ইনসুলিন নেওয়া যাবে স্প্রে করেই থাকছেনা ইনজেকশনের ভয়
“ডায়াবেটিস হলো এক ধরণের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার রোগ বা বিপাকীয় ব্যাধি। এটি শরীরের সমস্ত অঙ্গের কার্যকারিতা নীরবে ধ্বংস করে দেয়। যখন একজন ব্যক্তি খাবার খান, তখন শরীরের অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো যে খাবার খাওয়া হচ্ছে সেটির অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমানো। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা উৎপাদনের পরেও ইনসুলিন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকে ডায়াবেটিস বলা হয়”।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুখবর। টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ইনসুলিন গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং এই ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়।কিন্তু এখন ইনসুলিন ইনজেকশন দিয়ে শরীরে ব্যথা দেয়ার দিন শেষ হতে চলছে । ২০২৫ সালের জুনের দিকে ভারতের বাজারে ওরাল ইনসুলিন স্প্রে আসছে। মাউথ ফ্রেশনারের মতো মুখে স্প্রে করে ডোজ নেওয়া যায়।
দিনে তিন থেকে চারবার ইনসুলিন ইনজেকশন করা কঠিন। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অনেকেই ইনসুলিন গ্রহণ শুরু করেন এবং এর কারণে মাঝপথে বন্ধ করে দেন। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ইনসুলিন সংরক্ষণের ঝামেলাও কম নয়। ওরাল ইনসুলিনে এই সব থাকবে না। এটি মাউথ ফ্রেশনারের মতো পকেটে বহন করা যেতে পারে। এবং এর কার্যকারিতাও অনেক বেশি।
এই মুহূর্তে অন্তত ১৪টি দেশ ওরাল ইনসুলিন স্প্রে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ এটি ব্যবহার করছে।
২০১৫ সালে, আমেরিকাতাই কানেকটিকাটের ম্যানকাইন্ড কর্পোরেশন কর্তৃক প্রথম ওরাল ইনসুলিন তৈরি করা হয়েছিল। দেশটির “ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন” (এফডিএ) ওষুধটি অনুমোদন করে। এর নাম “আফ্রেজ্জা”। ভারতীয় বাজারে এটি ব্যবহারযোগ্য করার প্রক্রিয়া চলছিল।
বিভিন্ন জায়গায় ওষুধটির পরীক্ষা সফল হওয়ার পর, ভারতের সেন্ট্রাল ড্রাগ রেগুলেটরি এজেন্সি এটি অনুমোদন করে। এরপর, ভারতীয় কোম্পানি সিপলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ম্যানকাইন্ড কর্পোরেশনের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করে।
এর পর, ওষুধ কোম্পানি সিপলা ভারতেও ওরাল ইনসুলিন স্প্রে তৈরির অনুমতি পায়। সিপলার এমডি উমাঙ্গ বোহরা বলেন, “যাদের প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে হয় তাদের জন্য এই ওরাল স্প্রে একটি বড় উপহার হতে চলেছে।” ওরাল ইনসুলিনের দাম বা গ্রহণের ডোজ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেনি।
ওয়াল ইনসুলিন স্প্রে যেভাবে কাজ করবে
ওয়াল ইনসুলিন স্প্রে করার সাথে সাথে এটি লালার সাথে মিশে ফুসফুস এবং শরীরের অন্যান্য অংশে পৌঁছায়। এরপর, এটি রক্তের সাথে মিশে কাজ শুরু করে। এই ওরাল ইনসুলিন ডোজ গ্রহণের ১২ মিনিটের মধ্যেই কাজ শুরু করবে। এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এটি রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে। মাদার কোম্পানি জানিয়েছে যে, টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ওষুধটি খুবই কার্যকর হবে।
ইন্ডিয়া ডায়াবেটিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডাঃ দেবেন প্রহরাজ বলেন, “ওয়াল ইনসুলিন গ্রহণের ১২ মিনিটের মধ্যেই এটি কাজ শুরু করবে। এটি আড়াই থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করবে। এটি টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই কার্যকর হবে।