ফ্যাটি লিভার: এক বেখেয়ালি মারাত্মক ব্যাধির নাম
ফ্যাটি লিভার:
ফ্যাটি লিভার, মেদযুক্ত যকৃত বা চর্বিযুক্ত কলিজা যাই বলি না কেন, লিভারে, যকৃতে বা কলিজায় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া শুরু করলে সাধারণত যে রোগ হয় তাকেই ফ্যাটি লিভার বলা হয়।
লিভারে স্টেটোসিসের সাথে যুক্ত বেশ কিছু রোগকে সম্মিলিতভাবে স্টেটোটিক লিভার ডিজিজ (SLD) বলা হয়, যা সাধারণত FLD বা ফ্যাটি লিভার ডিজিজ নামে পরিচিত। অ্যালকোহল বা অন্যান্য কারণে যখন একজন ব্যক্তির লিভারে চর্বি জমে, তখন লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তখন অবিলম্বে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। যখন চর্বি জমে লিভারের ওজনের ৫% ছাড়িয়ে যায়, তখন এটি একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
ফ্যাটি লিভার, যা হেপাটিক স্টেটোসিস নামেও পরিচিত, লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে যা হয়। লিভার শরীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ। এটি রক্ত থেকে বিপজ্জনক টক্সিন ফিল্টার করার জন্য সৃষ্টির অনন্যা এক অঙ্গ।
অত্যধিক ফ্যাটি লিভার, চর্বি লিভারের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা লিভারের ক্ষতি করতে পারে এবং দাগ সৃষ্টি করতে পারে। গুরুতর লিভারের প্রদাহ বিভিন্ন লিভারের অবস্থার কারণ হতে পারে, যেমন ক্যান্সার এবং লিভার সিরোসিস।
ফ্যাটি লিভার একটি মারাত্মক ব্যাধি। এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে লিভারের সিরোসিস হতে পারে।
ফ্যাটি লিভার দুই ধরনের হয়-
১. অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং
২.নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।
অ্যালকোহল পান করার ফলে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হয়। অন্যদিকে, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের পেছনে রয়েছে লাইফস্টাইল এবং ডায়েট অভ্যাস ।
এই রোগের লক্ষণগুলো প্রথমে শনাক্ত হলে চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। তাই এই কয়েকটি লক্ষণ দেখলে সাবধান হন-
ফ্যাটি লিভারে মুখের মধ্যে দেখা দিতে পারে এমন কিছু লক্ষণ হল-
- মুখ ফুলে যাওয়া
- ঘাড়ের নিচের অংশ কালো হয়ে যাওয়া
- মুখের ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে
- মুখে ফুসকুড়ি
- মুখের ত্বকে চুলকানি
- মুখের ত্বক হলুদ হওয়া ইত্যাদি।
ফ্যাটি লিভারের অন্যান্য লক্ষণগুলি কী কী?
- পেটে ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- বমি করা
- ক্ষুধার্ত অনুভব না করা
- দ্রুত ওজন হারানো
- পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশে পানি জমে থাকা
- বেশির ভাগ সময় দুর্বলতা
- ঘন ঘন বিভ্রান্তি ইত্যাদি
- ৯. জন্ডিস, চুলকানি
রোগের চিকিৎসা কি?
এই রোগের চিকিৎসায় বেশ কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এই ওষুধগুলি দুর্দান্ত কাজ করে। তবে এর পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
তাই ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি-
- ওজন কমানো
- ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- বেশি করে শাকসবজি খাওয়া।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। (সপ্তাহের বেশিরভাগ দিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।)
এগুলি ছাড়াও, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা কিছু ফ্যাটি লিভার রোগের ওষুধ লিখে দিতে পারেন যা লিভারের ক্ষতির বিপরীতে সাহায্য করতে পারে, এটিকে স্বাস্থ্যকর এবং ভাল করতে সাহায্য করবে।
যদিও ফ্যাটি লিভার রোগ সহজে চিকিত্সা করা যায় না, তবে এটি সুষম খাদ্য খাওয়া, সঠিক ওজন বজায় রাখা, ঘন ঘন ব্যায়াম এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এছাড়াও, লিভার সুস্থ আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত লিভার চেকআপ করা গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বেশি দেখা যায়। এর প্রধান কারণ স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব। একটি নিয়ন্ত্রিত জীবনধারা ছাড়া এই ফ্যাটি লিভারের সত্যিই কোন চিকিৎসা নেই। ওজন কমানো, খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম একাই এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তাহলে জেনে নিন ফ্যাটি লিভার হলে কী কী খাবেন আর কী কী খাবেন না।
ফ্যাটি লিভারে খাদ্যাভ্যাস
কী খাবেন
- সামুদ্রিক মাছ
- ওটস ও জটিল শর্করা:
- বাদাম
- সবুজ শাকসবজি
- ডাল ও বীজজাতীয় খাবার
যে খাবার খাবেন না
- অ্যালকোহল (যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা হারাম )
- চিনি
- ভাজাপোড়া খাবার
- লবণ (কাঁচা লবণ)
- সহজ শর্করা (সাদা ভাত, ময়দার তৈরি পাউরুটি ও পরোটা, নান, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি যকৃতে চর্বি বাড়াবে। এর পরিবর্তে বেছে নিন লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড বা লাল চাল, তা-ও পরিমিত পরিমাণে)
- রেড মিট
অন্ত কথন
আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত লেখা সমূহ চিকিৎসার সম্পূরক নয়। তবে সতর্কতা এবং সাবধানতার কাছাকাছি। তাই স্বাভাবিকভাবেই নিয়ম গুলো মেনে চললে সৃষ্টিকর্তার রহমতে এবং প্রকৃতির উদারতায় অবশ্যই ভালো থাকা যায়। এরপরও অবশ্যই অতি জটিলতায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী।