সাহিত্যে নোবেল পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার মহিলা সাহিত্যিক “হান কাং”
হান কাং
হান কাং; জন্ম ২৭ নভেম্বর, ১৯৭০, একজন দক্ষিণ কোরিয়ার লেখিকা। তিনি তার দ্য ভেজিটেরিয়ান উপন্যাসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন, যেটি তার পরিবারের কাছ থেকে মানসিক অসুস্থতা এবং অবহেলায় ভোগা একজন মহিলাকে নিয়ে লেখা । তিনি ২০১৬ সালে বুকার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর ফিকশন জিতে প্রথম কোরিয়ান ভাষার সেরা উপন্যাসিক হয়ে ওঠেন।
তিনি সাহিত্যে ২০২৪ সালের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন “তার মর্মস্পর্শী কাব্যিক গদ্যের জন্য। সাহিত্যে প্রথম এশীয় মহিলা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং দ্বিতীয় কোরিয়ান নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন।
হান কাং এর গদ্য তীক্ষ্ণ এবং কাব্যিক। এটি ইতিহাসের বেদনাদায়ক বিষয়ের সাথে বোঝাপড়া করার প্রয়াস। তাঁর গদ্যও মানুষের জীবনের ভঙ্গুরতার কথা বলে।
৫৩ বছর বয়সী হান কাং দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ম্যাগাজিনে কবিতার সংকলন প্রকাশ করে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৯৫ সালে তাঁর ছোটগল্পের সংকলন বের হয়। আর এর মধ্য দিয়ে তাঁর গদ্য পাঠকের সামনে আসে।
পরে হান কাং দীর্ঘ গদ্য লিখতে শুরু করেন। ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ তার উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে একটি। ২০০৭ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসের জন্য তিনি ২০১৬ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার জিতেছিলেন। এই উপন্যাসে হান কাং একজন যুবতীর সংগ্রামকে চিত্রিত করেছেন।
নোবেল পুরস্কার কমিটি ১৯০১ সাল থেকে সাহিত্যে পুরষ্কার প্রদান করে আসছে। হ্যান কাং ১৮ তম বারের মতো একজন মহিলা পুরস্কার পেয়েছেন।
হান কাংও প্রথম দক্ষিণ কোরিয়ার যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার পরিচয় দিয়ে নোবেল প্রাইজ বোর্ড বলেছে, “তিনি এমন একজন যিনি সঙ্গীত ও শিল্পকলায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।”
নোবেল কমিটি আরও বলেছে, হান কং-এর অনুসন্ধিৎসু মন মানুষের জীবনের অনেক দিককে এগিয়ে নিয়েছে। তাই তার কাজকে কোনো গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ করা যাবে না। সহিংসতা, ভোগান্তি, পিতৃতন্ত্রের মতো অনেক বিষয় উঠে এসেছে তাঁর লেখায়।
প্রায় এক দশক আগে প্রকাশিত হলেও, হ্যান কাং এর উপন্যাস ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’ লেখক হিসাবে হ্যান ক্যাং-এর জীবন বদলে যায়। তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য হোয়াইট বুক’, ‘হিউম্যান অ্যাক্টস’ এবং ‘গ্রিক লেসনস’।
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার অনুষ্ঠানে সুইডিশ একাডেমির স্থায়ী সচিব ম্যাটস মুম বলেন, শরীর ও আত্মা, জীবিত ও মৃতের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে হ্যান কাং-এর সচেতনতা অসাধারণ। তাঁর গদ্য কাব্যিক এবং অন্তর্মুখী। তিনি সমসাময়িক গদ্যে একজন উদ্ভাবক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
হান কাং, তার অনন্য রচনাশৈলীর জন্য এই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, “গভীর কাব্যিক গদ্য যা ঐতিহাসিক আঘাতকে উন্মোচন করে এবং মানব জীবনের ভঙ্গুরতাকে সামনে নিয়ে আসে।”
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের পুরুষ আধিপত্যের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে সহ মাত্র ১৮ জন নারী এই পুরস্কার পেয়েছেন। হ্যান কাংয়ের আগে শেষ নারী বিজয়ী ছিলেন ফ্রান্সের অ্যানি এরনো। যিনি 2022 সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় সুইডেনের স্টকহোম থেকে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এ বছরের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে।
নোবেল পুরস্কারের জন্য, লেখক একটি নোবেল পদক, একটি শংসাপত্র এবং ১.১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা পাবেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর আর্থিক মূল্য প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
1 Comment