ইসলাম অবমাননার দায়ী শ্রীলঙ্কায় ‘প্রভাবশালী’ বৌদ্ধ ভিক্ষুর কারাদণ্ড
শ্রীলঙ্কায় ধর্মঃ
শ্রীলঙ্কা আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বৌদ্ধ দেশ, যদিও শ্রীলঙ্কার জনগণ বিভিন্ন ধর্ম পালন করে। শ্রীলঙ্কার ৭০.২% বৌদ্ধ, ১২.৬% হিন্দু, ৯.৭% মুসলিম, ৭.৪% খ্রিস্টান। বৌদ্ধধর্মকে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং শ্রীলঙ্কার সংবিধান বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে যেমন সরকার সারা দেশে বৌদ্ধধর্মকে রক্ষা এবং প্রচার করতে বাধ্য। তবে, সংবিধানে ধর্মের স্বাধীনতা এবং তার সকল নাগরিকের মধ্যে সমতার অধিকারের বিধান রয়েছে।
শ্রীলঙ্কার একটি আদালত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উস্কে দেওয়া এবং ইসলাম অবমাননার অভিযোগে এক কট্টর বৌদ্ধ ভিক্ষুকে নয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে। বৃহস্পতিবার কলম্বোর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই রায় দিয়েছে।
অভিযুক্ত বৌদ্ধ ভিক্ষু, যার নাম গ্যালাগোড্যাটে জ্ঞানেসরা, দেশে বেশ প্রভাবশালী। তিনি ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপক্ষের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শাস্তি খুবই বিরল। তবে, গ্যালাগোড্যাটে জ্ঞানেসরা ধারাবাহিকভাবে ইসলামোফোবিয়া এবং ধর্মীয় অবমাননা করে আসছিলেন।
গ্যালাগোড্যাটে ২০১৬ সালের একটি ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত হন। ২০১৯ সালেও তাকে ভয় দেখানো এবং আদালত অবমাননার অভিযোগে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাওয়ার পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেছে যে, সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে।
গ্যালাগোড্যাটেকে ১,৫০০ শ্রীলঙ্কান রুপি জরিমানাও করা হয়েছে। অনাদায়ে তাকে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
জ্ঞানেসরা সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। আপিলের চূড়ান্ত রায় না আসা পর্যন্ত আদালত তার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী ছিলেন। দ্বীপরাষ্ট্রটির তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ২০২২ সালে গোতাবায়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং বিদেশে পালিয়ে যান।
রাজপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময়, দেশের মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে গত বছর জ্ঞানাসরাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। তবে, চার বছরের কারাদণ্ডের সময় তিনি জামিনে ছিলেন।
২০১৮ সালে, আদালত অবমাননা এবং একজন রাজনৈতিক কার্টুনিস্টের স্ত্রীকে ভয় দেখানোর অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি সেই সাজার মাত্র নয় মাস ভোগ করেছেন। কারণ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মৈত্রীপালা সিরিসেনা তাকে ক্ষমা করেছিলেন।