November 23, 2024
বৃষ্টিতে ভেজার উপকারিতা

বৃষ্টিতে ভেজার উপকারিতা

বৃষ্টিতে ভেজার উপকারিতা

বৃষ্টিতে ভেজার উপকারিতা

বৃষ্টি

বৃষ্টি হল বর্নহীন এমন একটি  তরল পদার্থ  যা আকাশ থেকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে মহাকর্ষের টানে পড়ে। জলীয় বাষ্প পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে। যখন এই ফোঁটাগুলি যথেষ্ট ভারী হয়, তখন তারা পৃথিবীর পৃষ্ঠে পড়ে – একে বৃষ্টি বলা হয়। বৃষ্টিপাত পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে মিঠা পানির প্রধান উৎস। বৈচিত্র্যময় বাস্তুতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু রাখতে এবং কৃষি সেচ ব্যবস্থা চালু রাখতে বৃষ্টি প্রয়োজন। যাইহোক, সমস্ত বৃষ্টি পৃষ্ঠে পৌঁছায় না। কিছু বৃষ্টির ফোঁটা শুষ্ক বাতাসের মধ্য দিয়ে পড়লে শুকিয়ে যায়। যেগুলো শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে পাওয়া যায়। বৃষ্টির METARR (Meteorological Terminal Air Report) কোড হল RA.

বৃষ্টিপাতের মাত্রা:

বৃষ্টিপাত মিলিলিটারে পরিমাপ করা হয়। তারপর স্কেল অনুযায়ী হালকা, ভারী, অতি ভারী এবং চরম বৃষ্টিপাত গণনা করা হয়। এক্ষেত্রে ঘণ্টায় ০.২৫ মিমি থেকে ১মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে হালকা, ৪ মিমি থেকে ১৬ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে ভারী, ১৬ মিমি থেকে ৫০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাতকে খুব ভারী এবং ৫০ মিমি অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতকে চরম বৃষ্টিপাত বলে।

অনেকেই শখের বশে বৃষ্টিতে ভিজেন। কাজে যাওয়ার সময় অনেকেই ভিজে যায়। শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসেন। কিন্তু অনেকে মনে করেন, বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি-জ্বর হতে পারে। জানলে অবাক হবেন যে বৃষ্টিতে ভিজলে  ক্ষতির চেয়ে অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে এটি 10-15 মিনিটের বেশি ভিজা উচিত নয়। ভিজে যাওয়ার পর হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করে নেয়া ভালো ।

চলুন জেনে নিই বৃষ্টিতে ভিজার উপকারিতা-
ত্বকের সৌন্দর্য

ভারী বৃষ্টির সময় যে জলীয় বাষ্প তৈরি হয় তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ এটি পরিবেশে ক্ষতিকর জীবাণুর কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এটি ত্বককে আরও উজ্জ্বল এবং আকর্ষণীয় করে তোলে।

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

বৃষ্টির পানিতে প্রাকৃতিক অ্যালকাইন থাকে, যা মাথার ত্বক থেকে ব্যাকটেরিয়া এবং ময়লা দূর করে। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে। তাই বৃষ্টির পানির ব্যবহার চুলের রুক্ষতা কমিয়ে আরও ঝলমলে দেখায়। এছাড়া এই পানি খুশকি দূর করে। তবে বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

বিষণ্নতা উপশম

বৃষ্টিতে ভিজলে শরীরে এন্ডোরফিন এবং সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি মানসিক অবসাদ দূর করে। এছাড়া বৃষ্টির সময় পরিবেশে যে ঘ্রাণ ছড়ায় তাকে পেট্রিকোর বলে। এটি মানুষকে আরও শান্ত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত বৃষ্টিতে ভিজে যান। খুব তাড়াতাড়ি হরমোনের ভারসাম্য ঠিক হয়ে যাবে।

প্রাকৃতিক ভিটামিন বি

বৃষ্টির পানিতে হালকা অ্যালকেন এবং বেশ কিছু অণুজীব থাকে। যা বিপাকের মাধ্যমে ভিটামিন B-12 তৈরি করে। ফলে বৃষ্টিতে ভিজলে ভিটামিন বি-এর অভাব দূর হয়। যদি আপনার ভিটামিনের অভাব থাকে; তারপরে আপনি নিয়মিত 10-15 মিনিটের জন্য বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন। তবে বৃষ্টিতে ভিজার পর অবশ্যই ভালো করে সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে।

কানের সমস্যা দূর হয়

বৃষ্টির পানির আরেকটি কাজ হলো কানের সমস্যা দূর করা। কানের ব্যথা ও ইনফেকশন দূর করতে এই পানি উপকারী। তবে অতিরিক্ত ভেজা বা ঝোড়ো হাওয়া থাকলে তা ঠান্ডা হতে পারে। ভিজে যাওয়ার পর পারলে  হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।

চর্মরোগের সমাধান

বৃষ্টিতে ভিজে বিভিন্ন চর্মরোগ নিরাময় করে। চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং স্ক্র্যাচ দূর করতে বৃষ্টির জল বিশেষভাবে কার্যকর। এছাড়া এই পানি শরীরের রুক্ষতা দূর করতেও ভূমিকা রাখে।

শরীরের টক্সিন বের করে দেয়

বৃষ্টির পানি পান করলে শরীর থেকে টক্সিন বের হয়ে যায়। হজমশক্তির উন্নতি ঘটায়। এই পানি রক্তের পিএইচ লেভেলকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসে। তাই অ্যাসিডিটির মাত্রাও কমে যায়।

মনটা ভালো হয়

বৃষ্টিতে ভিজলে শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। যা আমাদের আনন্দের অনুভূতি দেয়। এই কারণে, বৃষ্টিতে ভিজলে সমস্ত দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ দূর হয়। তাই সুযোগ পেলেই বৃষ্টিতে নেমে ভিজে যান

বৃষ্টিত ভেজায়  সতর্কতা:

বৃষ্টিতে ভিজে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। একটু অসাবধানতা উপকারের পরিবর্তে শরীর ও ত্বকের ক্ষতি করে।

আগাম বৃষ্টি এড়িয়ে চলুন

বর্ষার প্রথম দিকের বৃষ্টিতে না ভিজাই নিরাপদ। এই পানি সাধারণত দূষিত,এই পানির সাথে  অনেক দিনের জমা বাহিরের দূষিত পদার্থ যোগ হয়ে থাকে  যা চুল, ত্বক এবং শরীরের ক্ষতি করতে পারে।

সময়ের প্রতি মনোযোগ দিন

বৃষ্টির ক্ষতিকর দিক এড়াতে এবং উপকারী দিকগুলো নিতে হলে সময়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজতে পারি না। বৃষ্টিতে ভিজার আদর্শ সময় ১০ থেকে ১৫মিনিট। এর বেশি জ্বর-সর্দি-কাশি হতে পারে।

গর্ভবতী মা ও শিশুদের  আরও সতর্ক থাকতে হবে

গর্ভবতী মা ও শিশুদের ক্ষেত্রে বৃষ্টিতে না ভিজাই ভালো। পিছলে ও পড়ে বিপদ বাড়তে পারে। আবার জ্বর-ঠাণ্ডা হলে তা গর্ভবতী শিশুর ক্ষতি করতে পারে।

সর্বোপরি সতর্কতা গুলোর দিক খেয়াল রেখে বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে সেই বৃষ্টির পানি অবশ্যই শরীর এবং মনের ভালো উপকার করবেই।

আরো পড়ুন

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X