উভয় স্তন থেকে পর্যায়ক্রমে দুধ খাওয়ানো হয়। যদি শিশুকে ব্রেস্ট পাম্পের ছয় থেকে আট ঘন্টা আগে শুধুমাত্র একটি স্তন থেকে খাওয়ানো হয়, তাহলে অন্য স্তনে দুধ জমা হবে। এই পরিস্থিতিতে, পাম্প করলে দুধ সহজেই আসবে।
- তৃতীয়ত, যদি আপনি প্রতিদিন একই সময়ে পাম্প করেন, তাহলে সেই সময়ে দুধের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি সময়টি সকাল ৬/৭ হয়, তাহলে সারা রাত এক স্তন থেকে না খাওয়ানোর ফলে সেখানে দুধ জমা হবে। যদি আপনি এমন সময়ে পাম্প করেন, তাহলে দুধ বেরিয়ে আসবে।
- আবার, অফিস থেকে ফিরে, রাত ৭/৮০১ টার দিকে আবার পাম্প করতে পারেন। তারপর সারা দিনের দুধ জমা হবে। এইভাবে, দুইবারে শিশুর জন্য প্রচুর দুধ ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হবে।
- এছাড়াও, স্তন পাম্প করার সময় শান্ত মন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ কখনও কখনও মানসিক অস্থিরতার কারণে দুধের প্রবাহ কমে যেতে পারে।
- বাজারে ম্যানুয়াল এবং স্বয়ংক্রিয় সহ বিভিন্ন ধরণের ব্রেস্ট পাম্প পাওয়া যায়। সাধারণত, একটি ভাল মানের ব্রেস্ট পাম্প পছন্দ করা উচিত, কারণ একটি সস্তা পাম্প কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নাও দিতে পারে।
- দুধ সংরক্ষণের পুরো প্রক্রিয়া জুড়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিন। হাত দিয়ে দুধ বের করার সময়, উভয় হাত গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন। পাম্প ব্যবহার করার সময়, ফুটন্ত গরম জলে সংশ্লিষ্ট অংশগুলি জীবাণুমুক্ত করুন।
- পাম্পের ফানেলটি আপনার স্তনের সাথে রাখুন, যাতে এটি বায়ুরোধী হয়। তারপর হ্যান্ডেল/লিভারে টিপে ধরে রাখুন। এভাবে কয়েকবার ধরে রাখুন এবং ছেড়ে দিন। খুব শীঘ্রই, পাম্পের সাথে সংযুক্ত ফিডারে দুধ জমা শুরু হবে।
- যাদের দুধ আসতে সময় নেয় বা আসেনা, তাদের জন্য পাম্প করার আগে স্তন ম্যাসাজ করুন। তারপর পাম্প শুরু করুন, আশা করি দুধ আসতে শুরু করবে।
- মনে রাখা উচিত যে, সকল মায়ের দুধের সরবরাহ একই রকম হবে না। মায়ের বুকে দুধের পরিমাণ শারীরিক সুস্থতা, স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস এবং শিশুর দুধের চাহিদা সহ অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে। তাই, স্তন পাম্প করার আগে, স্তনে পর্যাপ্ত দুধ আছে কিনা তা বোঝা প্রয়োজন।
- সর্বোপরি, ব্রেস্ট পাম্প দিয়ে বা হাতে দুধ বের করার সময় যদি আপনি স্তনে ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে আপনার দুধ বের করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ বল প্রয়োগ করলে আপনি স্তনের সংবেদনশীল টিস্যুর ক্ষতি করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে, আপনি একজন ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
ব্রেস্ট পাম্প প্রচলিত ধারণা
১) ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করা বেদনাদায়ক:
অনেকেই মনে করেন যে ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করলে স্তনের পেশী তন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শুধু তাই নয়, তারা মনে করেন যে এই মেশিন ব্যবহার করা বেশ বেদনাদায়ক। এই ধারণাটি সঠিক নয়। আপনি যদি সঠিক পদ্ধতিটি জানেন এবং এটি ব্যবহার করেন, তাহলে ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করা বেদনাদায়ক নয়। আজকাল বাজারে পাওয়া ব্রেস্ট পাম্পগুলিতে ‘অ্যাডজাস্টেবল সাকশন লেভেল’ রয়েছে। এর অর্থ হল মহিলারা তাদের চাহিদা এবং আরামের উপর নির্ভর করে ব্রেস্ট পাম্পের ‘সাকশন লেভেল’ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তবে, যদি ডিভাইসের ফ্ল্যাঞ্জের আকার বা ‘সাকশন সেটিং’ সঠিক না হয়, তাহলে মায়েদের দুধ সংরক্ষণে সমস্যা হতে পারে।
২) ব্রেস্ট পাম্প বুকের দুধের পরিমাণ কমিয়ে দেয়:
অনেকেই মনে করেন যে ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করলে মায়ের শরীরে বুকের দুধের উৎপাদন কমে যায়। ব্যাপারটা এমন নয়। নিয়মিত ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করলে বুকের দুধের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকে এবং কিছু মা এমনকি বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধিও দেখতে পারেন।
৩) শুধুমাত্র কর্মজীবী মহিলারা ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করেন:
কোন সন্দেহ নেই যে, ব্রেস্ট পাম্প কর্মজীবী মহিলাদের জন্য সত্যিই কার্যকর। তবে, নিয়মিত বাইরে না গেলেও, মহিলারা এই ডিভাইসটি ব্যবহার করতে পারেন।
- যখন শিশুরা তাদের মায়ের স্তন থেকে সরাসরি দুধ পান করতে পারে না,
- যখন মায়ের শরীরে বুকের দুধের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যায়,
- অথবা যে মায়েরা বুকের দুধের পরিমাণ বাড়াতে চান তারাও এই ডিভাইসটি ব্যবহার করতে পারেন।
এইভাবে দুধ সংরক্ষণ করে, বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা সহজেই শিশুকে খাওয়াতে পারেন, এবং সেক্ষেত্রে মহিলারাও কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পান।
৪) সমস্ত ব্রেস্ট পাম্প একই রকম:
না, সমস্ত ব্রেস্ট পাম্প একই রকম হয় না। বাজারে বিভিন্ন ডিজাইনের ব্রেস্ট পাম্প পাওয়া যায় এবং তাদের কার্যকারিতাও মাঝে মাঝে পরিবর্তিত হয়। কিছু ব্রেস্ট পাম্প মাঝে মাঝে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়, আবার কিছু নিয়মিত ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। কিছু ব্রেস্ট পাম্প ম্যানুয়াল, আবার কিছু বৈদ্যুতিক। মায়েরা তাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে ব্রেস্ট পাম্প কিনতে পারেন।