November 13, 2024
ছেলে-মেয়েরা কলম ধরা ভুলে যাচ্ছে

ছেলে-মেয়েরা কলম ধরা ভুলে যাচ্ছে

ছেলে-মেয়েরা কলম ধরা ভুলে যাচ্ছে

ছেলে-মেয়েরা কলম ধরা ভুলে যাচ্ছে

ডিজিটাল যুগে শিশুদের প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। যে বয়সের বাচ্চারা একসময় লেগো সেটসহ বিভিন্ন ধরনের  খেলনা দিয়ে খেলত এখন তারাই আইপ্যাডে খেলছে। আইপ্যাডের মতো ডিজিটাল ডিভাইসে শিশুদের আসক্তি ব্যস্ত অভিভাবকদের জন্য অনেক সুবিধাও  রয়েছে। শিশুরা হয়ত ডিজিটাল ডিভাইসগুলি সরানোর মাধ্যমে তাদের প্ৰতিক্রিয়াশীলতার অনুভূতি হারিয়ে ফেলছে, কিন্তু তারা কি লেখার জন্য আঙুলের পেশী নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় সূক্ষ্ম দক্ষতা হারাচ্ছে?

ইংল্যান্ডের শিশু থেরাপির একজন নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ স্যালি পেইন দেখেছেন যে ডিজিটাল যুগে শিশুরা সেই দক্ষতা হারাচ্ছে।তিনি ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে বলেন, স্কুলে প্রবেশের পর শিশুদের যখন একটি পেন্সিল দেওয়া হয়, তখন তারা তা সঠিকভাবে ধরে রাখতে পারে না কারণ এটি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক দক্ষতা তাদের নেই। “একটি পেন্সিল ধরে এটিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য হাতের সূক্ষ্ম পেশীগুলির কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন, সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর অনুশীলন এবং সুযোগ লাগে”।

মিস পেইন বলেন যে, ডিজিটাল ট্যাব এবং স্মার্ট ফোনে বিনামূল্যে অ্যাক্সেসের সাথে, শিশুদের কলম বা পেন্সিল তোলা এবং ব্যবহার করার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, ব্লক দিয়ে বিল্ডিং বানানোর মত খেলা, , দড়ি বা ইলাস্টিক টানতে হয় এমন খেলনা ব্যবহার করার মতো গেম খেলে শিশুরা সেসব পেশি ব্যবহারের ক্ষমতা তৈরি করে। “আইপ্যাড ব্যবহার করলে তা হয় না”।

ব্রিটেনের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক অফকমের মতে, দেশের অর্ধেকেরও বেশি পরিবারের একটি ডিজিটাল ট্যাবলেট এবং কমপক্ষে ৭৬ শতাংশের কাছে একটি স্মার্ট ফোন রয়েছে। ডক্টর জেন মেডেওয়েল একটি সংস্থার সাথে কাজ করেন যা হাতের লেখার জন্য প্রচারণা চালায়। তিনি বলেন, ঘরে ডিজিটাল ডিভাইসের উপস্থিতি যেমন বাড়ছে, তেমনি শিশুদের মধ্যে পেন্সিলের ব্যবহারও কমছে। “একসময় শিশুরা তাদের পিতামাতাকে কলম দিয়ে বাজারের ফর্দ লিখতে দেখত, এখন তারা তাদের পিতামাতাকে মোবাইল ফোনে টেক্সট করতে দেখে। ফলে শিশুদের প্রথম শিক্ষারও পরিবর্তন হয়েছে”।

তবে তিনি বলেন, ট্যাব ব্যবহারে আঙুলের পেশি ঘোরানোর ক্ষমতা একবারে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সময় হয়তো আসেনি। “এমন কোনো গবেষণা হয়নি যা বলে যে ট্যাব ব্যবহার করলে শুধুমাত্র একটি শিশুর আঙুল ঘষার দক্ষতার বিকাশ ঘটে এবং পেন্সিল ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়।” তবে তিনি বলেন, হাতের লেখার গুরুত্ব অপরিসীম।

২০১৬ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ছাত্ররা যারা বক্তৃতা নোটগুলি হাতে লিখেছিল তারা তাদের আরও ভাল মনে রাখে এবং তাদের ধারণাগুলি আরও পরিষ্কার ছিল। যারা কম্পিউটার বা ট্যাবলেটে নোট নেয়, তারা অনেক কিছু লিখতে পারে কিন্তু পরে মনে রাখতে পারে না।

বিশেষ করে শিশুদের জন্য হাতের লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। “হাতে একটি চিঠি লেখা, আঙ্গুলের জটিল ব্যবহার, শিশুদের মধ্যে অনেক অনুশীলনের প্রয়োজন, এবং এর মাধ্যমেই শিশুরা জ্ঞান অর্জন করে”। হাতের লেখার গুরুত্ব নিয়ে গবেষকরা দ্বিধাহীন, কিন্তু বাস্তবতা হল হাতের লেখা কমে যাচ্ছে।

২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, তিনজনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছয় মাস ধরে হাতে কিছু লেখেননি। তবে, শিক্ষার জগতে এখনও হাতের লেখা অপরিহার্য। ব্রিটেনে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এখনও হাতে লিখতে হয়। কিন্তু আগের দিনের মতো সুন্দর করে পেঁচিয়ে অক্ষরের সাথে অক্ষর যুক্ত করে শব্দ লেখার সেই চল বলতে গেলে উঠেই যাচ্ছে। ড. ম্যাডওয়েল বলেছেন- সুন্দর হাতের লেখা তেমন একটা বিষয় নয়, আসল কথা- হাতের লেখার দক্ষতা ধরে রাখা, তা নষ্ট হয়ে গেলে শিশুদের লেখাপড়াও বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

আরো জানুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X