সংসার ভাঙ্গার মূল কারণ গুলো কী কী?
মূলত, একটি পরিবার ভেঙে যাওয়ার পিছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কখনো স্বামীর কারণে, কখনো স্ত্রীর কারণে আবার কখনো উভয়ের কারণে দাম্পত্য জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে। বিবাহবিচ্ছেদ আজকাল খুব সাধারণ। অস্বাস্থ্যকর সম্পর্কের কারণে এমনটা হয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নারী-পুরুষ উভয়েই মানসিক শান্তির জন্য বিচ্ছেদের পথে হাঁটে। চলুন জেনে নিই ডিভোর্স বা সংসার ভাঙ্গার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
স্বামীর পক্ষ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে এমন সমস্ত কারণ:
- অনেক সময় স্বামী, তার স্ত্রী বা স্ত্রীর পরিবারের সাথে দুর্ব্যবহার করে
- স্ত্রীকে অবহেলা ও অবজ্ঞা করে
- তাকে শারীরিক বা মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে
- তার প্রাপ্য অধিকার না দিয়ে
- প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করে
- ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে
- শারীরিক নির্যাতন করে
- অন্তরঙ্গতায় অক্ষমতা
- মাদকাসক্তি ও অন্য কোনো বদ আসক্তি
- কোনো বদ অভ্যাস বা শারীরিক সমস্যা যা স্ত্রী কোনোভাবেই সহ্য করতে পারে না
- কৃপণতা
স্বামীর পক্ষ থেকে ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে একটি পরিবার ভেঙ্গে যেতে পারে।
স্ত্রীর পক্ষ থেকে পরিবার ভেঙ্গে যেতে পারে এমন সমস্ত কারণ:
- স্বামী বা তার পরিবারের প্রতি স্ত্রীর দুর্ব্যবহার
- স্বামীর অবাধ্যতা, ভোগ-বিলাস ও ব্যয় বহুল অপচয়ী অভ্যাস
- অসহিষ্ণু আচরণ
- ঝগড়া
- বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক
স্ত্রীর পক্ষ থেকে ইত্যাদি কারণে অনেক সময় বিয়ে ভেঙে যায়।
তবে আবার অনেক মেয়েই বিয়ের আগে স্বামীকে নিয়ে মনে মনে আকাশ-কুসুম কল্পনা করলেও বাস্তবে তা না পেলে স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়। এতে কখনো কখনো সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে। তাদের মধ্যে যেকোনো গুরুতর অসুস্থতাও পরিবার ভাঙার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও, একান্ত বিশেষ প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও স্বামীকে পুনরায় বিয়ে করতে বাধা দেওয়াও পরিবার ভাঙার অন্যতম কারণ হতে পারে।
স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই কিছু কারণে সংসার ভেঙ্গে যেতে পারে:
- বিয়ের পর সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা কমে যাওয়া
- একে অপরের প্রতি আকর্ষণের অভাব,
- (তাদের মধ্যে কোনোভাবেই মানসিক সামঞ্জস্যের অভাব,
- অধৈর্যতা,
- অতিরিক্ত রাগ,
- তৃতীয় পক্ষ দ্বারা বিবাহিত জীবনের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুমতি দেওয়া,
- সৌন্দর্য, স্মার্টনেস, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি নিয়ে গর্ব করা।
তবে যে ৬ টি কারণকে বিবাহ বা সংসার ভাঙ্গার অন্যতম কারণ বলা হয় সেগুলো হলো:
১. ভালবাসার অভাব
বেশির ভাগ ডিভোর্স হয় ভালবাসা আর প্রেমের অভাবে। এটি ৪৭ শতাংশ বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ। বেশিরভাগ সময়ই এই উত্তেজনা থাকে না দম্পতির মধ্যে। আদালতে গিয়ে তারা বলেন, স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি কারো কোনো অনুভূতি নেই। ফলে বছরের পর বছর এক ছাদের নিচে থাকা সম্ভব নয়।
২. মনের অমিল
দুটি মানুষ কখনোই এক হয় না। কেউ পোলাও পছন্দ করে আবার কেউ বিরিয়ানি পছন্দ করে। কিন্তু নিজের মধ্যে কিছু ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। অনেক দিন ধরে মানগুলো একই থাকা , হঠাৎ করেই আজ ভিন্ন হয়ে গেলে এটা খুবই কঠিন। এতে বিয়ে ভেঙে যেতে পারে।
৩. নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি
৪৪ শতাংশ বিবাহবিচ্ছেদ হয় নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে। যখন কেউ একে অপরের সাথে মুখোমুখি কথা বলতে চায় না বা নিজের জেদ ধরে বসে থাকে, তখন সমস্যার সমাধান হয় না। দুজনেই একে অপরের ভুল ধরতে ব্যস্ত। ঠিক করার জন্য নয়। তাই দিন শেষে বিয়ে ভাঙার পথে হাঁটলেন তিনি।
৪. সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব
আজকাল কোনো সম্পর্কের প্রতি মানুষের কোনো শ্রদ্ধা নেই। মাকে রাস্তায় ফেলে ছেলেরা পালিয়ে যাচ্ছে। আর যদি স্ত্রী হয় তাহলে তো প্রশ্নই আসে না। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকলে, সহানুভূতি না থাকলে সম্পর্কের শক্তি থাকে না। এমনকি সমবেদনা প্রয়োজন। আর সম্পর্কের প্রতি সম্মান না থাকলে তালাক খুব দ্রুত দরজায় চলে যায়।
৫. সঙ্গীকে ঘৃণা বা অবজ্ঞা করা
কোন মানুষই সম্পুর্ণ নিখুঁত নয়। সবারই কিছু না কিছু দোষ থাকে। আমাদের এই বিষয়গুলো মেনে নিতে হবে এবং তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। সমস্যা দেখা দেয় যখন আমরা আমাদের সঙ্গীকে ছোট করে দেখতে শুরু করি। অবজ্ঞা, উপহাস এবং অসম্মান সম্পর্কের জন্য খারাপ এবং বিবাহবিচ্ছেদের দিকে পরিচালিত করে।
৬. মানসিক নির্যাতন
শারীরিক নির্যাতনের মতো মানসিক নির্যাতনও অসহনীয়। অপ্রয়োজনীয় রাগ, গালিগালাজ এবং দোষারোপ মানসিক নির্যাতনের মধ্যে পড়ে। এই নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে অনেকেই বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন।
উপরন্তু, স্বামী বা স্ত্রী যদি এমন পাপ করে যে তাদের থেকে আল্লাহর রহমত ও বরকত দূর হয়ে যায়, তখন তাদের মধ্যে শয়তান প্রবেশ করে এবং আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি। যা শেষ পর্যন্ত সংসার ভাঙার দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ মাফ আমাদের করুন আমিন।
আরো পড়তে