শীতে ফুসফুস ভালো রাখার চমৎকার উপায়
ফুসফুস (Lungs)
মানবদেহের বুক গহ্বরের ভিতরে হৃৎপিণ্ডের দুপাশে ২টি ফুসফুস থাকে। এগুলি স্পঞ্জের মতো নরম এবং কোমল এবং হালকা লালচে রঙের হয়। ডান ফুসফুস বাম থেকে বড়। একজন সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দুটি ফুসফুসের ওজন একত্রে প্রায় ১.৩ কিলোগ্রাম।
ফুসফুস বুকের গহ্বরের স্তনের হাড়ের উভয় পাশে অবস্থিত এবং পাঁচটি প্রধান বিভাগে (লোব) বিভক্ত। ফুসফুস রক্ত থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারণ এবং অক্সিজেন যোগ করার কাজে ব্যস্ত । এটি করার জন্য হৃদপিন্ড এবং ফুসফুস একসাথে কাজ করে।
ফুসফুসে হাজার হাজার পাতলা টিউব থাকে যা ক্ষুদ্র বায়ুর থলিতে (অ্যালভিওলি) এসে শেষ হয়। এই থলিগুলির প্রতিটি রক্তনালীতে আবৃত থাকে যা শিরা এবং ধমনীগুলির একটি সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকে যা শরীরের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন করে।
শীতের ঠান্ডা আবহাওয়া ফুসফুসের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে যাদের শ্বাসকষ্ট আছে। শীতে অনেকেরই শ্বাসকষ্টের রোগ বেশি হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তারা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাসযন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ফুসফুস। শীতকালে ঠাণ্ডা ও ভাইরাল সংক্রমণে সহজেই ফুসফুসে নিউমোনিয়া হতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই শীতে ফুসফুস রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে হবে। শীতে ফুসফুস সুস্থ রাখার ক’টি চমৎকার উপায় এখানে।
ধূমপান এড়িয়ে চলুন:
ধূমপান ফুসফুসের জন্য খুবই ক্ষতিকর, বিশেষ করে শীতকালে। ধোঁয়া ফুসফুসে প্রবেশ করে এবং শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। তাই ধূমপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে।
নাক দিয়ে শ্বাস নিন:
ফুসফুসে ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ এড়াতে মুখের পরিবর্তে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারেন। নাক দিয়ে শ্বাস নিলে বাতাস গরম হতে বেশি সময় নেয়। ফুসফুস গরম বাতাস গ্রহণ করলে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
ফেস মাস্ক পরুন:
ঠান্ডা আবহাওয়া শ্বাসযন্ত্রকে ব্যাহত করতে পারে। ফুসফুসের সুরক্ষার জন্য, আপনার মুখ একটি স্কার্ফ দিয়ে ঢেকে রাখুন বা মুখোশ পরুন। ফলে ফুসফুসে প্রবেশের আগেই বাতাস গরম হয়ে যাবে। এতে ফুসফুসে ঠান্ডা বাতাসের প্রতিক্রিয়া কমে যাবে।
আপনার জীবনধারা সম্পর্কে সচেতন থাকুন:
গবেষণায় দেখা গেছে যে ঠান্ডা বাতাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। ঠাণ্ডা বাতাস নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস এবং ফ্লুর ঝুঁকি বাড়ায়। শীতকালে আপনার ফুসফুস রক্ষা করার জন্য, আপনার জীবনযাত্রায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত, যেমন শীতের পোশাক পরা, ফেস মাস্ক ব্যবহার করা, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের লক্ষণ রয়েছে এমন লোকদের খুব কাছাকাছি যাওয়া থেকে সতর্ক থাকা।
বাইরে ব্যায়াম করা এড়িয়ে চলুন:
তীব্র শীতে বাইরে ব্যায়াম করা উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। ঠান্ডা বাতাস ফুসফুসকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। ঠান্ডা বাতাস শরীরের তাপমাত্রা কমাতে পারে এবং হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। ঠাণ্ডা আবহাওয়া রক্তচাপ বাড়াতে পারে, যা হৃদপিণ্ড ও রক্তনালীর রোগ হতে পারে। আপনি বাড়িতে ব্যায়াম করার জন্য একটি ট্রেডমিল কিনতে পারেন বা জিমের সদস্যপদ পেতে পারেন।
ফুস্ফুসের ব্যায়াম:
১. সোজা হয়ে বসুন, আপনার হাত দুটি থাইয়ের ওপর রাখুন
২. মুখ খুলে যতটা সম্ভব বাতাস টেনে নিন
৩. ঠোঁট চেপে রাখুন
৪. যতক্ষণ সম্ভব ততক্ষণ শ্বাসটা শরীরের মধ্যে রেখে দিন।
৫. আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়ুন
তবে খুব জোর করে এই ব্যায়াম করবেন না।
বায়ু দূষণ এড়িয়ে চলুন:
শীতকালে বায়ু দূষণের ঝুঁকি উপেক্ষা করা যায় না। একাধিক গবেষণায় বায়ু দূষণ এবং শ্বাসযন্ত্রের উপসর্গ, হৃদরোগ, রক্তনালীর রোগ এবং অকাল মৃত্যুর মধ্যে একটি যোগসূত্র পাওয়া গেছে। বায়ু দূষণ শ্বাসযন্ত্রের রোগকে আরও খারাপ করতে পারে। আপনার ফুসফুসে বায়ু দূষণের প্রভাব এড়াতে আপনি একটি দূষণবিরোধী মাস্ক পরতে পারেন।
কিছু খাবার ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী
ফল ও শাকসবজি খান:
শীতে আপনার ফুসফুসকে সুরক্ষিত রাখতে পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্য আপনার ফুসফুসের জন্য সেরা। ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যে তাজা ফল, সবজি, গোটা শস্য, বাদাম, বীজ, মটরশুটি, জলপাই তেল এবং মাছের প্রাধান্য রয়েছে। এই ডায়েটে পরিমিত পরিমাণে মুরগি, ডিম, পনির এবং দই অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং মাঝে মাঝে লাল মাংস এবং মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান:
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোটিন আপনার ফুসফুসের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি। প্রোটিন পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে যা গভীর শ্বাসের সময় আমাদের ফুসফুসকে প্রসারিত করে। পর্যাপ্ত প্রোটিন খাওয়া আপনাকে সহজে গভীরভাবে শ্বাস নিতে সাহায্য করবে। প্রোটিনের দুটি বড় উৎস হল শিম এবং বাদাম।
লবণ কম খান:
শীতকালে আপনার খাদ্যতালিকায় লবণ কমানোর গুরুত্ব অন্যান্য ঋতুর তুলনায় বেশি। চিকিত্সকদের মতে, অতিরিক্ত লবণ খেলে ফুলে যায় এবং তরল ধারণ করে, যার ফলে ফুসফুস আরও বেশি কাজ করে এবং দুর্বল হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন একজনের প্রতিদিন ২.৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
শীতকালে, বায়ু দূষণ, ধূমপান এবং অন্যান্য কারণগুলির কারণে ফুসফুসে সংক্রমণ হতে পারে, যা শুধুমাত্র ধূমপায়ীদের জন্য নয়, অন্যদের জন্যও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ঠান্ডায় শরীরের তাপমাত্রা যেমন কমে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি।
কিছু পানীয় ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী:
হলুদ-আদা চা:
কাশি বা সর্দিতে আদা উপকারী। হলুদ এবং আদা চা পান করলে ফুসফুসে জমে থাকা টক্সিন দূর হয় এবং শ্বাসযন্ত্রেও স্বস্তি আসে।
গ্রিন টি:
গ্রিন টি-তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরকে দূষণকারী উপাদান থেকে পরিষ্কার করতে এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
লেবু-মধু পানি:
এই পানীয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ফুসফুসকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
এর বাইরেও
- ধূমপান ও তামাক এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ধ্যান করুন।
- মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
- একটি এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন।
- হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- প্রয়োজনে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিন এবং আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিন।
1 Comment